কলকাতা: পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayet Vote 2023) মুখেই জাতীয় দলের মর্যাদা খোয়াল তৃণমুল কংগ্রেস (TMC)। বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক সিপিআই এবং শরদ পাওয়ারের এনসিপির (NCP)-ও জাতিয় দলের তকমা প্রত্যাহার করে নিল নির্বাচন কমিশন। তবে জাতীয় দলের মর্যাদা পেয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। সোমবার (Monday) নির্বাচন কমিশন এ কথা জানিয়েছে।এই মুহূর্তে আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে আম আদমি পার্টিই দু’টি রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় রয়েছে।
তৃণমূল জাতীয় দলের তকমা হারানোয় কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার টুইটে লেখেন, তৃণমূল এখন শুধুই একটি আঞ্চলিক দল। তৃণমুলকে বড় করার ব্যাপারে দিদির আশা আর বাস্তব রূপ নেবে না। কারণ, মানুষ জেনে গিয়েছে তৃণমূল আদ্যন্ত একটি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ভয়ঙ্কর দল। রাজ্যের মানুষ এই দলকে আর বেশি দিন সহ্য করবে না। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও টুইটে লেখেন, ত্রিপুরার ভোটের পরই আমি এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম।
আরও পড়ুন: Calcutta High Court | রামনবমীর মিছিল ঘিরে হিংসা, এনআইএ ছাড়া তদন্ত সম্ভব নয়, মত বিচারপতির
পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগেই জাতীয় দলের মর্যাদা হারানো তৃণমূলের কাছে একটা বড় ধাক্কা। আগামী বছর লোকসভা নির্বাচন। সেই ভোটকে সামনে রেখে যখন জাতীয় স্তরে বিরোধী জোট বা বিরোধী শক্তির অন্যতম মুখের দাবিদার তৃণমুল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখনই যেন মাথায় বাজ পড়ল তৃণমূলের। সম্প্রতি মনিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডের ভোটে লড়াই করে তৃণমূল জাতীয় স্তরে গুরুত্ব পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মেঘালয় ছাড়া আর কোথাও তারা কোনও চাপই ফেলতে পারেনি। মুখ থুবড়ে পড়েছে ত্রিপুরাতেও।
২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অরুণাচল ও মনিপুরে রাজ্য দল হিসেবে স্বীকৃত হওয়ায় নির্বাচন কমিশন তৃণমূলকে জাতীয় দলের মর্যাদা দেয়। কিন্তু মাত্র সাত বছরের মধ্যেই সেই মর্যাদা হারাতে হল তৃণমূলকে। অথচ সদ্য অনুষ্ঠিত উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির ভোটে তৃণমুল নেতারা দাবি করেছিলেন, আগামী দিনে জাতীয় স্তরে তাদের গুরুত্ব বাড়তে চলেছে। কমিশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূল কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরে তৃণমূলের বক্তব্য জানানো হবে।
নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় দলের মর্যাদা পেতে গেলে তিনটি শর্তের অন্তত একটি পূরণ করতে হয়। প্রথমত, লোকসভায় অন্তত চারটি রাজ্যে কোনও দলকে ছয় শতাংশ ভোট পেতে হবে। দ্বিতীয়ত, লোকসভায় তিনটি রাজ্য থেকে অন্তত ১১টি আসন পেতে হবে। আগের জেতা আসনের অন্তত চারটিতে ফের জয়ী হতে হবে। তৃতীয়ত, অন্তত চার রাজ্যে রাজ্য দলের তকমা পেতে হবে।
গুজরাতের ভোটে এই তৃতীয় শর্তটি পূরণ করতে পেরেছে আম আদমি পার্টি। কোনও রাজ্যে রাজ্য দলের তকমা পেতে গেলে বিধানসভা নির্বাচনে ছয় শতাংশ ভোট এবং দু’টি আসন পেতে হবে। দিল্লি এবং পঞ্জাবের শাসক আপ গোয়ার বিধানসভা ভোটেও ছয় শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। হাল খারাপ শরদ পাওয়ারের এনসিপির-ও। জাতীয় স্তরে এনসিপি যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।এই মুহূর্তে বিজেপি বিরোধী শক্তির মধ্যে এনসিপির নামও তালিকার উপরের দিকেই রয়েছে। জাতীয় দলের তকমা হারানো এই বৃদ্ধ বয়সে পাওয়ারের পক্ষেও বিশাল ধাক্কা বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল।