কলকাতা: আপাতত স্থগিত সিভিক ভলান্টিয়ারদের (Civic Volunteer ) প্রাথমিক স্কুলে (Primary School) পড়ানোর সিদ্ধান্ত। বাঁকুড়া (Bankura) জেলা পুলিশের (Police) এই সিদ্ধান্তে গতকাল থেকে তোলপাড় গোটা রাজ্য। এই সিদ্ধান্ত ঘিরে রাজ্য সরকারের তোপের মুখে পড়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) বলেন, রাজ্য সরকার এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আর অগ্রসর না হওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, একটি বেসরকারি সংস্থার ‘অঙ্কুর’ প্রকল্প অনুযায়ী বাঁকুড়া জেলা পুলিশ বেশ কয়েকটি থানা এলাকায় প্রায় ১৫০টি স্কুলে প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের অঙ্ক ও ইংরেজি পড়ানোর জন্য সিভিক ভলান্টিয়ারদের দায়িত্ব দিতে চায়। এর জন্য সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। ওই স্কুলগুলিতে সাপ্লিমেন্টারি ক্লাসে সিভিক ভলান্টিয়াররা অঙ্ক এবং ইংরেজি পড়াবেন বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বাঁকুড়া পুলিশের ওই সার্কুলার তাঁর টুইটে পোস্ট করে লেখেন, রাজ্য সরকার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাই লাটে তুলে দিতে চাইছে। মাধ্যমিকে এবার চার লক্ষ পরীক্ষার্থী কমে গিয়েছে। স্কুল শিক্ষা দফতর ৮,২০৭টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুভেন্দু বলেন, এখন আবার সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে প্রাথমিক পড়ুয়াদের অঙ্ক ও ইংরেজি পড়ানোর ব্যবস্থা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:Health Department Issues Guideline for ARI | অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন মোকাবেলায় ফের নির্দেশিকা
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বাঁকুড়া জেলা পুলিশের ওই প্রকল্প নিয়ে শিক্ষামহলে ব্যপক আলোড়ন পড়ে। বিরোধী দলগুলি কড়া আক্রমণ করে রাজ্য সরকারকে। তৃণমূল সুত্রের খবর, শাসক দলের অন্দরেও বাঁকুড়া পুলিশের এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে অনেকেই কথা বলতে শুরু করেন। পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ওই প্রকল্প আপাতত স্থগিত। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের জন্য শিক্ষা দফতরের কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বিভাগীয় সচিবকে আগে অনুমোদন চাইতে হবে। সেই আবেদন প্রথমে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের কাছে পাঠাবে ওরা। তারা অনুমোদন দিলে ভাবা যেতে পারে। তবে আমি বলতে পারব না সিভিক ভলান্টিয়ারেরা পড়াতে পারবেন কি পারবেন না। এটা অ্যাকাডমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেবে।
এমনিতেই শিক্ষকের অভাবে গোটা রাজ্যে ধুঁকছে প্রচুর স্কুল। অনেক স্কুল বন্ধ যাওয়ার জোগাড়। তার মধ্যেই একের পর এক শিক্ষকের চাকরি বাতিল হচ্ছে আদালতের নির্দেশে। আদালতের কোপে পড়ে চাকরি যাচ্ছে বহু শিক্ষাকর্মীরও। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বহু শিক্ষাকর্তা ইডি বা সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে এখন জেল খাটছেন। শিক্ষকের অভাব নিয়ে বহুবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্টও। যেভাবে আদালতের নির্দেশে বেআইনিআভবে চাকরি পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের চাকরি চলে যাচ্ছে, তা নিয়ে আদালতকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মঙ্গলবারই আলিপুরে স্বাধীনতা সংগ্রামী অরবিন্দ ঘোষের সার্ধশতবর্ষ পূর্তির এক অনুষ্ঠান মঞ্চকেও তিনি ব্যবহার করেন চাকরি যাওয়া নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন প্রতিদিন তিন চার হাজার লোকের চাকরি চলে যাছে। ভুল হলে শুধরে নেওয়ার সময় দিন। দরকার হলে আবার পরীক্ষার ব্যবস্থা করুন। তবে দয়া করে কারও চাকরি খাবেন না। মুখ্যমন্ত্রী এই বক্তব্য নিয়ে বুধবারই আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রবীণ আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য। তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল।