২০ মার্চ ২০২৩, সোমবার,
1
2
3
4
5
6
7
8
9
10
11
12
K T V Clock
গৃহস্বামী নিজেই চোরকে চুরি করতে সাহায্য করছেন, চৌকিদার চোর হ্যায়
Fourth Pillar: আদানির মালিক কে, সেই মালিকের মাথায় কে?  
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  কৃশানু ঘোষ
  • আপডেট সময় : ১৬-০৩-২০২৩, ১০:৩০ অপরাহ্ন

ক’দিন আগেই চৌর্যবৃত্তির কথা বলেছিলাম, আজ চোরেদের কথা বলব। না, এরকম চুরি স্বাধীনতার পরে আমরা দেখিনি। চুরি হয়েছে, রাজকোষ লুঠ হয়েছে, মন্ত্রী সান্ত্রী আমলারা চুরি করেছে, ঘুষ নিয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য কমিশন, কিকব্যাক, হ্যান্ডলিং মানি ইত্যাদির নামে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের দেখরেখ-এ, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পরিকল্পনায় লুঠ এদেশে এতদিন দেখা যায়নি, এখন তাও পরিষ্কার। বেশ কিছুদিন ধরে আমরা বলছিলাম, কিছু স্বাধীন মানুষজন, ডিজিটাল মিডিয়া এই লুঠের কথা বলে আসছিল, বিরোধী দলের কেউ কেউ এই চুরির কথা বলছিল বটে কিন্তু এতদিনে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, গৃহস্বামী নিজেই চোরকে চুরি করতে সাহায্য করছেন, চৌকিদার চোর হ্যায়। দুটো রিপোর্ট বেরিয়ে গেছে, আরও কত আসবে জানা নেই। প্রথমটা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে, দ্বিতীয়টা দ্য মর্নিং কনটেক্সট ডিজিটাল নিউজ পেপারে। 

প্রথমে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে আসি, এটা লিখেছেন সন্দীপ সিং, ঋতু সারিন আর অমৃতা নায়েক দত্ত। তিনজনের এই রিপোর্টে খুব পরিষ্কার যে আদানি গ্রুপ, আদানি ডিফেন্স এক বিরাট কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে। কিন্তু তার চেয়েও জরুরি ব্যাপার হল এই কেলেঙ্কারি আমাদের প্রতিরক্ষা দফতরের সঙ্গে জড়িত। যে মোদি–শাহ কোম্পানি কথায় কথায় সিয়াচেন মে জওয়ান খড়ে হ্যায়ঁ বলে জঙ্গি হুঙ্কার দেন, যে মোদিজি কথায় কথায় এর আগের প্রত্যেক সরকারকে দেশের সুরক্ষার ব্যাপারে কমজোর বলেছেন, নানান কেলেঙ্কারিতে জড়িত বলেছেন, কথায় কথায় ভারত মা কি জয় বলে চিৎকার করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে তাঁরাই হলেন আদত দেশপ্রেমিক, আর বাকি সবাই দেশদ্রোহী। দেশপ্রেমের গ্লোবাল টেন্ডার নিয়ে বসে আছেন, সেই তাঁরাই দেশের প্রতিরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ছেলেখেলা করছেন। বিষয়টা একটু খুলে বলি। আলফা ডিজাইন টেক লিমিটেড নামে এক কোম্পানি আছে তারা দেশের দুই প্রতিরক্ষা সংস্থা ইসরো আর ডিআরডিও-র সঙ্গে কাজ করে, তারা আপাতত পেছোরা মিসাইল আর রাডার সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে। কবে থেকে তারা কাজ করছে? ২০০৩ থেকে। এদিকে আদানি ডিফেন্স আদানির কোম্পানি নিয়ে আসরে নামল। সেই কোম্পানি কবে তৈরি হল? ২০১৫তে, মানে মোদিজি ক্ষমতায় আসার ঠিক পরে। এবার এই আদানি ডিফেন্স ওই আলফা ডিজাইন টেক এর ২৬ শতাংশ শেয়ার কিনল। কিনতেই পারে, কিন্তু কবে কিনল? ২০১৮ র ডিসেম্বরে। বছর না পোহাতেই সেই কোম্পানি ৫৯০ কোটি টাকার বরাত পেল প্রতিরক্ষা দফতর থেকে। 

আরও পড়ুন:Fourth Pillar | টালিগঞ্জ, সিনেমা এবং অবক্ষয় আর দুর্নীতি   

কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়, ওই আলফা ডিজাইন টেক-এর ৫৬.৭ শতাংশ শেয়ার ৩১ মার্চ ২০২২-এ কিনেছে ভাসাখা প্রোমোটারস অ্যান্ড ডেভেলপার। কিন্তু এই ভাসাখাতে টাকা ঢেলেছে কে? জানা গেল ভাসাখার ৪৪.৩ শতাংশ শেয়ার কিনেছে এলারা আইওএফ নামে এক মরিসাসের কোম্পানি। ভাবছেন এখানেই শেষ? পিকচার আভি বাকি হ্যায়। এই এলারা আইওএফ ২০২২-এর ৩১ ডিসেম্বর আপনারা যখন হ্যাপি নিউ ইয়ারের মোচ্ছবে ব্যস্ত ছিলেন, সেইদিনে দফতর খোলা রেখে ৯০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে আদানি গ্রুপে, আদানি গ্রুপ আদানি ডিফেন্সে, আদানি ডিফেন্স আলফা ডিজাইন টেক-এ। মানে যে-ই ভাসাখা সে-ই আদানি ডিফেন্স এবং এদের মাথার ওপর বসে আছে মরিসাসের এক ভেঞ্চার কোম্পানি, এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আর রহস্যজনক ব্যাপার হল সেই এলারা আইওএফএ-তে কে টাকা ঢেলেছে তা কিন্তু জানা নেই। 

এককথায় বলতে গেলে আমাদের প্রতিরক্ষা দফতর, মিশাইল বানাচ্ছে, রাডার বানাচ্ছে সেই কাজের বরাত যে কোম্পানি পাচ্ছে তাদের টাকা কার তা কিন্তু কেউ জানে না। আচ্ছা প্রশ্নটা কি কেবল টাকা ঢালার? না তাও নয়, এই এলারা আইএফএ-র কাছে আলফা ডিজাইন টেক প্রাইভেট লিমিটেডের কন্ট্রোলিং শেয়ার রয়েছে, কাজেই যে কোনও প্রশাসনিক ব্যাপারে তারা নাক গলাতেই পারে, যে কোনও কাগজ নকশা তারা দেখতে চাইতেই পারে, তার মানে আমাদের মিশাইল বা রাডারের যাবতীয় গবেষণার তথ্য এমন লোকেদের হাতে গেছে, যাচ্ছে বা যাবে যাদের আমরা চিনিই না। কাদের জন্য এমনটা হচ্ছে? যিনি নিজেকে চৌকিদার বলেছিলেন, তিনি কী করছেন? জবাব চাইছে সাংসদরা, তিনি মৌনিবাবা হয়ে বসে আছেন কিংবা রাহুল গান্ধী দেশদ্রোহী, সেটা বলেই তাঁর দায় খালাস, তাঁর দায় শেষ। কার টাকা? কোথা থেকে আসছে সে টাকা? তার ভাগ বাটোয়ারা কোথায় হচ্ছে? ব্যবসা তো, এ তো হরিনাম সংকীর্তন নয়, লাভ তো হচ্ছে। মোদিজি, আমরা কেবল জানতে চাইছি দুটো প্রশ্নের উত্তর। দেশের প্রতিরক্ষা নিয়ে এমন ছেলেখেলা করার অধিকার আপনাকে কে দিল? দু’ নম্বর প্রশ্ন হচ্ছে এই প্রকল্পের লভ্যার্থী কে? আপনি বিনা পয়সায় সিলিন্ডার দিয়েছিলেন? বিনা পয়সায় চাল গম চিনি দিয়েছিলেন? না, বিনি পয়সায় দেননি, আমাদের ট্যাক্সের পয়সায় দিয়েছিলেন, তবুও যাদের দিয়েছিলেন, তারা নাকি লভ্যার্থী, বেশ। কিন্তু এই প্রকল্পের, এই যে আদানি এলারা প্রকল্পের লভ্যার্থী কারা? একটু ঝেড়ে কাশুন। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | রাহুল গান্ধী, দেশ এবং দেশদ্রোহিতা   

কিছুদিন আগে বলেছিলেন, না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা। এখন ডিফেন্স বাজেটেও ঘুঘুপাখি, এবার অন্তত সত্যিটা বলুন। এই আদানির পেছনে কে? আপনি তো আছেনই, এটা সব্বাই জানে। যেমন আপনার সঙ্গেই দেখা গেছে নীরব মোদীকে, মেহুল ভাই চোকসিকে, তার থেকেও অনেক বেশি হাজার বার দেখা গেছে এই গৌতম আদানিকে। এবার কি উনিও তাহলে এক সকালে প্লেনে চেপে ওই মরিসাসে চলে যাবেন, দেশের লক্ষ কোটি টাকা নিয়ে? সেই প্লেনে চেপে যে প্লেনে চেপে আপনি গুজরাতের আমেদাবাদ থেকে দিল্লিতে এসেছিলেন, সেখান থেকে সোজা সংসদে? মানুষ এসব জানতে চায় আর মানুষকে চুপ করিয়ে দেওয়ার ফর্মুলা নিয়ে বসে আছেন, বিরোধিতা করলেই ইডি, সিবিআই, ভিজিলেন্স, ইনকাম ট্যাক্স। কিন্তু তাতে করে কি সত্যিটাকে ঢাকা যাবে? সব্বাই তো ওই অক্ষয় কুমার নন, শিরদাঁড়াওলা সাংবাদিকও তো আছে, যারা আম চুষে খায় চেটে খায় ধরনের প্রশ্ন করে না। সেইরকম আরও দুজন, দ্য মর্নিং কনটেস্ট-এর অদ্বৈত পালাপু আর নিহার গোখলে ফাঁস করে দিলেন আদানি জালিয়াতির আরেক কিসসা। আমরা জানতাম, দেশের লোক জানত, ছোট ইনভেস্টররা জানত আদানি গ্রুপ এসিসি আর অম্বুজা সিমেন্ট কিনেছে, মানে তার অধিকাংশ শেয়ারের মালিকানা আদানি এন্টারপ্রাইজের হাতে। বিরাট করে খবর হল যে সুইজারল্যান্ডের হোলসিম কোম্পানি, যাদের কাছে ৬৩ শতাংশ অম্বুজা সিমেন্ট আর ৫৪.৫ শতাংশ এসিসি সিমেন্টের শেয়ার ছিল, সেটা কিনে নিচ্ছে আদানি গ্রুপ। তার জন্য ডঙ্কা বাজল, এবার কোম্পানিও লোকাল, মোদিজি বলেছেন লোকাল ইজ ভোকাল। এতদিন পরে এখন জানা যাচ্ছে, না আদানি এন্টারপ্রাইজ বা আদানি গ্রুপের কোনও কোম্পানি নয়, এই শেয়ার কিনেছে বিনোদ শান্তিলাল আদানি, আর রঞ্জনাবেন বিনোদ আদানি। এরা বিদেশি, এদের কোম্পানি এবং কাজ কারবার মরিসাস, দুবাই আর ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে। যেখানে গিয়ে কাউকে জেরা করা বা ধরে আনার ক্ষমতা আমাদের দেশের নেই। কিন্তু এই ভুয়ো খবর শুনে হাজার লক্ষ ছোট ইনভেস্টর টাকা ঢেলেছেন আদানির কোম্পানিতে। 

আচ্ছা এগুলো কাদের দেখার কথা? এই সাংবাদিকরাই বা এসব তথ্য পেলেন কোথা থেকে? এগুলো দেখার জন্য বিভিন্ন এজেন্সি রয়েছে, সেবি রয়েছে, তাদের দেখা উচিত নামগোত্রহীন কোনও কোম্পানি আমাদের দেশের মানুষের খাটনির রোজগার নিয়ে নয়ছয় না করতে পারে। ইডি রয়েছে, তাদের দেখার কথা বেআইনি কোম্পানি, বেআইনি বিনিয়োগ লেনদেন ইত্যাদি যেন না হয়। আপনি বলতেই পারেন যে হাজারো কোম্পানি আছে কত দেখবে? সত্যিই তো। কিন্তু মাথায় রাখুন ক’দিন আগেই হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট বেরিয়েছে, সেখানে এই সব কিছুর বিবরণ আছে, তার কিছু তথ্য ফলো করেই এই সাংবাদিকরা এতগুলো ভুয়ো নাম আর ঘাপলার খবর এনে হাজির করলেন, কিন্তু রিপোর্ট বেরিয়ে যাওয়ার দেড় মাস পরেও ইডি আর সেবির কোনও হেলদোল নেই, তাদের তরফে কোনও উদ্যোগ নেই। কেন নেই? কারণ তাঁরা হুকুমের দাস, চলে যা, কৌস্তুভ রায়ের বাড়ি, ঘিরে রেখে হ্যারাস কর, চলে যা সুচন্দ্রিমার বাড়ি তল্লাশির নামে তাণ্ডব চালা, নির্দেশ তো দেওয়াই হয়েছিল তাই না। এক্ষেত্রে নির্দেশ নেই কেন? কারণ কি এটা যে এসবের মাথায় মোদিজির হাত আছে? আমরা বিশ্বাস করতে চাই না যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন বিশ্বাসঘাতক, দেশের প্রতিরক্ষা দফতরের গোপন তথ্য তাঁর নির্দেশেই চলে যাচ্ছে অজানা জায়গায়। আমরা একথা স্বপ্নেও সত্যি বলে মানি না, যদিও তাঁর উত্তরসূরিরা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। আমরা বিশ্বাস করতে চাই না, কিন্তু, হ্যাঁ একটা কিন্তু তো আছেই, এসব ঘটনা যখন সবার সামনে, বিরোধীরা যখন এই কেলেঙ্কারির তদন্ত চাইছেন, তখন প্রধানমন্ত্রী যদি তা এড়িয়ে যান, যদি এই তদন্ত নিয়ে গড়িমসি চলতে থাকে, তাহলে কেবল আমরা নয়, দেশের মানুষও বুঝে যাবেন ডাল মে কুছ তো কালা হ্যায়। প্রশ্ন তো উঠবেই যে আদানির মালিক কে? সেই মালিকের মাথায় কে?

Tags : Goutam Adani Adani Group Narendra Modi Fourth Pillar গৌতম আদানি আদানি গ্রুপ নরেন্দ্র মোদি চতুর্থ স্তম্ভ

0     0
Please login to post your views on this article.LoginRegister as a New User

শেয়ার করুন


© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.