লন্ডন: প্রায় আট বছর আগেকার কথা। ২০১৫ সালে শামিমা বেগম (Shamima Begum) তখন স্কুলছাত্রী। ইস্ট লন্ডনের (East London) বাড়িতেই বেড়ে ওঠা। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল, কিন্তু হঠাৎই একদিন কাউকে না বলেই উধাও। পরে জানা যায় ইসলামিক স্টেট (Islamic State) জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছে শামিমা। একা নয়, শামিমার সঙ্গে তার আরও দুই বান্ধবীও পাড়ি দিয়েছিল সিরিয়ায় জঙ্গি হতে। একজনের নাম কাদিজা সুলতানা (Kadiza Sultana), অপরজনের নাম আমিরা আবাসে (Amira Abase), সেই সময় তাদের বয়স ছিল যথাক্রমে ১৫ ও ১৬। কিন্তু কী কারণে আচমকা এই হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তিন কিশোরী, তার কারণ আজও অজানা। তবে বিষয় হল, শামিমা এখন সবকিছু ছেড়ে ঘরে ফিরতে চান। আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই সমাজের মূলস্রোতে যোগ দিতে চান। সেদিনের সেই হঠাকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া কিশোরী আজ তরুণী। লন্ডনে তিনি তাঁর বাড়ি ফিরতে চান। শামিমা বেগমের জীবন কাহিনিই (Life Story) এখন ঘোরাফেরা করছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে (International Media)। কিভাবে সেদিনের কিশোরী কুখ্যাত আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছিল, সেখান থেকে যুবতী শামিমা কী করে এসে পৌঁছালো শরণার্থী শিবিরে (Refugee Camp)! এই নিয়ে জনপ্রিয় ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসি (BBC) ১০টি এপিসোডের পডকাস্ট (Podcast) অনুষ্ঠান তৈরি করেছে – দ্য শামিমা বেগম স্টোরি (The Shamima Begum Story)।
আরও পড়ুন: Booster Dose for Covid 19: ভিন্নধর্মী বুস্টার কোভোভ্যাক্সকে বাজারে ছাড়ার অনুমতি দিল বিশেষজ্ঞ কমিটি
শামিমার এই জীবন কাহিনি অনেকের মন ছুঁয়েছে, আবার অনেকে তাঁর হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে আইএস জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ। ২০১৯ সালে সিরিয়ায় এক শরণার্থী শিবিরে (Refugee Camp) শামিমাকে খুঁজে পেয়েছিলেন বিবিসি’রই এক সাংবাদিক। আইএস জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ায় ২৩ বছরের শামিমার এখন না আছে কোনও ঘর, আর না আছে কোনও পরিচিতি। ব্রিটিশ নাগরিকত্ব (British Citizenship) গিয়েছে, ব্রিটেনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাড়ি ছেড়ে সিরিয়া (Syria) যাওয়ার পর এক জঙ্গিকে বিয়ে করেছিলেন, তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন শামিমা। তাঁর তিন সন্তানই মারা গিয়েছে সিরিয়ায়। এখন শামিমার পরিচয় শুধুই শরণার্থী। মাথা গোঁজার ঠাঁই, উত্তর সিরিয়ার আল-রোজ ক্যাম্প (al-Roj camp in northern Syria)। পডকাস্টে শামিমার দাবি করেছেন, ওই শরণার্থী শিবির কারাগারের (Prison) চেয়েও দুর্বিসহ।
সিরিয়ান ক্যাম্পে সাংবাদিক জশ বেকার(Journalist Josh Baker)-কে শামিমা বলেছেন, “লোকজন আমাকে বিপজ্জনক মনে করেন, ঝুঁকি মনে করেন, তাঁদের এবং তাঁদের নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রার জন্য সম্ভাব্য বিপদ বলে ভাবেন। কিন্তু আমাকে তাঁরা যে মানুষটা ভাবেন, আমি তা নই।” এরপর সিরিয়ার শরণার্থী শিবির সম্পর্কে শামিমা বলছেন, “এই জায়গাটা আমার মতে কারাগারের চেয়েও খারাপ। আমি এটা বলার কারণ হল, কারাগারে সাজার শেষ হয়, কিন্তু এখানে কোনও দিন সাজা শেষ হবে কিনা, আমি জানি না।”
উল্লেখ্য, শামিমা বেগম ব্রিটিশ সরকারকে (British Government) চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন, তাঁর নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য। ঘরে ফিরতে চান তিনি। গত নভেম্বরে সংশ্লিষ্ট আদালত (Court) এই মামলায় বলেছিল, শামিমা সম্ভবত শিশু পাচার ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকতে পারে। আদালতের এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ হোম অফিস (Britsh Home Office) যুক্তি দেয়, সিরিয়াতে পাচার হওয়া ব্যক্তি ও কট্টরপন্থীরা ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ, কারণ তাঁরা হিংসার সংস্পর্শে এসেছেন।
তবে, শামিমা বেগমকে পডকাস্টে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমি খারাপ মানুষ নই। আমি আইসিস (ISIS)-এর থেকে অনেক বেশি কিছু, আমি যা কিছু সয়েছি, তার থেকে আরও অনেক বেশি কিছু।” তবে জনমানসে তাঁকে নিয়ে রাগ রয়েছে, সেটাও মেনে নিয়েছেন তিনি। সে প্রসঙ্গে শামিমার বক্তব্য, মানুষের রাগ তাঁর উপর নয়, আইসিসের উপর।