কলকাতা: ‘ইগোর লড়াই দূরে রেখে সন্তানের কথা চিন্তা করুন৷ না হলে বিবাহ বিচ্ছেদের পর সমস্যা ভয়ঙ্কর হবে৷’ বৃহস্পতিবার হেভিয়াস কর্পাস মামলার শুনানিতে চিকিৎসক দম্পতি এভাবেই পরামর্শ দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি টিএস শিভগ্নম৷ বিচাপতি বলেন, ‘‘উচ্চ শিক্ষিত দম্পতিরা তাঁদের সন্তানের চিন্তাভাবনা না করে শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যে পারিবারিক লড়াই চালিয়ে গেলে কিছু বলার থাকে না। ইগোর লড়াই থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখে সন্তানের চিন্তাভাবনা করলে পারিবারিক বিবাদে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয় না।’’
বিচারপতি শিভগ্নমের আরও মন্তব্য, মা-বাবার বিবাহবিচ্ছেদের পূর্বে সন্তানরা একরকমের সমস্যার সম্মুখীন হন। বিবাহ-বিচ্ছেদের পরে তাঁদের সমস্যা আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে। সন্তানদের মানসিক অবস্থানের বিষয়টিকে মান্যতা দিয়ে আজ আদালত এই ধরনের মামলার বিচার করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
চিকিৎসক অর্ণবের সঙ্গে চিকিৎসক পারমিতার ১৭ বছর আগে বিবাহ হয়(পরিবর্তিত নাম)। পারমিতার বাড়ি ভোপাল এবং অর্ণবের বাড়ি কলকাতায়। অর্ণব অর্থপেডিক৷ আর পারমিতা গাইনো চিকিৎসক। তাঁদের এক ছেলে৷ যার বর্তমান বয়স ১৩ বছর। পারমিতা ছেলেকে নিয়ে বর্তমানে ভোপালে থাকেন। ছেলের কোনও খোঁজ না পাওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টে দ্বারস্থ হন চিকিৎসক অর্ণব। মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি টি এস শিভাগ্নম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্য লক্ষ্য করেন, দম্পতির মধ্যে পারিবারিক সমস্যাই প্রধান কারণ। আদালত নির্দেশ দেয় দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়ে কাউন্সেলিং করতে হবে। যাতে তাঁদের নিজেদের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়। বৃহস্পতিবার আদালতে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রায় ১৫ বার তাঁদের বসানো হয়েছে৷ কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। শুনে বিস্মিত হন বিচারপতিরা।
আরও পড়ুন-Calcutta High Court: আরও চার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ আদালতের
এরপরই আদালতে উপস্থিত চিকিৎসক অর্ণবের প্রতি বিচারপতি টিএস শিভগ্নমের মন্তব্য, আপনারা সন্তানের কথা ভাবুন। বর্তমানে সমাজের কি হাল! শিক্ষিত দম্পতিরাও তাঁদের সন্তানের কথা চিন্তা ভাবনা করছেন না। দম্পতিদের মধ্যে বিবাদ সংক্রান্ত মামলার পাহাড় জমছে আদালতে। সেই মামলা বিচার করতে করতে আদালত নাজেহাল হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি বারবার দম্পতিদের একসঙ্গে বসিয়ে তাঁদের সমস্যার সমাধান করতে। যাতে তাঁরা সুখে শান্তিতে সংসার করতে পারেন। তাঁদের সন্তানেরা যেন কোনোভাবেই তাঁদের এই সমস্যার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কিন্তু আমাদের এই প্রচেষ্টার কথা তাঁরা উপলব্ধি করতে পারছেন না। খুব দুঃখজনক। চিকিৎসক অর্ণব ও ও পারমিতা প্রতি আদালতের নির্দেশ আপনারা সন্তানের কথা ভেবে পুনরায় চিন্তা ভাবনা করুন৷ আগামী বৃহস্পতিবার আপনাদের সিদ্ধান্তের কথা আদালতকে জানান।