skip to content
Friday, June 28, 2024

skip to content
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | বজরং দল, বজরংবলী আর সোনার মেডেল পাওয়া কুস্তিগিরের দল...

Fourth Pillar | বজরং দল, বজরংবলী আর সোনার মেডেল পাওয়া কুস্তিগিরের দল   

Follow Us :

দেশের প্রধানমন্ত্রী খুল্লমখুল্লা অপরাধীদের পক্ষে। হ্যাঁ, এটাই সত্যি। এত নগ্নভাবে হিংসাকে প্রশ্রয় দিতে, এত নগ্নভাবে নারীদের উপর অত্যাচারকে প্রশ্রয় দিতে এর আগে কোনও প্রধানমন্ত্রীকে দেখা যায়নি। সমস্ত আড়াল, সমস্ত মুখোশ খুলে ফেলে এক উলঙ্গ রাজা আজ আমাদের সামনে। ব্রিজভূষণ শরণ সিং, বিজেপি সাংসদ সেই উত্তরপ্রদেশের ক্যায়সারগঞ্জ থেকে। যে উত্তরপ্রদেশে নাকি অপরাধীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগী। বিচারের আগেই এনকাউন্টার বা পুলিশি পাহারায় খুন করা হচ্ছে অভিযুক্তদের যে রাজ্যের বাহুবলীদের সেই রাজ্যেই এক সাংসদের বিরুদ্ধে অলিম্পিক্সে যাঁরা দেশের হয়ে সোনার মেডেল পেয়েছিল, সেই বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগত। বিনেশ ফোগত কমনওয়েলথ আর এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছিলেন। টোকিও অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ এনেছিলেন, সাক্ষী মালিক ২০১৬-র সামার অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। এঁরা দিল্লির যন্তর মন্তরের ধরনায় বসে আছেন বেশ কিছুদিন ধরে। ওনাদের অভিযোগ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে, ভারতীয় কুস্তিগির সংগঠনের এই কর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যৌন নিপীড়নের, কারা অভিযোগ আনছেন? দেশের হয়ে যাঁরা কুস্তিতে আন্তর্জাতিক সম্মান এনে দিয়েছেন। এবং এই প্রথম তাঁরা ধরনায় বসলেন তাও নয়, এর আগেই তাঁরা ধরনায় বসেছেন, সরকারের কাছে আশ্বাস পেয়ে ধরনা তুলে নিয়েছেন। কিছুই হয়নি, আবার তাঁরা ধরনায় বসেছেন। 

এবার মাঝরাতে মদ্যপ পুলিশরা গিয়ে হামলা চালাচ্ছে, এটাও অভিযোগ ওই কুস্তিগিরদেরই, যাঁরা দেশকে সোনা রুপো ব্রোঞ্জ এনে দিয়েছেন। এদিকে যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন কি বাতে স্লোগান দিলেন বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, তিনি চুপ করে বসে আছেন। এক বাহুবলীর বিরুদ্ধে পকসোতে মামলা দায়ের করা হয়েছে, তাঁকে এখনও গ্রেফতার করা হচ্ছে না, তিনি সমর্থক সঙ্গীদের নিয়ে চলে গেলেন অযোধ্যায়। সেখানে ফুল ছড়ানো হল তাঁর মাথায়, সমবেত ভক্তরা স্লোগান দিলেন, জয় বজরংবলী, জয় শ্রীরাম, ব্রিজভূষণ শরণ সিং মিডিয়ার সামনে তাঁর শক্তি দেখাচ্ছেন। সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগত, বজরং পুনিয়া রাস্তায়, মঞ্চে দেশের ‘পরধান সেভক’ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন জয় বজরংবলী কি। এর আগে কখনও শুনেছেন মোদিজীর গলায়?  তিনি ভোটের জন্য এতদিন জয় শ্রীরাম বলতেন, সেদিন কর্নাটকে নির্বাচনী জনসভায় বজরংবলী কি জয় বললেন। কেন বললেন? আমরা সবাই জানি যে মোদিজি এমনি এমনি কিছুই বলেন না, আর ভোটের জন্য সব কিছুই বলতে পারেন। ধরুন ক’দিন আগে থেকেই মোদিজির গলায় পসমন্দা মুসলমানদের জন্য দরদ উথলে উঠছে। কারা এই পসমন্দা মুসলমান? এঁরা হলেন মুসলমানদের মধ্যেও সেই অংশ যাঁরা ঐতিহসিকভাবেই পিছিয়ে পড়া মানুষ জন, অত্যন্ত দরিদ্র মানুষজন। ধর্মে সবার অধিকার সমান একথা বলার পরেও প্রত্যেক ধর্মেই পিছিয়ে পড়া মানুষ আছে, সেই ধর্মেরই নিচু শ্রেণির মানুষজন আছেন, যাঁদের বেশিরভাগ মানুষ হলেন আসলে দরিদ্র, ভীষণ গরিব। তো এই পসমন্দা মুসলমানদের জন্য মোদিজির ভীষণ দুঃখ, সে সব দুঃখ ছিল উত্তর ভারতের জন্য। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | কর্নাটক কোন দিকে?    

কিন্তু ওনারই দলের মুখ্যমন্ত্রী কর্নাটকের বাসবরাজ বোম্মাই নির্বাচন ঘোষণার কদিন আগে এই অনগ্রসর মুসলমানদের জন্য ৪ শতাংশ সংরক্ষণ তুলে দিয়ে সেই সংরক্ষণে ২ শতাংশ লিঙ্গায়েত, ২ শতাংশ ভোক্কালিগাদের দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন যা পরবর্তীকালে আদালতের রায়ে স্থগিত আছে। আমরা সেদিন আমাদের চায়-ওয়ালা চৌকিদারের কাছে একটা কথাও এ নিয়ে শুনিনি, কারণ কর্নাটকে হিন্দু ভোটের মেরুকরণই বিজেপির লক্ষ। এই আরএসএস–বিজেপির মানুষজন গোয়া কিংবা মেঘালয়ে গিয়ে একবারও গোহত্যা, গোমাংস নিয়ে একটা কথাও বলে না, বলে উত্তর ভারতে, হালাল হিজাবের বিতর্ক তুলছে কর্নাটকে। মানে আরএসএস–বিজেপি মোদি–শাহ ভোটের জন্য পারে না এমন কাজ নেই। সেই প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ গলার শিরা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন বজরংবলী কি জয়। কেন? কারণ কংগ্রেস দল তাদের ম্যানিফেস্টোতে বলেছে, তারা ক্ষমতায় আসলে দেশের ইসলামিক টেররিস্ট অর্গানাইজেশন পিএফআই এবং হিন্দু টেররিস্ট অর্গানাইজেশন বজরং দলকে প্রয়োজনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে। মাথায় রাখুন খুব যত্ন করেই ম্যানিফেস্টোতে প্রয়োজনে কথাটা লেখা আছে। আচ্ছা এই বজরং দল কি তেমন একটা দল যাকে প্রয়োজনে ব্যান করা উচিত? তথ্য বলছে বাবরি মসজিদ ভাঙার পরেই কংগ্রেস সরকার বজরং দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। অশান্তি ছড়ানো, দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগের সঙ্গেই ওই বাবরি মসজিদ ভাঙার অপরাধেই বজরং দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। একটা দল যারা নিয়মিত দাঙ্গা বাঁধায়, যারা দাঙ্গায় উসকানি দেয়, যাদের এক কলঙ্কিত ইতিহাস আছে, এক জঙ্গি ইসলামিক সংগঠনের সঙ্গেই তাদেরকেও প্রয়োজনে ব্যান করা হবে বলে কংগ্রেস ম্যানিফেস্টোতে বলা হল। অমনি কেজরিওয়ালের ভাষায় চৌথি পাস পরধানমন্ত্রী সভাতে স্লোগান দিলেন বজরংবলী কি জয়। 

কেউই কে নেই যিনি এই উলঙ্গ রাজাকে গিয়ে বলবেন যে স্যর, বজরংবলী আর বজরং দল এক নয়। তিনি কেবল স্লোগান দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনি বলেছেন ওরা রামকে অপমান করেছিল, এখন বজরংবলীকে অপমান করতে চাইছে। অতএব যাঁরা বজরংবলীকে মানেন তাঁরা ওদেরকে শাস্তি দেবে। ক্লিয়ার অ্যান্ড লাউড মেসেজ, হিন্দুরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট দিন, কারণ কংগ্রেস বজরংবলীকে অপমান করেছে। অর্থাৎ মামাদের পরধান সেভক আমাদের জানাচ্ছেন যে বজরং দল হল বজরংবলীর ভক্ত, তাই তাদের পক্ষে দাঁড়ান। আসুন এই বজরংবলীর কিছু কুখ্যাত কাজের কথা মনে করিয়ে দিই। প্রতি বছর উত্তর ভারতে নিয়ম করে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে পার্কে, পাবে, সিনেমা হলের সামনে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীদের একসঙ্গে দেখলেই লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে, তাদের মা বাবাকে ডেকে এনেছে, পাবলিক প্লেসে দাঁড় করিয়ে কানধরে ওঠবোস করিয়েছে, মরাল পুলিশিং এদের কাজ। এই বজরং দলকে ১৯৯২-এ বাবরি মসজিদ ভাঙার অভিযোগে ব্যান করা হয়েছিল। ১৯৯৮তে দক্ষিণ পূর্ব গুজরাতে ডজনখানেকেরও বেশি চার্চ পুড়িয়েছিল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই দাঙ্গার বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছে। ২০০৮-এ ওড়িশার কান্ধামালে সরকারি হিসেবেই ৩৯ জন ক্রিস্টানকে খুন করা হয়, অসংখ্য চার্চ ভাঙা হয়, সংখ্যাটা কমবেশি ৩০০ বলে সরকারের হিসেব। এই কান্ধামালের দাঙ্গার পুরোভাগে ছিল বজরং দল। এর আগে ২০০৩-এ ফাদার গ্রাহাম স্টেইন এবং তাঁর দুই শিশুসন্তানকে গাড়ির মধ্যে আটকে রেখে আগুন দিয়ে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়। বজরং দলের নেতা দারা সিং এই হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত এবং শাস্তিপ্রাপ্ত অপরাধী। এই বজরং দল ২০০৮-এ কর্নাটকে নিউলাফ ক্রিস্টান চার্চগুলোকে পোড়ায়, ভাঙে, চার্চের ফাদারদের মারে। ২৪ জানুয়ারি ২০০৯-এ ম্যাঙ্গালোরে দু’জন নান ধর্ষিতা হন, এই ঘটনাতেও বজরং দল মূল অভিযুক্ত। উত্তর ভারতে যে পরপর গোহত্যা, গোমাংস বিক্রির অভিযোগে মানুষ পিটিয়ে খুন করা হচ্ছে, সেই ঘটনাগুলোর প্রত্যেকটার সঙ্গে এই বজরং দলের কর্মীরা জড়িত। হাথরসে ধর্ষণ এবং খুনের পর এই বজরং দলের কর্মীরা বিজেপি কর্মীরা মিলে অভিযুক্তদের সমর্থনে মিছিল করেন। গুজরাত দাঙ্গার বহু রিপোর্টে বার বার এই বজরং দলের নাম উঠে এসেছে। বিলকিস বানো ধর্ষণ ও খুনের মামলায় অপরাধী বলে ঘোষিত মানুষজনদের যখন গুজরাত আদালতের নির্দেশেই ছেড়ে দেওয়া হল তখন ওই অপরাধীদের মিষ্টি আর গাঁদাফুলের মালা দিয়ে স্বাগত জানাতে দেখা গেছে এই বজরং দলের নেতাদের। 

সেই বজরং দলকে প্রয়োজনে, হ্যাঁ, প্রয়োজনে ব্যান করার কথা বলেছে কংগ্রেস দল তাদের ম্যানিফেস্টোতে। পরদিনই বজরং দল সারা দেশে তাদের প্রতিবাদ নিয়ে মাঠে নেমেছে এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন বজরংবলী কি জয়। এক ঘৃণ্য অপরাধী সংগঠনকে বাঁচানোর জন্য কোট আনকোট ভগবানকেও সামনে রাখতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর। কুস্তিগিরেরা আখাড়াতে ভগবান বলতে ওই এক বজরংবলীর পুজো করেন। সেই কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্তা করছেন বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ সিং যিনি লাল্লনটপ-এর ক্যামেরার সামনেই মানুষ খুন করেছেন বলেও দাবি জানাতে পিছপা হননি, সেই তার বিরুদ্ধে পকসো আইনে এফআইআর হল। তিনি গ্রেফতার হননি, উল্টে অযোধ্যায় রামমন্দির দর্শনে গিয়েছেন। দেশের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার মঞ্চ থেকে সোনা রুপো ব্রোঞ্জ আনার পরে সেই সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগত, বজরং পুনিয়া বিচারের দাবিতে রাস্তায় আর দেশের চায়ওয়ালা কাম চৌকিদার নির্বাচনী সভায় চিৎকার করছেন বজরংবলী কি জয়। এ কোন দেশে আছি আমরা?

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Rahul Gandhi | স্পিকার ওম বিড়লাকে কী কথা বললেন রাহুল গান্ধী?
03:31:46
Video thumbnail
Mamata Banerjee | পুলিশ-পুরসভাকে কড়া বার্তা, কী কী বললেন?
01:00:15
Video thumbnail
Mamata Banerjee | রাজ্যপালের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে মেয়েরা! এ কী বললেন মমতা?
01:26:41
Video thumbnail
Mamata Banerjee | মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জয়েন্ট ইনসপেকশন কাদের নির্দেশ? কী কী নির্দেশ?
34:06
Video thumbnail
Mamata Banerjee | ১টা রাস্তা ৫ বছর চলে না কেন? প্রবল ক্ষুব্ধ মমতা
26:01
Video thumbnail
Mamata Banerjee | রাস্তায় আবর্জনা ফেলা যাবে না আর কী কী বললেন মমতা?
36:06
Video thumbnail
Mamata Banerjee | জবরদখল দেখলে গ্রেফতার কাউকে ছাড় নয়
24:16
Video thumbnail
Mamata Banerjee | মন্ত্রীদের কী কী বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
02:16:51
Video thumbnail
Mamata Banerjee | হকার উচ্ছেদ আমার লক্ষ্য নয়, বললেন মমতা
22:05
Video thumbnail
Mamata Banerjee | নেতাদের কথায় ক্রস চেক হবে না বিরাট মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর
31:51