মরক্কো–১ পর্তুগাল–০
(এল নেসিরি)
ইতিহাস, ইতিহাস, ইতিহাস। বিশ্ব কাপের ৯২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সেমিফাইনালে উঠল আফ্রিকার একটা দেশ। শনিবার কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কো হারিয়ে দিল আন্যতম ফেভারিট পর্তুগালকে। ম্যাচের ৩৯ মিনিটে একমাত্র গোলটি করলেন এল নেসিরি। মরক্কোর এ বারের বিশ্ব কাপ অভিযানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এই জয়। গ্রুপ লিগে তারা হারিয়েছে বেলজিয়ামকে। ড্র করেছে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে। তার পর প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে ছুটি করে দিয়েছে স্পেনকে। এবার তারা হারাল পর্তুগালকে। রোনাল্ডোর পর্তুগাল এবার তেমন কিছু করতে পারল না। সি আর সেভেনের এটাই শেষ বিশ্ব কাপ। কিন্তু শেষ দুটো ম্যাচে তাঁকে প্রথম একাদশে রাখেননি কোচ ফেরান্দো স্যান্টোস। সুইৎজারল্যান্ড ম্যাচে তিনি খেলেছিলেন মাত্র ১৭ মিনিট। আর শনিবার মরক্কোর বিরুদ্ধে খেললেন শেষ ৪০ মিনিট। কিন্তু গোল করতে পারেননি। ম্যাচের পর কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেল তাঁকে। বিশ্ব ফুটবলের তিন মহাতারকা হলেন মেসি, রোনাল্ডো আর নেমার। মেসির আর্জেন্তিনা এখনও টিকে আছে। তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদারও। কিন্তু পর পর দুদিন বিদায় নিতে হল নেমার এবং রোনাল্ডোকে। দুজনের কাছেই অধরা থেকে গেল বিশ্ব কাপ।
পর্তুগালের বিরুদ্ধে মরক্কো খেলল ফিয়ারলেস ফুটবল। সামনে অত বড় একটা প্রতিদ্বন্দ্বী, কিন্ত বিশ্ব মঞ্চে মরক্কোর অখ্যাত অজ্ঞাত ফুটবলাররা বোঝাল পরিকল্পিত ফুটবল খেললে, ইচ্ছাশক্তির জোর থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়। পর্তুগালের টিমে রোনাল্ডো ছিলেন না। কিন্তু ব্রুনো ফার্নান্ডেজ, জোয়াও ফেলিক্স এবং নবাগত গঞ্জালো র্যামোস তো ছিলেন। গোল করার পক্ষে যথেষ্ট ভাল ফরোয়ার্ড লাইন। কিন্তু মরক্কোর ফুটবলারদের চমৎকার ডিফেন্সিভ অর্গানাইজেশনে খেই হারিয়ে ফেললেন তাঁরা। ডিফেন্ডারদের পিছনে ছিলেন ইয়াসিন বোনো। কতবার যে তিনি দলের দুর্গ রক্ষা করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। এ রকম একটা গোলকিপারের জন্যই মরক্কো আজ সেমিফাইনালে। বুধবার তাদের সামনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। কাজটা বেশ কঠিন হয়ে গেল আফ্রিকার সিংহদের। তবে এই অঘটনের বিশ্ব কাপে কোনও কিছুই তো অসম্ভব নয়।
ম্যাচ জেতার পিছনে যেমন প্রশংসা করতে হবে মরক্কোর গোলকিপার বোনোর, তেমনই ম্যাচ হারার জন্য দায়ী করা যায় পর্তুগালের গোলকিপার দিয়েগো কোস্তার। গোলটা হল তাঁরই দোষে। কখন গোল লাইন ছেড়ে উঠৈ আসতে হবে এটা জানা একটা আর্ট। আর সবাই কিন্তু আটিস্ট নয়। দূর থেকে ভেসে আসা সেন্টারে যখন গোল ছেড়ে বেরোলেন কোস্তা ততক্ষণে নাসিরি হেড করে বল গোলে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। ওই গোলেই ফয়সালা হয়ে গেল ম্যাচের। বিরতির সময় রোনাল্ডোকে ওয়ার্ম আপ করতে দেখে পর্তুগাল সমর্থকরা বুকে বল পেলেন। বিরতির পর পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই রোনাল্ডোর মাঠে প্রবেশ। কিন্তু তিনি তো আগের রোনাল্ডোর ছায়া। অনেক রকম কারণ মিলিয়ে তাঁর ফুটবলে এখন ভাঁটার টান। না আছে সেই দৌড়, সেই ফ্রি কিক কিংবা সেই হেড। দেহপট সনে নট সকলি হারায়। রোনাল্ডোর খেলা দেখে সেটাই মনে হচ্ছিল। পাঁচ বারের ব্যালন ডি ওর জয়ী ফুটবলার এখন সিংহাসনে নেই। বিশ্ব কাপের আগেই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড। বিশ্ব কাপটাও ভাল গেল না। আসলে ফুটবল তো মাইন্ড গেম। তাঁকে প্রথম একাদশ থেকে সরিয়ে দিয়ে যে দুঃসাহস দেখিয়েছেন দলের কোচ তার জবাব দেওয়ার মতো সঙ্গতি তাঁর ছিল না। রাজপাটহীন রাজার মতো তাঁকে বিদায় নিতে হল বিশ্ব কাপ থেকে। আর তাঁর সামনে দিয়েই সেমিফাইনালে চলে গেল মরক্কো। যাদের কেউ খুব একটা পাত্তা দেয়নি। তাই পপ কুইন সাকিরা ঠিকই বলেছেন, দিস টাইম ফর আফ্রিকা। মরক্কোর এই সোনার দৌড় কোথায় শেষ ্য় তাই এখন দেখার।