কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: শুরুটা হয়েছিল সকালবেলা। সময় গড়িয়েছে। টাকার অঙ্ক বেড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সংবাদমাধ্যমের লড়াই। এক একটি সংবাদমাধ্যম এক এক পরিমাণ টাকার পাহাড়ের হদিশ দেওয়ার লড়াইয়ে যেন নেমে পড়ে মুহূর্তে। কিন্তু, আসলে কত টাকা উদ্ধার করল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি?
বিষয়টা একটু খোলসা করা যাক। গার্ডেনরিচ এলাকার এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বহু কোটি টাকা। পরিবহণ ব্যবসায়ী নিসার আহমেদ খান এবং আমির খানের বাড়িতে আনা হয় আটখানা টাকা গোনার যন্ত্র। পৌঁছে যান স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিকরা। ইডি-র তল্লাশির ফলেই উদ্ধার হয় বহু কোটি টাকা।
এতদূর পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কলকাতা শহর এবং রাজ্যের বহু মানুষের কৌতূহল তুঙ্গে উঠতে শুরু করে। ঠিক কত টাকা উদ্ধার হল তা নিয়ে শুরু হয় ফিসফিসানি। বেশ কিছুক্ষণ হিসেবের পর ইডি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায় সাত কোটি টাকার বেশি উদ্ধার হয়েছে। একইসঙ্গে জানানো হয়, টাকা গোনার কাজ চলছে। পরিমাণ নিশ্চিত করে বলা যাবে গোনা সম্পূর্ণ হলেই।
কিন্তু, ততক্ষণে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম দেখিয়ে দিয়েছে টাকার অঙ্ক ১৪ কোটি। কেউ কেউ বলছে তারও বেশি। রিপাবলিক বাংলা, টিভি নাইন বাংলা, ২৪ ঘণ্টার মতো টিভি চ্যানেলগুলিতে রীতিমতো গ্রাফিক করে টাকার অঙ্ক বাড়ানোর লড়াই শুরু হয়। একের পর এক ব্রেকিং নিউজে ছেয়ে যায় বিভিন্ন চ্যানেলের স্ক্রিন। এ যেন একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার লড়াই।
ইডি বিজ্ঞপ্তি জারি করে টুইট করে জানিয়েছে সাত কোটির বেশি টাকা উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বড় বড় হরফে লিখছে ১০ কোটি, ১২ কোটি ১৫ কোটি বেশি টাকা উদ্ধার হয়েছে। প্রশ্নটা ঠিক এখানেই। ইডি সরকারিভাবে না জানানোর আগেই কী করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম টাকার অঙ্ক জেনে গেল। যদিও পরে বেগতিক দেখে ধীরে ধীরে টাকার অঙ্ক কমাতে শুরু করে অনেক চ্যানেল। যারা প্রথমে ১৫ কোটি উদ্ধার হয়েছে বলে দেখিয়েছিল, তারাই সংখ্যাটা এক সময় দশ কোটিতে নামিয়ে আনে।
সংবাদমাধ্যমের টিআরপি দৌড়ের এহেন প্রতিযোগিতায় অবাক রাজ্যের আমজনতা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল কংগ্রেস একটি কথা বারবার বলে। মিডিয়া ট্রায়াল। অনুমানের উপর ভিত্তি করে সংবাদমাধ্যম খবর করে দিচ্ছে। অথচ দেখা যাচ্ছে, বাস্তব অনেকটাই আলাদা। এভাবে অনেক মানুষের, অনেক জনপ্রতিনিধিরও সম্মানাহানি হচ্ছে। ব্যক্তি মানুষকে আক্রমণ করা হচ্ছে। তার সামাজিক সম্মান নষ্ট হচ্ছে।
আজ গার্ডেনরিচে শেষ অব্দি কত টাকা উদ্ধার হবে এখনও জানা নেই। যতক্ষণ না ইডি তথ্য দিচ্ছে ততক্ষণ সরকারিভাবে কিছু জানা যাবে না। তাহলে এমন উত্তেজনামূলক তথ্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম পাচ্ছে কোথা থেকে? সংবাদমাধ্যমের কাজ সঠিক তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা। সঠিক খবর পরিবেশন করা। সেই কাছ থেকে, এই দায়িত্ব পালন থেকে চতুর্থ স্তম্ভ ( সংবাদ মাধ্যম) কি আজ বিচ্যুত?
সময় এ প্রশ্নের উত্তর দেবে।রাতে অবশ্য সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে দিল্লি থেকে ইডি জানিয়ে দেয়, সাড়ে ১৭ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।