নয়াদিল্লি: রেপো রেটে (Repo Rate) কোনও রকম পরিবর্তন আনছে না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (Reserve Bank of India – RBI)। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মুদ্রনীতি কমিটি (Monetary Policy Committee – MPC) রেপো রেট ৬.৫ শতাংশেই অপরিবর্তনীয় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার এই কথা জানিয়েছেন আরবিআই’য়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস (Shaktikanta Das, RBI Governor)।
রেপো রেট হলো সেই রেট বা হার, যার ভিত্তিতে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলিকে (Other Banks) ঋণ দেয়।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছেন, “এমপিসি সর্বসম্মতিক্রমে এই বৈঠকে রেট অপরিবর্তনীয় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি পরিস্থিতি তেমন হয়, সেই মতো কাজ করার জন্যও প্রস্তুত থাকা হবে।” তিনি এটাও বলেছেন, ভবিষ্যত বৈঠকে প্রয়োজন পড়লে এমপিসি সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধা করবে না।
আরও পড়ুন: Satyendar Jain | দিল্লির প্রাক্তন মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের জামিনের আবেদন খারিজ দিল্লি হাইকোর্টে
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের বক্তব্য, আরবিআই রেপো রেট না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই খুশি দেশের অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলি। রেপো রেট ৬.৫ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকার ফলে ঋণগ্রহীতাদের (Borrowers) জন্য সুবিধা হলো, কেন না ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বোঝা চাপছে না তাঁদের কাঁধে। সহজ ভাষায় বললে, গৃহঋণ অর্থাৎ হোম লোন (Home Loan) এবং অন্যান্য ইএমআই (EMIs)-এর ক্ষেত্রে সুদের হার অদূর ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। অর্থাৎ যাঁরা ঋণ নেওয়ার কথা ভাবছেন ব্যাঙ্ক থেকে, তাদের উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপছে না ঋণ পরিশোধ দেওয়ার ক্ষেত্রে। বেশিরভাগ বিশ্লেষকই (Analysts) প্রত্যাশা করেছিলেন, বর্তমানে আরবিআই যেভাবে কড়া আর্থিক নীতি নিয়ে চলেছে, তাতে ২৫ বেসিস পয়েন্ট (Basis Points) বাড়ার সম্ভাবনা ছিল। গত বছরের মে মাস থেকে ধরলে রেপো রেটে সামগ্রিকভাবে ২৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছে দেশ।
তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই পূর্বাভাসও দিয়ে রেখেছে, পরিস্থিতি যদি তেমন নয়, তাহলে মুদ্রাস্ফীতির (Inflations) বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও প্রস্তুত রয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের বক্তব্য, রেপো রেট অপরিবর্তিত সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র এই বৈঠকের জন্যই ছিল। আগামী দিনে দরকার পড়লে রেপো রেট বৃদ্ধি পেতে পারে সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতির চাহিদা মোতাবেক।
শক্তিকান্ত দাস আরও বলেছেন, ২০২৪ অর্থবর্ষের জন্য জিডিপি বৃদ্ধির অনুমান ৬.৪ থেকে ৬.৫ শতাংশে বৃদ্ধি করেছে। এপ্রিল মাস থেকে নতুন অর্থবর্ষ শুরু হয়েছে দেশে। এটাই ছিল আরবিআই’য়ের এমপিসি’র প্রথম বৈঠক।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই গত বছরের মে মাস থেকে রেপো রেটে মোট ২৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে, যদিও এটি বেশিরভাগ সময় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কমফোর্ট জোনের ৬ শতাংশের উপরে থাকে। কিন্তু গত বছরের শেষ দুই মাস (নভেম্বর এবং ডিসেম্বর, ২০২২) এই দর ছয় শতাংশের নিচে থাকার পর, খুচরা মুদ্রাস্ফীতি জানুয়ারিতে আরবিআই-এর কমফোর্ট জোন লঙ্ঘন করেছে, ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক পদক্ষেপের নিশ্চয়তা রয়েছে। কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (Consumer Price Index – CPI)-এর ভিত্তিতে জানুয়ারিতে মুদ্রাস্ফিতী ছিল ৬.৫২ শতাংশ আর ফেব্রুয়ারিতে তা কমে হয় ৬.৪৪ শতাংশ। মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হলো সুদের হার বৃদ্ধি। এর ফলে আপনা থেকেই অর্থনীতি চাহিদা কমতে থাকে এবং মুদ্রাস্ফীতির হার নিম্নমুখী হতে থাকে।