Sunday, June 8, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | মোদিজির শিক্ষাদীক্ষা এবং মোগল ইতিহাস 

Fourth Pillar | মোদিজির শিক্ষাদীক্ষা এবং মোগল ইতিহাস 

Follow Us :

দেশের প্রথম শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা কী ছিল? মৌলানা আবুল কালাম আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রি, এমএ বিএ তো ছেড়েই দিন, কোনওদিনও স্কুলে যাননি। মাদ্রাসায় গেছেন? না তাও যাননি। তিনি বাড়িতেই পড়াশুনো করেছেন, তাঁর বিদ্বান পিতা বাড়িতেই বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, গুণী, জ্ঞানী, পণ্ডিত মানুষজনদের রীতিমতো ইন্টারভিউ করে আবুল কালাম আজাদের পড়াশুনোর ব্যবস্থা করেছিলেন। আবুল কালাম আজাদ সে কথা নিজেই জানিয়েছেন, আর তাঁর পাণ্ডিত্য? তা সারা পৃথিবীর পণ্ডিত জ্ঞানী, গুণী মহলে স্বীকৃত। তাঁর লেখা বই, তাঁর বিভিন্ন সেমিনারের ভাষণ পড়লেই বোঝা যায় যে তিনি প্রকৃত অর্থেই পণ্ডিত ছিলেন। রবি ঠাকুরের কথা আমরা জানি, প্রথাগত শিক্ষা তাঁর ছিল না, কিন্তু পৃথিবীর অন্যতম কবি সাহিত্যিকের তালিকাতে তাঁর নাম তো থাকবেই। এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা সেই অর্থে প্রথাগত শিক্ষা পাননি, অনেকের সেই সুযোগও ছিল না, যেমন কাজি নজরুল ইসলাম, কিন্তু পরবর্তীতে তাঁরাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে দিকপাল হয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়ে এক অনন্য কীর্তি হল আমাদের আপাতত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি ওরফে নরেন্দ্রকুমার দামোদর দাস মোদি ওরফে নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদির। অন্তত এতগুলো নামের ভ্যারিয়েশন তো পাওয়াই যাচ্ছে ওনার বিভিন্ন কাগজ থেকে। 

ডিগ্রিতে পরে আসব, প্রথমে জন্মদিন ঠিক করে নেওয়া যাক। সেখানেও একটা নয়, দুটো। ২৯ আগস্ট ১৯৪৯-এ তাঁর জন্ম হয়েছিল, কোথায় আছে? ওনার ডিগ্রির কাগজে। কিন্তু পাবলিক ডোমেনে? তাঁর জন্মদিন ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫০। পুরো বছরখানেকের ঘাপলা। এই তারিখ তাঁর নির্বাচনী এফিডেভিডে আছে। এবং যদি ওই কুমির ধরার কিসসা বাদ দিয়েও দিই, তারপরেও তিনিই জানিয়েছেন মাত্র ৬ বছর বয়সে তিনি চা বিক্রি করতেন। কোথায়? গুজরাতের ভাবনগর স্টেশনে। মানে আহারে ওইটুকু বাচ্চা ছেলে, স্টেশনে গাড়ি থামলেই চায় চায়, গরম চায় বলে হাঁক দিতেন, চা পিপাসু যাত্রীরা চা কিনতেন। কিন্তু কহানি মে গচ্চা হ্যায়। ১৯৫৬-তে ভাবনগর স্টেশন তো তৈরিই হয়নি, স্টেশন তৈরি হয়েছে ১৯৭৩-এ, তখন মোদিজির বয়স হয় ২৪ নাহলে ২৩। তারপরে ওই কুমির ধরা ইত্যাদি, তারও পরে সন্ন্যাসী হতে চাওয়া। এইখানে শোনা যায়, মানে ওনার মুখেই শোনা যায় যে এমনকী রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের সাধুরাও ওনার সন্ন্যাসী হওয়ার আবেদন নাকচ করে দিয়েছিলেন। এটা দেশের দুর্ভাগ্য না সৌভাগ্য তা অবশ্য জানা নেই। যাই হোক এরপর তিনি দেশের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন, ৭৫ থেকে ৭৭, ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থার মধ্যে মোদিজি আন্ডারগ্রাউন্ড, লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে তার মধ্যেও সময় করে সর্দারজির ড্রেসে স্টুডিওতে গিয়ে একটা ছবি তুলিয়েছেন আর দেশের পুলিশ যখন তাঁকে খুঁজছিল, তখন তিনি দিল্লিতে পুলিশের নাকের ডগায় দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনো করছেন, ১৯৭৮-এ তিনি গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেট পাচ্ছেন। এটা ছিল ওনার ওই জরুরি অবস্থার মধ্যে জরুরি পড়াশুনো। এরপর ১৯৮৩তে মাস্টার্স ডিগ্রি, না এবার সেটা দিল্লি থেকে নয়, গুজরাত ইউনিবার্সিটিতে, হ্যাঁ মাথায় রাখুন ইউনিভার্সিটি থেকে নয়, ইউনিবার্সিটি থেকে এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনো করছেন। কেন ইউনিবার্সিটি? কারণ তাঁর সার্টিফিকেটে ইউনিবার্সিটিই লেখা আছে। কে পড়াতেন? একজনও অধ্যাপকের নাম পাওয়া যায়নি, সঙ্গে কে কে পড়ত? না, একজনেরও নাম পাওয়া যায়নি। কী পড়তেন? খোদায় মালুম, কারণ ওই এন্টায়ার পলিটিকাল সায়েন্স বলে সাবজেক্টটি শুধু এদেশেই নয় এন্টায়ার পৃথিবীতে কোথাও পড়ানো হয় বলে জানা নেই। তিনি এই ব্রহ্মাণ্ডে মাত্র একজন, যিনি এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনো করেছেন। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ২০২৪-এ আরএসএস–বিজেপির হাতিয়ার মন্দির আর ধর্ম  

এই মাস্টার ডিগ্রি আর ওই এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্সের কথা কবে জানা গেল? ২০১৪তে, যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। তার আগে কি জানত মানুষজন? না, কেউ জানত না, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক সাংবাদিক বৈঠকে ওই সার্টিফিকেট দেখান। যেখানে খোলা চোখেই কয়েকটা ভুল তো ধরা পড়বেই, প্রথম হল ইউনিভার্সিটি বানান, তড়িঘড়ি করে বানানো এই সার্টিফিকেটে ইউনিবার্সিটি লেখা হয়েছে। এরপর নরেন্দ্র মোদির নামে দামোদের দাস লেখা হয়েছে, যা মোদিজি লেখেন না। এবং সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে ১৩ মার্চ, ১৯৮৩তে, যা ছিল আদতে রবিবার। কেবল তাই নয়, সেই ১৯৮৩তে ওনার সার্টিফিকেট হাতে লেখা নয়, মানে যেমনটা সেই সময় হত তেমন নয়, পুরো দস্তুর কম্পিউটারে লেখা সার্টিফিকেট, এবং তাড়াহুড়োতে তাতেও গন্ডগোল, কারণ সেখানে হরফ নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন। ওখানে যে হরফ ব্যবহার হয়েছে তা হল ওল্ড ইংলিশ টেক্সট এমটি, তো মাইক্রোসফট জানাচ্ছে এই হরফটা তৈরি হয়েছে ১৯৯২-এ, এদিকে ১৯৮৩-র সার্টিফিকেটে ১৯৯২-এর হরফ। ফেলুদা হাজির থাকলে বলতেন, বুঝলি তোপসে, বিস্তর গন্ডগোল, সব গুলিয়ে যাচ্ছে। 

আচ্ছা এরকম গোলমেলে কিছু থাকলে সাধারণত আমরা কাউকে গিয়ে ধরি, বলি, যে স্যর একটু বুঝিয়ে দেবেন, ব্যাপারটা কী? সেরকম একটা কিছু মাথায় নিয়ে কেজরিওয়াল গিয়েছিলেন গুজরাতের আদালতে, হুজুর মাই বাপ, আপনি যদি একটু খোলসা করে দেন, মানে সার্টিফিকেটটা আরেকবার হাজির করলেই তো দুধ কা দুধ পানি কা পানি। তো বিচারক জানিয়েছে এসব অবান্তর প্রশ্ন, এবং অবান্তর প্রশ্ন করার জন্য মহামান্য আদালত কেজরিওয়ালকে ৩০ হাজার টাকা ফাইন করেছেন। মাত্র ৩০ হাজার ফাইন, ওনার পিতৃপুরুষের ভাগ্য যে দু’ বছরের জেল দেয়নি, দিলে মুখ্যমন্ত্রিত্বটাও যেত। মোদিজির সার্টিফিকেট তো জাতীয় সম্পদ এবং ন্যাশনাল সিক্রেট, তা কি ঝুপ করে সব্বার সামনে আনা যায়? 

এধারে যখন এই সার্টিফিকেট কাণ্ড চলছে, তখন উত্তরপ্রদেশে, মোদিজির সুযোগ্য শিষ্য আদিত্যনাথ যোগীর রাজ্যে ইতিহাস থেকে মোগল ইতিহাসকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ল্যাঠা চুকেছে, বাবার হল আবার জ্বর সারিবে ঔষধে— বাবর, হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গির, শাহজাহান, আওরঙ্গজেব মনে রাখার কোনও দরকার নেই, কারণ মোগল মানেই মুসলমান। এদেশের লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে তো আরএসএস–বিজেপি, হিন্দু পরিষদ, বজরঙ্গ দল বাবরের সন্তান বলেই মনে করে, প্রকাশ্যে তা বলেও। হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদের নির্মম অত্যাচারে নিম্নবর্গের মানুষ, দলিত মানুষ মুসলমান ধর্মে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই সত্যকে গোপন করে তাদের ইতিহাস মুছে ফেলার কাজটা তো অত্যন্ত জরুরি। জরুরি আকবরের দিন ই ইলাহিকে মুছে ফেলার, সেই সময়ে এক সম্রাট হিন্দু, মুসলমান, ক্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন ধর্মের মানুষজনকে ডেকে সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলছেন, আরএসএস–বিজেপির তা সহ্য হবে কেন? ওনারা পারলে রামচরিত মানসও পুড়িয়ে দেবেন, কারণ ইতিহাস বলছে তুলসিদাস সংস্কৃত নয় মগহি হিন্দিতে রামচরিত মানস লিখেছিলেন, রেগে গিয়েছিল তৎকালীন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত সমাজ। তাঁরা পুড়িয়ে ফেলতে এসেছিলেন ওই রামচরিত মানসের পুঁথি, জাহাঙ্গিরের পাঠানো সেনা সেই অঘটনকে আটকায়। দারাশুকোর সময়েই রামায়ণ ফারসিতে অনুবাদ হয়, মোগল আমলেই উত্তরভারত জুড়ে এক নতুন স্থাপত্যের সূচনা, যা আমরা লালকেল্লা থেকে দিল্লির বহু ইমারত, আগ্রার দুর্গ বা ফতেপুর সিক্রি, তাজমহল থেকে দেশজুড়ে আরও কত স্থাপত্যে দেখি। আপাতত সব উবে যাবে, সে ইতিহাস মানুষ আর পড়বে না, জানতেই পারবে না সিপাহি বিদ্রোহের কথা, যে বিদ্রোহীরা তাদের মাথায় বসিয়েছিলেন মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরকে। জানতেই পারবে না ইংরেজদের শঠতা, জানতেই পারবে না তাঁতিয়া টোপি বা নানা সাহেবের কথা। পাল, গুপ্ত, মৌর্য সাম্রাজ্যের পর সোজা ইংরেজদের শাসন পড়বে ছেলেমেয়েরা? ১৫২৬ থেকে ১৮৫৭, মানে ৩২৯ বছরের ইতিহাস মুছে দেওয়া হবে, এরমধ্যেই অত্যাচারী মোগলদের বিরুদ্ধে রানা প্রতাপের লড়াই আছে, এক টানা লড়েছেন শিবাজি, মারাঠারা, মোগলদের মধ্যেকার অন্তর্বিরোধ আছে, তাদের ভাল কাজ আছে, তাদের অন্যায় কাজ আছে, স্থাপত্য, পোশাক, খাবার আছে, সঙ্গীত আছে, সব মুছে ফেলো, এক কালাপাহাড়ের ফতোয়া। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | হাতি পোষা এবং ভারতবর্ষের ভুখা জনতা 

এটা হচ্ছে শুরুয়াত। এরপরে মোছা হবে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, কারণ তা আরও অস্বস্তিকর, অন্তত আরএসএস–বিজেপির কাছে এই মুহূর্তে সবথেকে অস্বস্তিকর হল ওই স্বাধীনতার ইতিহাস, কারণ সে ইতিহাসে তাঁরা ভিলেন, সে ইতিহাসে তাঁরা দেশদ্রোহী, কাজেই সে ইতিহাসও মুছতেই হবে। থাকবে কী? জানা নেই। কারণ হিন্দু ধর্মকে ওনারা যে ভাবে দেখেন, হিন্দু ধর্ম তো তেমন কূপমণ্ডুক বা তেমন বিচ্ছিরি কোনও ব্যাপার নয়, সে ধর্মে বসুধৈব কুটুম্বকমের কথা বলা আছে, সে ধর্ম উদার, সে ধর্ম বিদ্বেষের কথা বলে না। সে থাক। সমস্যা অন্য জায়গায়। সমস্যা হল মোদিজিকে নিয়ে, বা বলা ভালো ওনার এ প্লাস বি ফরমুলাকে নিয়ে, ওনার ফরমুলা টা একবার শুনে নিন। (https://youtu.be/PbddAUCg_AM) ০০ – ০.৪৯)

ওনার প্রশ্ন হল ইয়ে এক্সট্রা এবি কিধর সে আয়া? আজ্ঞে সেটা জানতে হলে তো আপনাকে অ্যালজেব্রা পড়তে হবে। সেখানেই সমস্যা, অ্যালজেব্রা বা অ্যালজেবর ওয়াল মুকাবলা, যাতে এই অঙ্ক কষা শেখানো হয়েছে তা কিন্তু এক পণ্ডিত মুসলমানের লেখা, মুহম্মদ ইবনে মুসা আল-খয়ারিজমি, আরবিতে লেখা এই বইতেই ওই এক্সট্রা এবি-র হদিশ পাওয়া গেলেও পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু সমস্যা হল সে বই তিনি পড়বেন কি?  

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Donald Trump | Elon Musk | মাস্ক নিয়ে প্রশ্ন করতেই এ কি করলেন ট্রাম্প? দেখুন ভিডিও
01:32:40
Video thumbnail
Donald Trump | ট্রাম্পকে এপস্টেইন ফাইলের ভয় দেখাচ্ছেন মাস্ক! কী এই এপস্টেইন ফাইল? দেখুন রিপোর্ট
01:18:11
Video thumbnail
Prashant Kishor | রাহুল গান্ধীর পলিটিক্যাল স্ট্রেন্থ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন প্রশান্ত কিশোর
54:05
Video thumbnail
Donald Trump | Elon Musk | মাস্ক নিয়ে আমার ভাবার সময় নেই, এ কি বললেন ট্রাম্প? কী নিয়ে ভাবছেন?
45:45
Video thumbnail
Narendra Modi | Donald Trump | মোদিকে বলতে হবে ট্রাম্প মিথ‍্যা বলছেন, বিস্ফো/রক রাহুল
01:01:26
Video thumbnail
Donald Trump-Elon Musk | ট্রাম্প-মাস্ক সংঘাতের মাঝেই এবার মধ্যবর্তী নির্বাচনের ডাক, কী হতে পারে?
01:07:26
Video thumbnail
Chenab Bridge | অসাধারণ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কিল, দেখুন চেনাব ব্রিজের অসাধারণ এক ভিডিও
02:15:40
Video thumbnail
Weather Update | আবহাওয়ার বড় আপডেট, কোন কোন জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা? দেখুন Live
01:41:10
Video thumbnail
Narendra Modi | Rahul Gandhi | ভারত-পাক যু/দ্ধবিরতির প্রসঙ্গে ফের মোদিকে প্রশ্ন রাহুলের
01:01:11
Video thumbnail
Narendra Modi | সংঘাত আবহে জি-৭ সম্মেলনে আমন্ত্রিত মোদি, দেখুন বড় আপডেট
01:13:20