পিয়ংইয়াং: আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন কিংবা দেশ-বিদেশের খবর রাখেন, তাঁদের কাছে এটা অজানা নয়, বিশ্বের আর পাঁচটা দেশের তুলনায় উত্তর কোরিয়া (North Korea) একেবারেই আলাদা। বাদবাকি দুনিয়া যে দিকে চলে, বুনিয়াদি এবং নিয়মিত ধরন-ধারণের কথা ধরলে, উত্তর কোরিয়া তার উল্টো পথে চলে। বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক দেশ যেখানে গণতন্ত্রকে বেছে নিয়েছে, সেখানে সর্বগ্রাসী শাসন (Totalitarian Regime) চলে। উত্তর কোরিয়ায় ক্যালেন্ডার আলাদা, অনুমতি ছাড়া দেশের বাইরে যেতে পারেন না উত্তর কোরীয় নাগরিকরা, বিদেশি সঙ্গীতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, দেশের সরকার ঠিক করে দেয় চুলের ছাঁট কেমন হবে। আর এই সমস্ত নির্দেশ না মানলে কড়া সাজা পেতে হবে। অদ্ভূত সমস্ত নিয়মের তালিকায় সংযোজন হয়েছে আরও একটি বিদ্ঘুটে নির্দেশ।
অস্বাভাবিক আইনের তালিকায় নবতম সংযোজন, সে দেশের পিতামাতাদের উদ্দেশে পিয়ংইয়াং (Pyongyang)-এর হুলিয়া। বাচ্চাদের নাম রাখতে বোম, বন্দুক, স্যাটেলাইট। তাতে নাকি দেশাত্মবোধ (Patriotism) জাগ্রত হবে নাগরিকদের মধ্যে। পিয়ংইয়াংয়ের ধারণা, উত্তর কোরিয়ার বাবা-মায়েরা তাদের বাচ্চাদের যে নাম রাখছেন, তা বড়ই নরম ধাঁচের। এরকম নাম রাখলে চলবে না। নাম হতে হবে কড়া ধাঁচের।
আরও পড়ুন: Taj Mahal: তাজমহলের বয়স কত, প্রকৃত ইতিহাস কী? আর্জি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে
দক্ষিণ কোরিয়ার মতো উত্তর কোরিয়াতেও বাচ্চাদের নাম রাখার ক্ষেত্রে স্বরবর্ণে (Vowels) নাম শেষ হওয়ার রীতি ছিল। যেমন- আ রি (A Ri), এর অর্থ প্রিয় জন(Loved One) এবং সু মি (Su Mi) অর্থাৎ দুরন্ত সুন্দরী (Super Beauty)। কিন্তু, এবার নামের সেই ধারা পরিবর্তন হতে চলেছে সরকারি নির্দেশে। উত্তর কোরিয়ার সরকার চাইছে, যাঁদের নাম তুলনায় নমনীয় (Softer Names), তাঁদের এবং সন্তানদের নাম বদলে ফেলতে হবে। হতে হবে আরও মতাদর্শগত ও সামরিক অর্থের অধিকারী। প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, নির্দেশ না মানলে কিং জং-উন (Kim Jong-un)-এর সরকার জরিমানা আরোপ করার পরিকল্পনা করছে। উত্তর কোরিয়ার সরকারের ধারণা, নামের শেষে ব্যাঞ্জনবর্ণ (Consonant) না থাকলে, সেটি ‘সমাজতন্ত্র-বিরোধী (Anti-Socialist)’। কিম জং-উন সরকার চাইছে, উত্তর কোরিয়ার কোনও নাগরিকের নামের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের নামের যেন কোনও রকম মিল না থাকে।
প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, উত্তর কোরীয় নাগরিকরা সরকারের এই নির্দেশ মারতে নারাজ। বেশিরভাগ পিতা-মাতাই এই নির্দেশ শোনার পর থেকে ক্ষুব্ধ এবং বিচলিত। রেডিও ফ্রি এশিয়া (Radio Free Asia – RFA)-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উত্তর কোরীয় ব্যক্তির বক্তব্য, বিভিন্ন জায়গায় আবাসিকরা অভিযোগ জানাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, কর্তপক্ষ রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় মাপকাঠি অনুযায়ী নাম পরিবর্তনে বাধ্য করছে।
উল্লেখ্য, নভেম্বর মাস থেকে নাম পরিবর্তনের বিষয়ে নোটিস দিয়ে নির্দেশ জারি করেছে উত্তর কোরীয় সরকার। নাগরিকদেরকে চলতি বছরের শেষ দিন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে, যাঁদের নামের শেষ অক্ষর ব্যাঞ্জনবর্ণ নয়, তাঁদেরকে পরিবর্তন করতে হবে এবং বৈপ্লবিক মানদণ্ড (Revolutionary Standards) পূরণের জন্য নামের সঙ্গে রাজনৈতিক অর্থ যোগ করতে হবে।