ইতিহাসের কাছে হয়ত আরও একবার মাথা নত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাকিস্তানের বিভিন্ন সরকারি দফতরের চূড়ান্ত অবহেলায় অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত মহেঞ্জো দারো। যার ফলে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে মানবসভ্যতার এই আশ্চর্য নিদর্শন। আশঙ্কায় আছেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রত্নতত্ব বিভাগের আধিকারিকরা।
গত ১৬ অগাস্ট থেকে ২৬ অগাস্ট পর্যন্ত প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয় সিন্ধু প্রদেশের লারকানা এলাকায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ৭৮০ মিলিমিটার। বাঁধভাঙা বর্ষণ থামলে দেখা যায় অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মহেঞ্জো দারো। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থলটির বিভিন্ন অংশ পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু দেওয়াল। মূল স্তূপটিকে ঘিরে আছে যে দেওয়াল সেটিও ভেঙে গিয়েছে।
পরিস্থিতি দেখে চলতি বছরের ২৯ অগাস্ট মহেঞ্জোদারোর কিউরেটর পাক সরকারের সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ডিরেক্টরকে চিঠি লিখে জানান, যাবতীয় সামর্থ্য ও সঙ্গতিকে কাজে লাগিয়ে মহেঞ্জোদারোর ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলিকে মেরামত করার আপ্রান চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্ত ওই কাজ করার জন্য সেচ, সড়ক, ও বন বিভাগের সহায়তা প্রয়োজন। পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থলের আশপাশের এলাকায় যে সব চাষী বা জোতদার থাকেন তাঁরা নিজেদের জমি থেকে জল সরাতে এমনভাবে খাল কেটেছেন যাতে সমস্ত বৃষ্টির জল এসে পড়েছে মহেঞ্জোদারোর একেবারে ভিতরে।
গোটা বিশ্বের কাছে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসাবে একেবারে উপরের দিকে থাকা মহেঞ্জো দারোকে রক্ষার জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কাছ থেকে যে প্রয়োজনীয় সহায়তা একেবারেই পাওয়া যায়নি সে প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছে সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ডিরেক্টরকে লেখা ওই চিঠিতে।
পাকিস্তানের প্রত্নতত্ব বিভাগের কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, শুধু আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের বেআইনি কাজকর্মই নয় বারবার জানানো সত্ত্বেও সেচ ও সড়ক বিভাগের পাশপাশি বন দফতরের কর্তারা কর্ণপাত করেননি তাঁদের আর্জিতে। যেজন্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থলটি থেকে জল নিষ্কাশনের মূল চ্যানেলটিও বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও রকমে মহেঞ্জো দারোর বিভিন্ন অংশে মেরামতির চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। অবশ্য ওই চিঠিতে মহেঞ্জো দারের কিউরেটর জানিয়েছেন অবিলম্বে বেশ কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার আর সংরক্ষণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের পাঠানো প্রয়োজন। যাতে সভ্যতার ইতিহাস থেকে মুছে না যায় বিশ্ববন্দিত এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থলটির অস্থিত্ব।