কলকাতা: শিক্ষকের চাকরি নিয়ে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ বারবার উঠে এসেছে। সমতলের মতো পাহাড়েও বেআইনি ভাবে শিক্ষক নিয়োগের (Teacher Recruitment Scam) অভিযোগ ঘিরে সরগরম রাজনীতি। জল গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। বেআইনি নিয়োগ নিয়ে মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য আদালতে অভিযোগ করেন, স্কুল সার্ভিস কমিশন (West Bengal School Service Commission)-কে এড়িয়ে প্রায় ৭০০ শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে পাহাড়ে। তিনি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি বিশ্বজিত বসু জানান, এই মামলায় একাধিক মন্ত্রী এবং জিটিএ-র চেয়ারম্যান বিনয় তামাংয়েরও নাম জড়িয়েছে। কাজেই এটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। সোমবার ফের এই মামলার শুনানি হবে রুদ্ধদ্বার কক্ষে।
রাজ্যের আইনজীবী শীর্ষণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যের অনুমতিতেই ৩১৩ জনের নিয়োগ হয়েছে। এছাড়া আগেই রাজ্য সরকার ৪৩৯ জনের নিয়োগের অনুমতি দিয়ে্ছিল। ৩১৩ জনকে যখন নিয়োগ করা হয়, তখন আঞ্চলিক কমিশন কার্যকর ছিল না। পাহাড়ের বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, জিটিএ জমানায় পাহাড়ে বেআইনি ভাবে বহু শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে।
চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে মোটা টাকার লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। দিনের পর দিন ধরে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা বসে রয়েছেন রাস্তা। তাঁদের দাবি অযোগ্যরা চাকরি করছেন কিন্তু যোগ্যদের চাকরি মিলছে না। পাহাড়ে বেআইনি নিয়োগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিকাশ ভট্টাচার্য। তাঁর অভিযোগ পাহাড় এলাকায় প্রচুর বেয়াইনি নিয়োগ হয়েছে। এই বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন তিনি। বিকাশের মন্তব্য, এই বিষয়ে রাজ্যের যোগসুত্র যেনও না থাকে। যাতে সত্য বাইরে আসে এবং যোগ্যরা চাকরি পেতে পারে সেই দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: রাজ্য সঙ্গীতের অবমাননা, শুভেন্দু সহ ৬ বিজেপি সদস্যের বিরুদ্ধে প্রিভিলেজ
তবে এবার অযোগ্যদের চাকরি থাকবে কি না তা নিয়ে বিরাট প্রশ্নচিহ্ন উঠে গেল। ফের অযোগ্যদের চাকরি বাতিলের প্রসঙ্গ তুলে দিল হাইকোর্ট। পাহাড়ে এলাকায় বেআইনি নিয়োগ নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছিল। স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ করা হয়েছে ৭০০ জনের বেশি শিক্ষককের, এমনই অভিযোগ উঠেছিল। বিকাশ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তাপস কুমার বাগচি জিটিএর বিভাগীয় সেক্রেটারি জানিয়েছেন বেআইনি নিয়োগের ব্যাপারে।
মামলাকারী বিকাশ ভট্টাচার্যের স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ হওয়ার কথা কিন্তু পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ করে দেওয়ার অভিযোগের পাল্টা রাজ্যের আইনজীবী শীর্ষাণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্যের অনুমতিতেই ৩১৩ জনের নিয়োগ হয়েছে । এছাড়া ৪৩৯ জনের নিয়োগের অনুমতি দিয়েছিল রাজ্য আগেই । ৩১৩ জনের যখন নিয়োগ হয় সেই সময় আঞ্চলিক কমিশন কার্যকর ছিলনা যেকোনও কারনে।
এই মামলা সম্পর্কে রাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একটা অনুসন্ধান কমিটি ইতিমধ্যেই তৈরি করেছি এই বিষয় খতিয়ে দেখতে। সামগ্রিক মামলা খতিয়ে দেখে বিচারপতি অভিজিৎ বসু জানিয়েছেন, এই মামলায় একাধিক মন্ত্রী এবং বিনয় তামাঙের নাম জড়িয়ে রয়েছে। এই মামলাকে গুরুত্বপূর্ণ মামলা মন্তব্য করেছেন বিচারপতি বসু। আগামী সোমবার দুপুর ২টোয় এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। রুদ্ধদ্বার শুনানি হবে এই মামলার বলেই মত বিচারপতির।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের পার্বত্য এলাকার জন্য আঞ্চলিক স্কুল সার্ভিস কমিশন তৈরি করা হয়েছে গত জানুয়ারিতে। রাজ্যের শিক্ষা দফতরের তরফে নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, পাহাড়বাসীর দীর্ঘদিনের দাবি মেনে দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ের জন্য আলাদা ভাবে এই কমিশন কাজ করবে। কালিম্পঙের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিজয়কুমার রাইকে কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়েছে। মোট সাত সদস্যের কমিটি আগামী ২০২৮ সালের ২৪ জানুয়ারি অবধি কাজ করবে বলে জানিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর।
আরও খবর দেখুন