বাঁশবেড়িয়া: গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী এই তিন নদীর মিলনস্থলের নাম প্র্য়াগরাজ (Prayagraj)। সেখানে ১২ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয় কুম্ভমেলার (Kumbh Mela 2023)। এবার ইতিহাসের খোঁজে বাঁশবেড়িয়া (Bansberia) পুরসভা ও ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালনা সমিতি কুম্ভমেলার আয়োজন করেছে। গত বছর থেকে সেখানে শুরু হয়েছে এই মেলা। রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে এই কুম্ভমেলা (Kumbh Mela)। আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি, মাঘ সংক্রান্তিতে শাহিস্নান।
প্রথমে সপ্তর্ষিঘাটে সাধুরা স্নান করবেন।পরে অন্যান্য ঘাট জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। পুলিশ সূত্রের খবর, এই কুম্ভমেলায় বহু মানুষ উপস্থিত হবেন। কড়া নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ চত্বর। হুগলি গ্রামীণ পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে জোরদার। গঙ্গার স্নানের জন্য ঘাটে জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। সর্বক্ষণ ঘাটগুলিতে চলবে নজরদারি। ত্রিবেণী শিবপুর মাঠে যজ্ঞকুন্ড করে হোমের আয়োজন করা হয়েছে। গঙ্গার পাড়ে নাগা-সন্ন্যাসী ও সাধুরা তাঁদের আখড়া করে থাকছেন। হোম, জাগযজ্ঞ স্তোত্ৰপাঠ থেকে সন্ধ্যায় গঙ্গা আরতিও করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: Weather Update: কখনও শীত কখনও গরম! কতদিন চলবে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা?
ইতিহাস খুঁজে মহানির্মাণী আখড়ার সাধুসন্তরা কুম্ভের সন্ধান পেয়েছেন। সেই মেলাকে কেন্দ্র করে সেজে উঠেছে বাঁশবেড়িয়ার ত্রিবেণী। বাংলায় পৌষ সংক্রান্তিতে যেমন গঙ্গা সাগরমেলা হয়, ঠিক তেমনই ত্রিবেণীতে বিষুব সংক্রান্তিতে এই কুম্ভস্নানের আয়োজন হয়।
বাঁশবেড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান আদিত্য নিয়োগী জানান, ত্রিবেণীতে যে কুম্ভ মেলা হত, তা ইতিহাস ঘেঁটে খুঁজে বের করেন বাঁশবেড়িয়ারই কয়েকজন গবেষক। সেই অনুযায়ী ত্রিবেণী কুম্ভ পরিচালনা সমিতি তৈরি হয়েছে। কোভিড আবহ পেরিয়ে বিগত বছর ছোট করে আয়োজন করা হলেও, এবারে আয়োজন আরও বড়। বাংলার মাঘ সংক্রান্তিতে কুম্ভমেলার আয়োজন হয় ত্রিবেণীতে।
পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সপ্তগ্রামে রয়েছে ত্রিবেণী। কালের নিয়মে যমুনার অস্তিত্ব সংকটে, অন্যদিকে সরস্বতী নদীও শুকিয়ে রীতিমতো খালে পরিণত হয়েছে। একসময় সপ্তগ্রাম ছিল বাংলার বাণিজ্য বন্দর। এই তিন নদীকে কেন্দ্র করে চলত সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্রিটিশরা নদীপথে বাণিজ্যের জন্য হুগলি নদীর তীরে ব্যান্ডেলে পর্তুগিজ, চুঁচুড়ায় ওলন্দাজ, চন্দননগরে ফরাসি ও শ্রীরামপুরে ড্যানিশদের উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল। বিদেশিরা আসার আগে ত্রিবেণী হয়ে উঠেছিল সনাতন হিন্দুদের তীর্থক্ষেত্র।
জনশ্রুতি আছে, ত্রিবেণী সঙ্গগমকে বলা হত মুক্তবেণী। চতুর্দশ শতকের আগে ত্রিবেণীতে সাধু-সন্তদের মেলাও বসত। ত্রিবেণীতে পুণ্যস্নান করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু সাধু-সন্তরা জড়ো হতেন। সেই মিলন মেলা কুম্ভমেলা নামেই পরিচিত ছিল। কালের নিয়মে নদীর মতই সেই কুম্ভমেলাও পথ হারিয়ে যায়। দেশের অন্যান্য জায়গায় কুম্ভের আয়োজন হয় ঠিকই। কিন্তু হুগলীর ত্রিবেণী এখন ব্রাত্য। যেখানে দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকে বহু সনাতনী হাজির হন এই কুম্ভমেলায়। শাহিস্নান করে পুণ্য অর্জন করেন মোক্ষলাভের জন্য।