কলকাতা: আগামিকাল মঙ্গলবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishik Banerjee) ফের ইডি তলব করেছে। শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে তাঁকে হাজিরা দেওয়ার জন্য নোটিস দিয়েছে ইডি (ED)। অভিষেক অবশ্য সেদিনই জানিয়েছেন, তিনি হাজিরা দেবেন না। তৃণমূল নেতা বলেন, আমি কারও ক্রীতদাস নই। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। ৮ জুলাই ভোট মিটলে যাব।
ইডি সূত্রের খবর, সোমবার বিকেল পর্যন্ত অভিষেকের তরফে তাদের কাছে সরকারিভাবে কোনও জবাব আসেনি। সেই কারণে ইডির আধিকারিকরা ধরে নিচ্ছেন, মঙ্গলবার তৃণমূল নেতা হাজিরা দেবেন। সেটা মাথায় রেখেই ইডির অফিসাররা প্রশ্নমালা তৈরি রাখছেন। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বেলা একটা পর্যন্ত ইডির অফিসাররা অপেক্ষা করবেন। তার মধ্যে তিনি না এলে দিল্লির কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করা হবে। ইডির পদস্থ কর্তারা আইনি পরামর্শও নিয়ে রাখছেন। অভিষেক না এলে কী করা হবে, সে ব্যাপারে এদিন কলকাতার ইডি অফিসাররা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন।
গত ২০ মে প্রায় দশ ঘণ্টা অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে জেলবন্দি বহিষ্কৃত তৃণমূল যুবনেতা কুন্তল ঘোষের চিঠির সূত্রে অভিষেককে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কুন্তল প্রেসিডেন্সি জেল থেকে হেস্টিংস থানাকে চিঠি লিখে জানান, নিয়োগ-কাণ্ডে অভিষেকের নাম বলানোর জন্য তাঁর উপর কেন্দ্রীয় এজেন্সি চাপ দিয়েছে। একই ধরনের চিঠি কুন্তল পাঠান আলিপুরে নিম্ন আদালতের বিচারকের কাছেও। এছাড়া আদালতে যাতায়াতের পথেও তিনি একাধিকবার এই অভিযোগ করেন সাংবাদিকদের কাছে।
গত ২৯ মার্চ শহীদ মিনার ময়দানে তৃণমূলের এক সভায় অভিষেক জানান, সারদা-কাণ্ডে ধৃত কুণাল ঘোষ, মদন মিত্রকেও তাঁর নাম বলানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। তারপরই কুন্তল চিঠি লেখেন। বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। কলকাতা হাইকোর্ট বলে, অভিষেকের বক্তব্যের সঙ্গে কুন্তলের চিঠির কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় এজেন্সি অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান অভিষেক। সুপ্রিম কোর্ট হয়ে সেই মামলা ফিরে আসে কলকাতা হাইকোর্টে। বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাস বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশই বহাল রাখে। তারপরই ২০ মে অভিষেককে তলব করা হয়।
আরও পড়ুন: Panchayat Election 2023 | মনোমনয়ন পর্বে অশান্তি, বাঁকুড়ায় আক্রান্ত সায়ন্তিকা
সম্প্রতি কয়লা-কাণ্ডে ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করে অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেদিনই ১৩ জুন ফের হাজিরা দেওয়ার জন্য অভিষেককে নোটিস পাঠানো হয়। তাতে চটে যান তৃণমূল নেতা। তিনি বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশে তাঁকে হেনস্তা করার জন্য বারবার ডাকা হচ্ছে আমাকে। সাহস থাকলে ওরা আমাকে গ্রেফতার করুক।
অভিষেকের সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্স সংস্থার প্রাক্তন অধিকর্তা জেলবন্দি সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকেও সিবিআই শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে গ্রেফতার করেছে। তিনি গ্রেফতার হওয়ার আগে দাবি করেছিলেন, অভিষেক তাঁর বস। তাঁকে কেউ ছুঁতে পারবে না। আগামী ১৪ জুন ফের সুজয়কে আদালতে হাজির করানোর কথা। তার আগের দিনই অভিষেককে তলব করা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। অভিষেকের সঙ্গে সুজয়ের সম্পর্ক কতটা গভীর, তা জানার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি।