আমেদাবাদ: ওরা থাকে ওধারে। না, সিনেমার ঘটি-বাঙাল ভাড়াটে নয়। ২০ ফুট পাঁচিলের একধারে থাকে হিন্দুরা (Hindu)। অন্যধারে থাকে মুসলিমরা (Muslim)। একধারে অট্টালিকার মতো বাড়ি, আবাসন। অন্যদিকে, ঘিঞ্জি বস্তি (Ghetto), জল জমা কাদামাখা গলি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। কেউ কারও সুখে-দুঃখে মেশে না। সম্পূর্ণ এক আলাদা পৃথিবী। মাঝখানে শুধু ইটের পাঁচিলের উপরে কাঁটাতারের বাঁধা। এইভাবেই চলছে বছরের পর বছর। ভোট আসে, ভোট যায়, এতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন আমেদাবাদের (Ahmedabad) জুহাপুরার (Juhapura) মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভাষণ শুনলে আজ যাঁদের সারা শরীর রি-রি করে ওঠে।
১৯৮৫ সালের দাঙ্গার পরের বছর তৎকালীন কংগ্রেস (Congress) সরকার একটা অর্ডিন্যান্স জারি করে। ১৯৯১ সালে সেটা উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা আইন (Disturbed Areas Act, 1991) হিসেবে পরিণত হয়। এই তালিবানি আইনে আমেদাবাদের জুহাপুরে মুসলিম মহল্লাকে নিজ ভূমে পরবাসী করে রাখা হয়ে। দেশের বৃহত্তম এই মুসলিম বস্তিকে গোটা শহরের থেকে আলাদা করে হিন্দু প্রতিপত্তি বিস্তার হয় শুধুমাত্র তারা বিধর্মী বলে।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: আমি লক্ষ্য করছি, আর দেখছি, কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর
গুজরাতে (Gujarat Vote 2022) ফের একটা ভোট যখন এসে দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন কী ভাবছেন মুসলিম মহল্লার মানুষজন? ৫৫ বছরের হাজি নামে এক প্রৌঢ় বললেন, কোনও শহরে এরকম মহল্লা ভাগ করে দেওয়া দেওয়াল আপনি দেখেছেন? শুধু একই দেশ, রাজ্য নয়, একই শহরে থাকি আমরা। সংকীর্ণ গলিপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তিনি চোখে আঙুল দিয়ে হিন্দু ও মুসলিম মহল্লার বিভেদ দেখাতে থাকলেন।
হাজির কথায়, এই বস্তির অধিকাংশ লোকই হয় অটো রিকশ চালক, নয়তো জনমজুরি করে। যদিও ওরা আমাদের পরোয়া করে না, আমরাও ওদের তোয়াক্কা করি না। আমাদের মধ্যে কোনওদিন কোনও সম্পর্ক ছিল না, আজও নেই। উৎসবেও আমাদের মধ্যে কোনও হেলদোল আসে না। স্থানীয় কর্পোরেশন স্কুলের প্রধান শিক্ষক রহিম জানালেন, আমার ছোটবেলায় এই পাঁচিল ছিল না। আমরা হিন্দু-মুসলমানরা একসঙ্গেই খেলতাম। আমি তো নিজের ঘরের বেশি হিন্দু এক বন্ধুর বাড়িতেই বেশি সময় কাটাতাম। আর এখন আমার ছেলেমেয়েরা দেওয়ালিতেও ওধার মাড়ায় না। ওধারে যাওয়ার অধিকার নেই।
আমিনা নামে এক বৃদ্ধার কথায়, প্রতিবছর বৃষ্টিতে আমাদের বস্তির সব গলি একহাঁটু জলে ডুবে যায়। ঘরে জল ঢুকে জমে থাকে ৮-১০ দিন। বেহাল নিকাশি শুধু এখানেই নয়, শহরের অন্যান্য মুসলিম মহল্লা যেমন রাখিয়াল, বাপু নগর, ভাটোয়াতেও। এছাড়া রয়েছে পানীয় জলের সমস্যা। কবরস্তানের অভাব দেখা দিয়েছে কোভিডের পর থেকে। নতুন কবরস্তানের জন্য জায়গা চেয়ে বহু অনুরোধ-উপরোধ করা হলেও তা এখনও জোটেনি বস্তিবাসীর কপালে।
স্থানীয়রা জানালেন, সকালে একটা ময়লার গাড়ি এলেও তা হিন্দু এলাকায় ঘুরে চলে যায়। মুসলিমদের আবর্জনা ফেলতে হয় কাছের একটি পরিত্যক্ত জমিতে। অনিতা নামে এক দলিত মহিলা, মুসলিমদের সঙ্গেই থাকেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) তো সবসময় গুজরাতের উন্নতির কথা বলেন। তাহলে আমরা কেন এখনও অনুন্নয়নের অন্ধকারেই পড়ে আছি। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্রের হর ঘর নল যোজনার সুফল আমরা পাইনি। সমাজকর্মীরা এটা নিয়ে আদালতে গেলেও এখনও কোনও সুরাহা হয়নি।