ডুরান্ড কাপ এবং এ এফ সি এশিয়ান কাপে বিপর্যয়ের পর আই এস এল-এর প্রথম ম্যাচেও মুখ থুবড়ে পড়েছে এটিকে মোহনবাগান। ঘরের মাঠে হারতে হয়েছে চেন্নাইয়ান এফ সি-র কাছে। রবিবার আবার একটি দক্ষিণী টিমের সঙ্গে খেলা মোহনবাগানের। তবে সেটা কেরালা ব্লাস্টার্সের মাঠে। কোচির নেহরু স্টেডিয়ামে এই মাঠেই কদিন আগে ইস্ট বেঙ্গলকে হারিয়েছে কেরালা, যারা গত আই এস এল-এর রানার্স। তাই জুয়ান ফেরান্দোর টিমের পক্ষে তাদের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট পাওয়াটা বেশ কঠিনই বলা যায়। কেরালায় যাওয়ার আগে মোহনবাগানের ডিফেন্ডার প্রীতম কোটাল বলে গেছেন, “এই ম্যাচটার পরের ম্যাচই ডার্বি। আমরা তাই কেরালাকে হারিয়ে বাড়তি মনোবল ফিরে পেতে চাই।” প্রীতম যা বলেছেন তাতে কোনও ভুল নেই। কিন্তু সেটা কী হবে?
মরসুম সবে শুরু হয়েছে। এখনও প্রচুর ভুল ত্রুটি শোধরাবার সুযোগ রয়েছে সব দলের। ডুরান্ড কাপ, এ এফ সি কাপ এবং আই এস এল-এ ছয়টি ম্যাচ খেলেছে মোহনবাগান। এই ছটা ম্যাচে তাদের দুটো সমস্যা বড্ড প্রকট হচ্ছে। প্রথমত ডিপ ডিফেন্সে প্রচুর ফাঁক থাকছে। গত বছরের চার ব্যাকের খেলা ছেড়ে ফেরান্দো এ বছর তিন ব্যাকে খেলছেন। কারণ তিনি পছন্দ করে যে দুজন বিদেশি সেন্টার ব্যাক এনেছিলেন তাদের মধ্যে পল পোগবার দাদা ফ্লিওরিন্তিনকে যতই ঢাকঢোল বাজিয়ে বরণ করা হোক না কেন তিনি যে অচল আধুলিতে পরিণত এটা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। তাই অপর সেন্টার ব্যাক অস্ট্রেলিয় ব্রেন্ডন হামিলের পাশে প্রীতম কোটাল এবং শুভাশিস বসুকে গুঁজে দিয়ে তিন ব্যাকে খেলা হচ্ছে। প্রীতম-শুভাশিসরা তিন ব্যাকে খেলতে অভ্যস্ত নন। তাই তাদের মানিয়ে নিতে অসুবিধে হচ্ছে। গোল খেতে হচ্ছে প্রতিদিনই। এটা যদি অসুবিধে নম্বর এক হয়, দু নম্বর অসুবিধেটা হচ্ছে পজিটিভ স্ট্রাইকার না থাকা। রয় কৃষ্ণকে ছেড়ে দেওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে। কৃষ্ণ হচ্ছেন বক্স স্ট্রাইকার। তাঁর বদলে অজি মিডফিল্ডার দিমিত্রি পেত্রাত্রোসকে দিয়ে গোল করানোর কাজটা করতে চাইছেন ফেরান্দো। দিমিত্রি সবে একটা ম্যাচ খেলেছেন। প্রথম ম্যাচে একটা ভাল পাস বাড়ানো ছাড়া তাঁকে ব্যর্থই বলা যায়। তবে একটা ম্যাচে তো কারুর যোগ্যতা নির্ণয় করা যায় না। তাই দিমিত্রিকে একটু সময় দিতে হবে।
কিন্তু রয় কৃষ্ণের আভাব ঢাকার মতো প্লেয়ার হতে হলে দিমিত্রিকে দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে দলের বাকিদের সঙ্গে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে তাঁকে যে ভূমিকায় দেখা গেছে তাতে মনে হচ্ছে তিনি গোল করার চাইতে গোলের বল তৈরি করতে বেশি আগ্রহী। কিন্তু মোহনবাগানে তো গোল করার লোক দরকার। এই সমস্যা মেটানোর জন্য মোহনবাগানের হাতে আছে জনি কাউকো, হুগো বুমোর মতো বিদেশি কিংবা লিস্টন কোলাসো, আশিক কুরুনিয়ন এবং মনবীর সিংয়ের মতো উইঙ্গার। এরা সব সময়েই যে গোল করেন তা নয়। কিন্তু গোল তো করেন। প্রথম ম্যাচে মনবীর সিং গোল করেছেন। গত বছর সাতটা গোল করৈচিলেন লিস্টন কোলাসো। কিন্তু ওরা কেউ স্ট্রাইকার নন। উইঙ্গারদের দিয়ে গোল পাওয়া যায়, মোহনবাগান পাবেও হয়তো। কিন্তু আসল কাজ তো করতে হবে স্ট্রাইকারকে। মোহনবাগানের কাউকে একটা জেনুইন স্ট্রাইকার হয়ে উঠতে হবে।
কেরালা ব্যালান্সড দল। বিদেশি যেমন তেমনই ভারতীয়েরাও আছেন, যারা ম্যাচ জেতাতে পারেন। তাদের দল থেকে চলে গেছেন আলভারো ভাসকুয়েজ এবং জর্জ পেরেরা দিয়াজ। কিন্তু গত বছরের সফল মিডফিল্ডার আদ্রিয়েন লুনা আছেন। প্রথম ম্যাচেই তিনি গোল করেছেন ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে। নতুন দুজন বিদেশি এসেছেন কেরালায়। আপোসতোলস জিয়ানু এবং দিমিত্রিয়াস ডিয়ামানটোকস। সঙ্গে আছেন গত বছরের ভিক্টর মনজিল। প্রথম দুজন দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় নেবেন। কিন্তু লুনা আএ মনজিল তো পুরনো। আর নতুন স্ট্রাইকার ইউক্রেনের ইভান কালিয়ানঝি তো ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে জাত চিনিয়েছেন। মাত্র দশ মিনিট খেলে জোড়া গোল করেছেন। ভারতীয়দের মধ্যে সাহাল আব্দুল সামাদ খুবই নির্ভরযোগ্য। ডিফেন্সে হরমোহনজ্যোৎ খাবড়া বুড়ুো বয়সেও ফুল ফোটাচ্ছেন। কেরালার সার্বিয়ান কোচ ইভান ভুকোমানোভিচ গত বছর থেকেই আছেন এই দলের সঙ্গে আছেন। নিজের দলটাকেও যেমন চেনেন। মোহনবাগানকেও তেমনই। কেরালা যে মোহনবাগানের সঙ্গে পারে না। এটাও জানেন। গত চারটে ম্যাচে বাগান জিতেছে তিনটিতে। তবে সেই চারটে ম্যাচই হয়েছিল গোয়ার মাঠে। এবার ঘরের মাঠে স্টেডিয়াম ভেঙে পড়বে কেরালার সমর্থনে। এই অ্যাডভ্যান্টেজটা তাদের থাকছেই। রবিবার তাই কেরালাকে হারানো মোহনবাগানের পক্ষে বেশ কঠিন। কিন্তু অসম্ভব নয়।