ইসলামাবাদ: ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়ার ডাক দিয়ে ২০১৮-য় পাক প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন ইমরান খান (Imran Khan)। সরকারের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই বিরোধীদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ইমরান। বাইশগজে নেতৃত্ব দিয়ে অনেক কঠিন পরিস্থিতি থেকে পাকিস্তানকে জয়ের রাস্তায় পৌঁছে দিয়েছেন। কিন্তু, বাইশগজের লড়াকু অধিনায়ক এই চার বছরে বুঝে গিয়েছেন ক্রিকেট মাঠের নেতৃত্ব আর দেশের নেতৃত্ব এক নয়। বিরোধীরা সম্মিলিত ভাবে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর (no-confidence motion) যে প্রশ্নটা উঠছে, ইমরান খান কি আদৌ নিজের গদি রক্ষা করতে পারবেন?
ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা যে অনাস্থা আনতে চলেছেন, তা আগেই জানা ছিল। আশা করা গিয়েছিল, ২৫ মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হলেই অনাস্থা প্রস্তাব পেশ হবে। কিন্তু, স্পিকারের অনুমতি না মেলায়, তা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত সোমবার পাক পার্লামেন্টে ইমরানের সরকারের (Pakistan Prime Minister) বিরুদ্ধে অনাস্থ প্রস্তাব পেশ হয়েছে।
এ দিন অনাস্থা প্রস্তাব পেশের পরেই অধিবেশন বুধবার পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায়। আগামী বৃহস্পতিবার, ৩১ মার্চ পরবর্তী অধিবেশনে অনাস্থা প্রস্তাবের উপর বিতর্ক রয়েছে। এই বিতর্কের নেতৃত্ব দেবেন বিরোধী দলনেতা শেহবাজ শরিফ। তার পরেই হবে ভোটাভুটি। সেটা বৃহস্পতিবারও হতে পারে। বা শুক্রবারও। নির্ভর করছে স্পিকারের সিদ্ধান্তের উপর। কিন্তু, প্রশ্ন একটাই, ইমরান খান কি নিজের কুর্সি ধরে রাখতে পারবেন?
আরও পড়ুন: Russia-Ukraine peace talks: ইউক্রেনের অখণ্ডতার সঙ্গে আপস নয়, শান্তি বৈঠকের আগে ঘোষণা জেলেনস্কির
যত চাপই থাক, ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-এ-ইনসাফ (পিটিআই) অনাস্থা প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। মুখে তারা বলছে, ক্ষমতা তাদের হাতেই থাকবে। কিন্তু, অঙ্ক বলছে না ইমরান খানের পক্ষে ক্ষমতা ধরে রাখা সহজ হবে। বিরোধীরাও কিন্তু সেই অঙ্কের উপর ভিত্তি করেই আত্মবিশ্বাসী।
পাক পার্লামেন্টে ৩৪২ জন সাংসদ রয়েছেন। বিরোধীদের দাবি, তাদের পক্ষে ১৭২ সদস্যের সমর্থন রয়েছে। ফলে, ইমরান খানের সরকার পড়া সময়ের অপেক্ষা। বিরোধীরা যে দাবিই করুন না কেন, ভোটাভুটির সময় ইমরান শেষ মুহূর্তে খেলা ঘোরাতে পারবেন কি না, তার উপর নির্ভর করবে অনেক কিছু।
নয়া পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখানো ইমরানে মোহভঙ্গ ঘটেছে দেশের একাংশ মানুষেরও। পাকিস্তানের অর্থনীতি ধুঁকছে। তাঁর বিদেশনীতিও চ্যালেঞ্জের মুখে। বিরোধীরা এই বিষয়গুলিকে সামনে রেখেই ইমরানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই জোট সরকারকে কোণঠাসা করতে চাইছে। তার উপর পাকসেনা প্রধান ও পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধানও নাকি ইমরান খানে আস্থা রাখতে পারছেন না। এমনও শোনা গিয়েছে, ইমরানকে অনেক আগেই তাঁরা ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন: PM Narendra Modi: হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব তিথিতে ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী
এমন বিরূপ আবহে ইমরান খানের পক্ষে সংখ্যা গরিষ্ঠতা প্রমাণ কিন্তু কঠিনই। ইমরানের নিজের দল পিটিআইয়ের ১৫৫ জন সাংসদ রয়েছেন। আরও ১৭ জন সাংসদের সমর্থন লাগবে। বিরোধীরা সকলে এককাট্টা। এমত অবস্থায় তাঁর জোটের ক’জনের সমর্থন তিনি ধরে রাখতে পারবেন, তার উপরই নির্ভর করবে ক্ষমতা ধরে রাখার সমীকরণ।