নয়াদিল্লি: দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস (Terror), সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ (Communal Hatred) ও সমাজে অশান্তি (Unrest in Society) সৃষ্টি করতে চাইছে নিষিদ্ধ ইসলামি সংগঠন (Banned Islamic Organization) পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (Popular Front of India – PFI)। এখানেই থেমে থাকা নয়, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতে ইসলামি শাসন (Islamic Rule) কায়েম করতে চায় তারা। সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যেকে সফল করার জন্য গোপন দল (Secret Teams) গঠন করেছে পিএফআই। ‘কথিত শত্রুপক্ষ (Perceived Enemies)’ ও নিশানায় থাকা ব্যক্তিদেরকে (Targets) খতম করার জন্য গঠিত ওই দলের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সার্ভিস টিমস (Service Teams)’ বা ‘কিলার স্কোয়াডস (Killer Squads)’। জাতীয় তদন্ত সংস্থার তদন্তে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে, যা রীতিমতো চিন্তার বিষয় দেশের জন্য।
আরও পড়ুন: Arrest Warrent UP BJP MLA: যোগীরাজ্যে বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আদালতের
কীভাবে সামনে এল এই তথ্য?
গত শুক্রবার জাতীয় তদন্ত সংস্থা (National Investigation Agency – NIA) বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালতে (Special Court in Bengaluru) একটি চার্জশিট (Charge Sheet) দাখিল করেছে। তারপরই প্রকাশ্যে এসেছে এই তথ্য। চার্জশিটে এনআইএ আদালতকে জানিয়েছে, বিজেপির যুব মোর্চা জেলা কমিটির (BJP’s Yuva Morcha district committee) সদস্য প্রবীণ নেত্তারুকে (Praveen Nettaru) গত বছর ২৬ জুলাই হত্যা করা হয়েছিল। কর্নাটকের দক্ষিণা কন্নড় জেলার (Karnataka’s Dakshina Kannada district) সুল্লিয়া তালুকের বেল্লারে গ্রামে (Bellare village of Sullia Taluk) ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পিআইএফ যোগ ছিল বলে দাবি জাতীয় তদন্ত সংস্থার। সেদিন নেত্তারুকে জনসমক্ষে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল, আর এর পিছনে উদ্দেশ্য ছিল, নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের মানুষদের মনে ভয় ধরানো। চার্জশিটে মোট ২০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই সার্ভিস টিমের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, অভিযুক্তদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি কোনও নির্দিষ্ট সম্প্রদায় কিংবা গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও নেতাদের চিহ্নিত, তালিকাভুক্ত এবং নজর রাখার জন্য নজরদারি কৌশলও শেখানো হয়েছিল।
চার্জশিটে আর কী কী রয়েছে?
আদালতে পেশ করা চার্জশিটে এনআইএ বলেছে, “এই সার্ভিস টিমের সদস্যরা যাতে সংশ্লিষ্ট সিনিয়র পিএফআই নেতাদের নির্দেশে চিহ্নিত হওয়া ও নিশানায় থাকা ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের আক্রমণ এবং হত্যা করতে পারে, তার জন্য তাদের বেশ ভালোরকম প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।” এনআইএ-এর দাবি, সুল্লিয়া নগর এবং বেল্লারে গ্রামে পিএফআই সদস্য ও নেতারা ষড়যন্ত্র বৈঠক করেছিল। ওই জেলার সার্ভিস টিমের প্রধান মুস্তাফা পাইচরকে (District Service Team Mustafa Paichar) নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের এক প্রখ্যাত সদস্যকে চিহ্নিত ও নিশানা করার জন্য। নির্দেশ মোতাবেক চারজনের একটি দল গিয়ে সংশ্লিষ্ট স্থান খতিয়ে দেখে এবং প্রবীণ নেত্তারুকে চিহ্নিত করে এসেছিল। এরপর, বিজেপি যুব মোর্চার ওই সদস্যের উপর প্রাণঘাতী অস্ত্র (Lethal Wepon) নিয়ে চড়াও হয়ে প্রকাশ্যে খুন করা হয়েছিল তাঁকে। ২৬ জুলাই ওই নৃশংস খুনের ঘটনার উদ্দেশ্যই ছিল একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের জনমানসের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা।
চার্জশিটে যে ২০ জন পিএফআই সদস্যের নাম রয়েছে, তার মধ্যে ছ’জন পলাতক (Absconding)। খুনের এই মামলায় গ্রেফতারির জন্য তাদের জন্য আর্থিক পুরস্কার (Reward) ঘোষণা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির (Indian Penal Code) ধারা ১২০বি, ১৫৩এ, ৩০২ ও ৩৪ অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন ১৯৬৭ [Unlawful Activities (Prevention) Act, 1967]-র ধারা ১৬, ১৮ ও ২০ এবং অস্ত্র আইন (Arms Act)-এর ধারা ২৫ (১) মোতাবেকও মামলা রুজু করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: Mysterious Cloud In Turkey: তুর্কির আকাশে রহস্যজনক মেঘ
অভিযুক্ত কে কে?
চার্জশিটে যে ২০ জন ব্যক্তির নাম রয়েছে, সেই অভিযুক্তরা হল – মহম্মদ শিয়াব (Mahammed Shiyab), আব্দুল বশির (Abdul Basheer), রিয়াজ (Riyaz), মুস্তাফা পাইচর (Mustafa Paichar), মাসুদ কেএ (Masud KA), কোদাজে মহম্মদ শেরিফ (Kodaje Mohammed Sherif), আবুবক্কর সিদ্দিক (Abubakkar Siddik), নৌফাল এম (Noufal M), ইসমাইল শাফি কে (Ismail Shafi K), কে মহম্মদ ইকবাল (K Mahammad Iqbal), শাহিদ এম (Shaheed M), মহম্মদ শাফিক জি (Mahammad Shafeek G), উমর ফারুক এম আর (Ummar Farook M R), আব্দুল কাদির সিএ (Abdul Kabeer CA), মহম্মদ ইব্রাহিম শা (Muhammad Ibrahim Sha), সইনুল আবিদ ওয়াই (Sainul Abid Y), শেখ সাদ্দাম হুসেন (Shekh Saddam Hussain), জাকির এ (Zakiar A), এন আব্দুল হরিস (N Abdul Haris), থুফালি এমএইচ (Thufail MH)।
এর মধ্যে মুস্তাফা পাইচর, মাসুদ কেএ, কোদাজে মহম্মদ শেরিফ, আবুবক্কর সিদ্দিক, ফারুক এমআর এবং থুফালি এমএইচ পলাতক।
২৬ জুলাই খুনের ঘটনার পর ২৭ জুলাই দক্ষিণা কন্নড় জেলার বেল্লার পুলিশ স্টেশনে মামলা দায়ের করা হয়েছিল প্রাথমিকভাবে। এরপর, ৪ অগাস্ট এনআইএ ফের মামলা দায়ে করে।
আরও পড়ুন: BJP MLA Hiran Chatterjee : বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায় কি তৃণমূলে যোগ দেবেন? জল্পনা আরও বাড়ল
পিএফআই ভারতে নিষিদ্ধ কেন?
গত সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ‘বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন, ১৯৬৭’ অনুসারে ইসলামি রাজনৈতিক সংগঠন পিএফআই, তাদের সহযোগী এবং তাদের অনুমোদিত শাখাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বেআইনি সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে,পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে পিএফআই’কে।
উল্লেখ্য, নেত্তারু হত্যাকাণ্ড জড়িত থাকার পাশাপাশি, পিএফআই ক্যাডারদের বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং কেরালা, কর্নাটক ও তামিলনাড়ুতে বহু হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।