কলকাতা: সিবিআই হেফাজতে বগটুইকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত লালন শেখের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে রামপুরহাট থানায়। সেই ঘটনায় এবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ সিবিআই। রাজ্য পুলিশের এফআইআরকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ সিবিআই। প্রসঙ্গত, ওই এফআইআরে নাম রয়েছে সিবিআইয়ের ডিআইজি, এসপি সহ সাতজন আধিকারিকের।
এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর দৃষ্টি আকর্ষণ সিবিআইয়ের। আজ, বুধবারই শুনানির আবেদন সিবিআইয়ের। সিবিআইয়ের দাবি, এটা আত্মহত্যার ঘটনা। মামলার তদন্তকারী অন্য আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও এফআইআর করা হয়েছে বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের। এর ফলে তদন্তকারী আধিকারিকরা খানিকটা চাপের মধ্যে রয়েছেন, দাবি সিবিআইয়ের। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিচারপতি জানিয়েছেন, আজ দুপুর ৩টায় শুনানি।
আরও পড়ুন: CBI Custodial death: লালনের স্ত্রীর অভিযোগে সিবিআইয়ের ৭ আধিকারিকের নামে খুনসহ মামলা দায়ের
প্রসঙ্গত, সিবিআই হেফাজতে বগটুইকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত লালন শেখের মৃত্যুর ঘটনায় তার স্ত্রী খুনের অভিযোগ তুলেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে সিবিআইয়ের ৭ জন আধিকারিকের নামে খুনের ধারায় এফআইআর হয়েছে রামপুরহাট থানায়। প্রসঙ্গত, সিআইডি এই মামলার তদন্ত করবে। ইতিমধ্যেই সিআইডির ৫ সদস্যের টিম রামপুরহাটে পৌঁছেছে।
উল্লেখ্য, লালনের স্ত্রী রেশমা বিবির অভিযোগ, সিবিআই তাকে দিয়ে জোর করে কথা আদায় করতে মারধর করেছে। তাতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর স্বামীর। সেই অভিযোগের উপর ভিত্তি করে সিবিআইয়ের ডিআইজি, এসপি সহ ৭ জন আধিকারিকের নামে খুন আরও ৯টি ধারায় মামলা রুজু হয়েছে রামপুরহাট থানায়। ইতিমধ্যেই এই মামলা রামপুরহাট মহকুমা আদালতের এসিজেএমে এজলাসে পাঠানো হয়েছে।
মামলা চেপে দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে সিবিআই ৫০ লক্ষ টাকা চেয়েছিল বলে বিস্ফোরক দাবি করেন লালন শেখের স্ত্রী রেশমা বিবি। মঙ্গলবার রামপুরহাটে সিবিআইের অস্থায়ী শিবিরের সামনে বিক্ষোভ চলাকালীন রেশমা এই অভিযোগ করেন। তিনি তিন পাতার দীর্ঘ অভিযোগ করেছেন স্থানীয় থানায়।
রেশমার অভিযোগ, সিবিআই অফিসাররা আমার বাড়িতে এসে হার্ড ডিস্কের খোঁজ করেন। তাঁরা বলেন, হয় হার্ড ডিস্ক দে, নয় ৫০ লক্ষ টাকা দে। সব সেটল করে দেব। রেশমা আরও বলেন, ওরা বলেন, তোর ছেলেকেও শেষ করে দেব। আজ বারোটার পর খেলা দেখবি। রেশমার অভিযোগ, তাঁর স্বামীকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ৩০২ ধারায় খুনের মামলা রুজু করে।
সোমবার সন্ধ্যায় রামপুরহাটে সিবিআইয়ের অস্থায়ী শিবিরের শৌচালয়ে লালনের ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। গত ২১ মার্চ রাতে বগটুইয়ে তৃণমূলের উপ প্রধান ভাদু শেখ খুন হওয়ার পর গ্রামে তাণ্ডব চলে। গ্রামে অনেক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন গ্রামের একটি বাড়ি থেকে দশজনের পোড়া দেহ মেলে। ওই ঘটনায় নাম জড়ায় ভাদু ঘনিষ্ঠ লালনের। গত ৩ ডিসেম্বর সিবিআই লালনকে গ্রেফতার করে। তারপর থেকে তিনি রামপুরহাটে সিবিআইয়ের হেফাজতেই ওই অস্থায়ী শিবিরে ছিলেন।
এই ঘটনায় সিবিআই অস্বস্তিতে পড়েছে। দিল্লির সদর দফতর থেকে কলকাতায় সিবিআই কর্তাদের কাছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট তলব করেছে। দিল্লি থেকে সিবিআইয়ের কয়েক জন পদস্থ কর্তা বীরভূমে আসেন।