Saturday, June 14, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | নির্বাচনে জয় ক্রমশ দূরে সরছে, মোদিজি নার্ভাস?

Fourth Pillar | নির্বাচনে জয় ক্রমশ দূরে সরছে, মোদিজি নার্ভাস?

Follow Us :

তিন নম্বর বৈঠকের আগেই গ্যাসের দাম কমল ২০০ টাকা। হ্যাঁ, ইন্ডিয়া বৈঠকের দু’দিন আগে মোদি সরকার জানাল, ২০০ টাকা দাম কমছে গ্যাসের আর উজ্জ্বলা যোজনাতে যাঁরা গ্যাস পান, তাঁরা ৪০০ টাকা ভর্তুকি পাবেন। এইখানে অবশ্য একটা ছোট্ট চালাকি আছে, সেটাও বুঝে নেওয়া দরকার। উজ্জ্বলা যোজনাতে কানেকশন নিলেই একটা করে সিলিন্ডার ফ্রি দেওয়া হয়েছিল, অনেকেই সেই ফ্রি সিলিন্ডার শেষ হওয়ার পরে দ্বিতীয় সিলিন্ডার কেনেননি, অনেকে ক’দিন কেনার পরে আর কিনতে পারেননি। কাজেই উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি নেমে এসেছিল ৩৯ শতাংশ, মানে এক্কেবারে গরিব মানুষেরা গ্যাস সিলিন্ডার কেনা বন্ধ করেছিলেন। কখন? যখন সিলিন্ডারের দাম বেড়ে ৭০০-৮০০ টাকা হয়ে গেল। এই হিসেব সবার সামনে, মোদিজি প্রকল্প চালু করলেন অথচ মানুষ গ্যাস সিলিন্ডার কিনছেন না এটা তো বহত না ইনসাফি। তাই এবার একটা উপায় বের করা হয়েছে, ৪০০ টাকা ভর্তুকি, মানে দাম দাঁড়াবে কমবেশি ৭০০ প্লাস, যাঁদের মাথা পিছু রোজগার ১৫০ টাকা, তাঁরা ৭০০ টাকার গ্যাস কীভাবে কিনবেন? না, ওঁরা কিনবেন না, কিন্তু দেশজুড়ে এই গ্যাস সিলিন্ডারের এক অবৈধ ব্যবসা শুরু হয়ে যাবে, হু হু করে বাড়বে উজ্জ্বলা যোজনার সিলিন্ডারের চাহিদা, সেগুলো নিয়ে কালোবাজারি হবে আর ভক্তরা বলতেই পারবেন বুক ঠুকে উজ্জ্বলা যোজনার ফলে কত লক্ষ কোটি মানুষ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। এই চালাকিটুকু বুঝে নিন, ক’দিন পরেই এই প্রচার আসবে, মিলিয়ে নেবেন। কিন্তু আপাতত বটম লাইন হল গ্যাসের দাম কমেছে, নির্বাচনের আগে এসব জনমোহিনী পদক্ষেপ নেওয়া হয় বইকী, কিন্তু ২০০ টাকা কমানো? এই সিদ্ধান্ত, কোথাও বলে দেয় যে জয় শ্রীরামে ভরসা রাখতে পারছেন না মোদি-শাহ, আরএসএস–বিজেপি। অন্য অনেক কিছু আছে নির্বাচনী ইস্যু, কিন্তু দেশজোড়া মূল্যবৃদ্ধি আর বেকারত্বের সামনে বাকি সব বড্ড ফিকে, বা ওরকমভাবে না বলে বলা ভালো যে দেশের অন্তত ৬০ শতাংশ মানুষের সামনে মূল ইস্যু কিন্তু এই মূল্যবৃদ্ধি আর বেকারত্ব। মূল্যবৃদ্ধির বিরাট তালিকা আর তথ্য দিয়ে বলার দরকার নেই, আপনারা প্রত্যেকে জানেন, তবুও কিছু তথ্য রইল। আমি ওই গড়পড়তা ইনফ্লেশন বা মূল্যবৃদ্ধির হারে যাচ্ছি না, কারণ এদিকে নাকি হিরের দাম কমেছে, বিলাসবহুল আবাসনের দামও নাকি খানিক কমেছে, কমেছে মাশরুমের দাম। আমি বরং সাধারণ খাবার-দাবারের কথায় আসি, বিউলির ডাল, নুন, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, লঙ্কা, আদা, টমেটো, আলু, শুঁটি, আটা, বাঁধাকপি আর চাল, এইসব দিয়ে যদি একটা খাবারের থালা হয়। হ্যাঁ, খেয়াল করুন, ডিম, মাছ, মাংস নেই, কেবল শুদ্ধ শাকাহারী এক নিরামিষ থালি, যা ভক্তরা খেয়ে থাকেন। পাঁচ বছর আগে ১০০ টাকা দাম ধরলে আজ সেই থালির দাম হবে ১৬৭ টাকা। হ্যাঁ, ৬৭ শতাংশ সাধারণ খাবারের দাম বেড়েছে, আর রোজগার? 

সাধারণ মানুষের রোজগার বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। এই ক’টার হিসেব বলে দিই— পাঁচ বছর আগে বিউলির ডালের দাম ছিল ১০৫ টাকা কিলো, এখন ১৬৯ টাকা। নুন ১৯ টাকা থেকে বেড়ে ২৭ টাকা, তেল ১১০ টাকা থেকে বেড়ে ১৪৪ টাকা? রসুন ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা, লঙ্কা ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, আদা ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা, টোমাটো ৫৭ টাকা থেকে ১৭০ টাকা, আটা ৩৬ টাকা থেকে বেড়ে ৫৬ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ ছিল, হয়েছে ৮০ টাকা, যে চাল ৩২ টাকায় মিলতো, এখন তা ৪৩ টাকা। আমি গাড়ি ভাড়া, ওষুধ, ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ, বাড়ি ভাড়ার কথা বাদই দিলাম। ৬০ শতাংশ মানুষ এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে খাওয়া কমাচ্ছেন, শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। মোদিজি এতদিনে ২০০ টাকা গ্যাসের দাম কমালেন। ওদিকে রাজস্থান আর মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস জানিয়েছে, তারা ক্ষমতায় আসলে ৫০০ টাকা প্রতি সিলিন্ডার দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। কাজেই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন বা ২০২৪-এর নির্বাচনের আগে যদি বিরোধী জোট সত্যিই তৈরি হয়, যদি সত্যিই সেই জোট সম্মিলিতভাবেই যদি বিরোধিতায় নামে, তাহলে মোদিজিকে এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আরও ভাবতে হবে। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ইন্ডিয়া বৈঠক, নতুন কারা যোগ দিচ্ছেন? কোন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে? 

এরপরের ইস্যু আরও বড়, এই অসম্ভব খিদে পেট নিয়ে মানুষজনের সামনে সমানে মোদিজি বলেই চলেছেন, আমরা আপাতত পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। সেখানেই থামছেন না, আর ক’দিন পরেই যে দেশের অর্থনীতি তিন নম্বরে চলে যাবে তাও বলছেন। এক পেট খিদে নিয়ে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ভাবছেন এত খিদে নিয়ে ১ নম্বরে গেলেই বা কার লাভ? কালোদা তো বলেই দিলেন, ওসব হাওয়াগিরি কোরো না, ৫ নম্বরে আধপেটা আছি, তিন নম্বরে গেলে তো না খেয়ে থাকতে হবে। কিন্তু এটা তো সত্যি, সত্যি করেই তো দেশের সম্পদের দিক থেকে আমরা বিশ্বে পাঁচ নম্বরেই, কিন্তু সে সম্পদের হিসসেদারি কার? কার দখলে দেশের সম্পদ? এবং সেই হিসেবে আরেকটা ভাগ মোদিজি মুখেও আনছেন না, চেপে যাচ্ছেন, সেটা হল মাথাপিছু রোজগারে আমার দেশ বিশ্বে ১২৯ নম্বরে। বলছেন না যে এই জি টোয়েন্টি সম্মেলনে যেসব দেশ আছে, তাদের মধ্যে সবথেকে গরিব আমরা, আমাদের দেশ। হিসেবটা দেখুন, আমেরিকার মাথাপিছু আয় ৬৪৭৬৫ ডলার প্রতি বছর, জার্মানির ৫৪৫৩৪, অস্ট্রেলিয়ার ৪৯২৩৮, কানাডার ৪৬৮০৮, সৌদি আরবের ৪৬১১২ ফ্রান্সের ৪৫৯৩৭, ইউনাইটেড কিংডম এর ৪৫২২৫, সাউথ কোরিয়ার ৪৪৫০১, ইতালির ৪২৮৪০, জাপানের ৪২২৭৪, টার্কির ৩১০৩৩, রাশিয়ার ২৭১৬৬, আর্জেন্টিনার ২০৯২৫, মেক্সিকোর ১৭৮৯৬, চীন ১৭৫০৪, ব্রাজিল ১৪৩৭০, সাউথ আফ্রিকা ১২৯৪৮, ইন্দোনেশিয়া ১১৪৬৬ আর ভারতবর্ষ? ৬৫৯০ ডলার প্রতি বছর মাথাপিছু আয়। এই ২০টা দেশ মিলে জি টোয়েন্টি, এই গোষ্ঠীর নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর একজনকে সভাপতি করা হয়, সেই নিয়মেই এবারে ভারতের নরেন্দ্র মোদি, এর পরের বার মেক্সিকো বা সাউথ আফ্রিকার রাষ্ট্রপ্রধান হবেন। ভক্তের দল উল্লাসে নিদ্রাহীন রাত কাটাচ্ছে, দেশের মানুষ ভুখাপেটে। এবং এই জি টোয়েন্টিকে সামনে রেখে মোদিজির প্রচার, আমরা কোথায় ছিলাম, কোথায় এসেছি দেখো, এর আগে আমাদের দেশকে তো কেউ চিনতই না, মোদিজিই তো চেনালেন। তো এই বাওয়ালের মাঝখানেই পিউ রিসার্চ রিপোর্ট বেরিয়েছে। এই পিউ রিসার্চ সেন্টারটা কী? পিউ হল আমেরিকার এক বড় ব্যবসায়ী পরিবারের পদবি, এই পরিবারের তৈরি করা একটি ট্রাস্ট সারা পৃথিবীর বিভিন্ন তথ্য নিয়ে গবেষণা করার জন্য এই পিউ রিসার্চ সেন্টারকে টাকা জোগায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্ডিত মানুষজন গবেষণা করে আমাদের জানান। জি টোয়েন্টি বৈঠকের ঠিক আগে তাঁদের গবেষণা জানাচ্ছে, সারা বিশ্বের বিশেষ করে উন্নত দেশে আমাদের দেশ সম্পর্কে ধারণা আগের তুলনায় খারাপ হচ্ছে। 

২০০৮ থেকে ২০২৩-এর এক তুলনামূলক তথ্য আমাদের জানাচ্ছে, ২০০৮-এ ফ্রান্সের ৭০ শতাংশ মানুষ আমাদের দেশ সম্পর্কে ভালো ধারণা, ফেভারেবল ওপিনিয়ন রাখত, ২০২৩-এ তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ শতাংশ। মাত্র ২৯ শতাংশ ফ্রান্সের মানুষ আমাদের সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখত না, সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ শতাংশ। স্পেনের ৪৮ শতাংশ মানুষ আমাদের দেশ সম্পর্কে ভাল ধারণা পোষণ করত ২০০৮ সালে, এখন তা নেমে ৩৪ শতাংশ হয়েছে আর খারাপ ধারণা পোষণ করতেন ৩৪ শতাংশ মানুষ, বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে। জার্মানিতে ২০০৮ সালে ৬০ শতাংশ মানুষ ভারত সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখত, এখন কমে ৪৭ শতাংশ, খারাপ ধারণা ছিল ২৯ শতাংশ মানুষের সেটা বেড়ে ৩৮ শতাংশে ঠেকেছে। পোল্যান্ডের ৫৯ শতাংশ মানুষের বদলে ৪৬ শতাং মানুষ ভারত সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করে, খারাপ ধারণা ছিল ২০ শতাংশের, সেটা বেড়ে ৩৩ শতাংশ হয়েছে। ইউকে-র ৭৫ শতাংশের ভাল ধারণা এখন নেমে ৬৬ শতাংশে, খারাপ ধারণা ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশ হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নতুন প্লেন কিনেছেন, তেমন সম্বর্ধনা না পেলে প্লেন থেকে না নেমে লোক হাসাচ্ছেন, কিন্তু পৃথিবীতে আমাদের দেশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। এই সার্ভেতেই গোটা পৃথিবীর মানুষের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল যে মোদিজি পৃথিবীর রাজনীতিতে কতটা কার্যকরী? গড়ে মাত্র ৩৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন তিনি কার্যকরী। বোঝাই যাচ্ছে ওঁর বিশ্বগুরুর কথাবার্তা বিশুদ্ধ বাওয়াল, অন্য আর পাঁচটা মিথ্যের মতোই এটাও সেই অনর্গল মিথ্যেরই একটা অংশ মাত্র। আসলে এইসব নিয়েই বহু প্রশ্ন কেবল বিরোধীদের তরফেই তোলা হচ্ছে তাই নয়, দলের মধ্যে, আরএসএস-এর মধ্যেও এই প্রশ্ন উঠছে। মূল্যবৃদ্ধি কমার নাম নেই, বেকারত্ব হু হু করে বাড়ছে, দেশের মধ্যে ঘৃণা ছড়াচ্ছে, হানাহানি চলছে, এর মধ্যে মিথ্যে বা অর্ধসত্য অর্থনৈতিক তথ্য দিয়ে মানুষকে কী বোঝানো যাবে? বিশেষ করে যেখানে বিরোধীরা সব ভুলে এক জায়গায় একমঞ্চে জড়ো হচ্ছেন? তাই নার্ভাস প্রধানমন্ত্রী ২০০ টাকা গ্যাসের দাম কমালেন, কিন্তু তা দিয়ে কি এই অপছন্দের সুনামি আটকানো যাবে?  

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Ahmedabad | বিমান ভাঙার পর কী হয়েছিল ডাক্তারি হস্টেলে? অভিজ্ঞতার কথা জানালেন গুজরাতের ডাক্তারি পড়ুয়া
01:45:55
Video thumbnail
Narendra Modi | আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘ/টনা, দুর্ঘ/টনাস্থলে নরেন্দ্র মোদি, কী জানালেন? দেখুন Live
02:45:32
Video thumbnail
Narendra Modi | একমাত্র জীবিত যাত্রীর সঙ্গে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী, কী জানালেন তিনি?
01:44:06
Video thumbnail
Narendra Modi | আহমেদাবাদের পরিদর্শনের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট নরেন্দ্র মোদির, কী লিখলেন তিনি?
59:27
Video thumbnail
Stadium Bulletin | বিরাটের টেস্ট অবসরের কারণ কী?
01:43
Video thumbnail
Stadium Bulletin | ভারতীয় দলে বিমানে চড়তে ভয় কাদের?
00:48
Video thumbnail
Bangla Bolche | Nandita Halder | ত্রুটির কারণ কি তাড়াতাড়ি জানা যাবে?
01:27
Video thumbnail
Politics | রবিঠাকুরের ভিটে ভাঙচুর, মমতার মুখে নিন্দার সুর
03:32
Video thumbnail
Politics | চাপ দিতে নীতীশকে এবারে, আরএসএস নামল বিহারে?
02:51
Video thumbnail
Politics | ইন্ডিয়া জোট শক্ত ফের, বৈঠক হল শরিকদের
03:19