কলকাতা: হুগলির দুই যুবনেতা কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh) এবং শান্তনু (Shantanu Banerjee) বন্দ্যোপাধ্যায়কে বহিষ্কার করল তৃণমূল। মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে একথা জানান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) এবং শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা। নিয়োগ দুর্নীতিতে (Recruitment Scam) নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের ওই যুবনেতার। সিবিআই এবং ইডির তদন্তে ওই দুজনের বিরুদ্ধে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। এতসবের পরেও দল কেন ওই দুজনের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। দোলের অন্দরেও এ নিয়ে নানা চর্চা চলছে। অবশেষে মঙ্গলবার তাঁদের বহিষ্কারের কথা জানালেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। গত শুক্রবার শান্তনুকে দীর্ঘ সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করে সিবিআই। তার কিছুদিন আগে গ্রেফতার করা হয় কুন্তলকে।
নিয়োগ দুর্নীতিতে কুন্তলের নাম প্রথম শোনা যায় বারাসতের শিক্ষা ব্যবসায়ী তাপস মণ্ডলের মুখে। তাপসই প্রথম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, চাকরি দেওয়ার নাম করে কুন্তল ১৯ কোটি টাকা তুলেছিলেন। একই কথা তাপস ইডি এবং সিবিআইকেও জানিয়েছিলেন। তাপসের আরও দাবি ছিল, সেই টাকা আদায় করার সুত্রেই তাঁর সঙ্গে কুন্তলের যোগাযোগ হয়। যাঁরা টাকা দিয়েছিলেন, তাঁদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা তাপস বলেছিলেন কুন্তলকে। কুন্তল অবশ্য এখনও সেই টাকা দেওয়ার কথা তদন্তকারী সংস্থার কাছে অস্বীকার করে চলেছেন। সিবিআই এবং ইডি তাপসের বাড়ি এবং অফিসেও একাধিকবার তল্লাশি চালিয়েছে। শেষে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে সিবিআই তাপসকে গ্রেফতার করে। তার কিছুদিন পরই সিবিআইয়ের জালে ধরা পড়েন তৃণমূলের যুবনেতা কুন্তল ঘোষ। কুন্তলকে জেরার সূত্রে এই কেলেঙ্কারিতে উঠে আসে গোপাল দলপতি এবং তাঁর প্রাক্তন হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়য়ের নাম। কুন্তল একাধিকবার দাবি করেন, টাকা কোথায়, তা জানে গোপাল এবং হৈমন্তী। হৈমন্তী অবশ্য সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছেন। গোপাল জানান, সিবিআই বা ইডি ডাকলেই তিনি হাজিরা দেবেন। এই নিয়োগ কেলেঙ্কারির সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই বলেও দাবি গোপালের।
এদিকে হুগলি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ এবং জেলার দাপুটে তৃণমূল যুবনেতা শান্তনুর বলাগড়ের বাড়িতেও একাধিকবার তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তাঁকে বেশ কয়েকবার সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনিও এই দুর্নীতিতে যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেন। গত শুক্রবার দীর্ঘ সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সিবিআই সন্ধ্যায় শান্তনুকে গ্রেফতার করে। তারপরই কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তে একের পর এক চন্দননগর, চুঁচুড়া, ব্যান্ডেল, কলকাতায় শান্তনুর বিপুল সম্পত্তির হদিশ পাওয়া যায়। শান্তুনুর দাবি, এই দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড হল কুন্তল। ও তদন্তকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। টাকা অন্যত্র সরিয়ে ফেলছে।
দুজনের বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ ওঠার পরেও কেন দলীয় পদ থেকে সরানো হচ্ছে না তা নিয়ে ঘরে-বাইরে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তৃণমূলকে। কেনই বা শান্তনুকে জেলা পরিষদের সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলা হচ্ছে না, প্রশ্ন ওঠে তা নিয়েও। শান্তনু গ্রেফতারের পর এখন বলাগড়ের অনেক তৃণমূল নেতাও তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। এতদিন ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। জেলা তৃণমূলের অনেক নেতাও শান্তুনুর বিপুল সম্পত্তি নিয়ে নানা কথা বলছেন। তাতে তৃণমূলের অস্বস্তি ক্রমশই বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে দল দেরিতে হলেও দুজনকেই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে, এমনটাই জানা যাচ্ছে তৃণমূল সূত্রে। তবে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি এবং বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে কিন্তু এখনও পর্যন্ত এমএলএ পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলা হয়নি। একইভাবে এখনও বিধায়ক রয়ে গিয়েছেন শিক্ষা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, বর্তমানের জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়।