কলকাতা: কলকাতার বেহালার প্রবীণ নাগরিক ঝর্ণা চন্দ্র। পরিবার বলতে এক ছেলে এবং এক মেয়ে। মেয়ে বিবাহিত। ছেলে পার্থসারথি চন্দ্র ব্যবসায়ী। একই সঙ্গে বেহালার বাড়িতে ঝর্ণা দেবী, তাঁর ছেলে পার্থ ও বৌমা এবং দুই নাতি বসবাস করতেন। হঠাৎ মায়ের উপর অমানুষিক নির্যাতন অত্যাচার শুরু করেন ছেলে৷ অভিযোগ ঝর্ণা দেবীর। ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে স্থানীয় থানায় অভিযোগও জানিয়েছিলেন। কিন্ত পুলিসের সাহায্য না পেয়ে অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি।
২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর৷ বিচারপতি রাজশেখর মান্থা পুলিসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ছেলের পরিবারকে বাড়ি থেকে উৎখাত করতে হবে। আদালতের নির্দেশে পুলিস পার্থবাবুর স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর পার্থসারথি চন্দ্র নিজের পরিবার নিয়ে কলকাতার খিদিরপুর এলাকায় বসবাস শুরু করেন। পরবর্তীকালে পার্থসারথি বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্ত ও বিচারপতি রাজর্ষি ভারদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানান।
বুধবার মামলার শুনানি চলাকালীন পার্থবাবুর পক্ষের আইনজীবী দীপায়ন কুণ্ডু আদালতে দাবি করেন, পার্থবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন। আইনজীবীর আরও অভিযোগ ঝর্ণাদেবীর বিবাহিত কন্যা সম্পত্তির লোভে মাকে দাদার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করতে প্ররোচনা দিয়েছেন। পাশাপাশি আইনজীবী কুণ্ডুর দাবি পার্থবাবুর ছোট ছেলেকে বেহালার বাড়িতে তালা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
আদালতের প্রশ্নের উত্তরে সরকার পক্ষের আইনজীবী সীমান্ত কবির জানান, ছেলের বিরুদ্ধে মায়ের অভিযোগ সত্য। পুলিসি তদন্তে উঠে এসেছে, শুধু মাত্র মানসিক অত্যাচার নয়, মায়ের গায়ে থুতু দিতেও পিছুপা হননি ছেলে পার্থ৷ তাঁর বিরুদ্ধে পুলিস ভারতীয় ফৌজদারি ১০৭ ধারায় তদন্ত শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: Calcutta HC: কোন যুক্তিতে তিন সপ্তাহ পিছোল ভোট! আদালত অবমাননার নোটিস কমিশনকে
প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেন, মা ও ছেলে উভয়কেই হাইকোর্ট নিযুক্ত কাউন্সেলিং সেন্টারে ২৫ জানুয়ারি হাজির হতে হবে। সেখানে উপযুক্ত বিশেষজ্ঞদের মধ্যস্থতায় বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে। বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। আদালতের অন্তবর্তীকালীন নির্দেশের মধ্যে পুলিস পার্থসারথি চন্দ্রের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারবে না৷ মা ও ছেলের বিবাদ মেটাতে হাই কোর্টের এই উদ্যোগী ভূমিকা সমাজের কাছে উপযুক্ত বার্তা বহন করবে বলেই মনে করছেন আইনজীবী মহলের একাংশ।