কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: ১৯৬৩ সাল। দিল্লির রামলীলা ময়দান। উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু (Jawaharlal Nehru)-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ। হাজির ছিলেন কিংবদন্তি শিল্পী লতা মঙ্গেশকরও (Lata Mangeshkar Dies)। লতাজিকে দেখতে ভিড় উপচে পড়েছে। তিনি গাইলেন ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কি লোগো’(Aye Mere Watan Ke Logon)। রামলীলা ময়দানে তখন কারও মুখে কথা নেই। মঞ্চে বসা নেহরুর দু’চোখে তখন জলের ধারা। তাঁর আশপাশে বসে থাকা বিশিষ্টদের চোখও ছলছল।
পরবর্তীকালে লতাজির কণ্ঠে এই গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। সি রামচন্দ্র সুরারোপিত এ গানের গীতিকার কবি প্রদীপ। তার পর থেকেই দেশের স্বাধীনতা দিবস কিংবা সাধারণতন্ত্র দিবসে লতার কণ্ঠে এই গানটি দেশের প্রায় সর্বত্র শোনা যায়। আজও সেই গান তার প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি।
লতা মঙ্গেশকর চলে গেলেন। রয়ে গেল তাঁর হাজার হাজার সৃষ্টি। দীর্ঘ আট দশক ধরে প্রায় ৩৬ টি ভারতীয় ভাষায় হাজার হাজার গান গাওয়ার এই নজির দেশে সম্ভবত আর কারও নেই। বাংলা গানে তিনি ছিলেন প্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বাংলা চলচ্চিত্রের প্লে ব্যাক গায়ক হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। বাংলা ভাষায় অনেক বেসিক গানও গেয়েছিলেন সুর সম্রাজ্ঞী। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, কার সুরে গান করেননি লতা? সেসব গান আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে। লতার কণ্ঠে প্রাণ পেয়েছে বেশ কিছু রবীন্দ্র সংগীতও। হেমন্ত-লতা জুটির গাওয়া ‘তোমার হল শুরু, আমার হল সারা’ গানটি তো অনবদ্য। সলিল চৌধুরীর সুরে সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘রানার’ গেয়ে যেমন বিখ্যাত হয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, তেমনি এই গানটি লতাও গেয়েছেন অসামান্য দক্ষতায়।
আরও পড়ুন Lata Mangeshkar Passes Away: জারা আঁখ মে ভর লো পানি

জীবনভর অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন লতা (Lata Mangeshkar Dies)। সন্মানিত হয়েছিলেন মেলোডি কুইন'(Melody Queen), ‘ইন্ডিয়াস নাইটিঙ্গল'(India’s nightingale), ‘দ্য ভয়েস অফ দ্য মিলেনিয়াম (the voice of the millennium), ‘লতা দিদি’ (Lata didi) সহ বিভিন্ন খেতাবে। ভারতরত্ন থেকে শুরু করে পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ, দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার, কী না পেয়েছেন তিনি!

লতা মঙ্গেশকরের জন্ম ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ইন্দোরে। পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের ৫ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিলেন লতা। বাকিরা হলেন মীনা,আশা,ঊষা, এবং হৃদয়নাথ। মাত্র ১৩ বছর বয়সে মারাঠি ছবি ‘কিতি হাসাল’-এ প্রথম প্লে ব্যাক গেয়ে শুরু হয় লতার সংগীত জীবন। তার পর থেকে অবিরাম চলেছে তাঁর সংগীত সাধনা। হিন্দি, বাংলা সহ ভারতের বিভিন্ন ভাষার গানে তিনি ছিলেন স্বচ্ছন্দ।তাঁর প্রয়াণে আজ ভারতের প্রাণের সুরটাই যেন কেটে গেল।
আরও পড়ুন Lata Mangeshkar: ঈশ্বরের কণ্ঠের সমাপতন, লতা মঙ্গেশকর (২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৯-৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২)