নাগপুর: রৌদ্র ঝলমলে নাগপুর। এই নাগপুরকে ঘিরে রয়েছে অনেক ইতিহাস। ১৯ বছর আগে নাগপুরে গ্রিন টপ প্রস্তুত করায় কিছুটা প্রতিবাদে সেইসময়ের ভারত অধিনায়ক অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই অধিনায়ক বলেছিলেন, চোটের জন্য তিনি খেলতে পারবেন না। আসলে কারণটা যে অন্য সেটা অল্পবিস্তর ক্রিকেট চর্চা করা চা-এর দোকানের পঁচারও অজানা ছিল না। সেইসময়ের অজি অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়কে ভারত অধিনায়কের না খেলার কারণ জানতে চাইলে তিনিও এর উত্তর যথাযথ দিতে পারেননি। বিসিসিআই-এর অন্দরের রাজনীতির গ্রাসে পড়েছিল ২০০৪-০৫ এর নাগপুরের উইকেট। সেই অধিনায়কই বছর চারেক পর এই নাগপুরেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে আলবিদা জানিয়েছিলেন। এক যুগের অবসানে আরেক যুগের সূচনাও হয়েছিল সেদিন। আরেক ভারত অধিনায়ক পূর্ণ সময়ের জন্য টেস্ট অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ২০২৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির নাগপুর দেখল বর্তমান ভারত অধিনায়কের ব্যাট হাতে মস্তানি।
অন্যান্য ভারতীয় ব্যাটাররা যেখানে অনেকটাই নিষ্প্রভ, সেখানে রোহিত শর্মা খেললেন অন্য মেজাজে। শুরুতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং, পরে চটজলদি উইকেট পতন দেখে ‘ক্যালকুলেটিভ’ ব্যাটিং। অবশেষে ১৭১ বলে নিজের শতরান পূর্ণ করলেন তিনি। মাটি-মাখা জার্সিতে শতরানের পর স্বস্তির হাসি রোহিতের মুখে। ভালোবাসার মাসে গ্যালারি থেকে ফ্লাইং-কিস ছুঁড়ে দিচ্ছেন এক ঝাক তরুণী। ড্রেসিংরুমে কোচ রাহুল শরদ দ্রাবিড়ের উচ্ছ্বাস দেখে মনে হল তিনি তাঁর টেস্ট কেরিয়ারের ৩৭তম শতরানটি এইমাত্র করে উঠলেন।
আরও পড়ুন: Cristiano Ronaldo: এক ম্যাচে চার গোল, রেকর্ড সঙ্গী করে ফর্মে ফিরলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ওভালে শেষ টেস্ট শতরানটি এসেছিল রোহিত শর্মার ব্যাট থেকে। এরপরই নাগপুরের এই শতরান। এরইসঙ্গে নিজের টেস্ট কেরিয়ারের নবম শতরানটি পূর্ণ করলেন তিনি। প্রথমদিনের শেষে যখন ব্যাট করতে নেমেছিলেন, তখন আক্রমণাত্মক ভঙ্গিমায় ব্যাটিং শুরু করেছিলেন। নাথন লিয়োঁ এবং টড মরফির স্পিনকে যাতে নেগেট করা যায় সেইজন্য কিছুটা স্টেপ আউট করে খেলছিলেন। এরপর উইকেটে সেট হয়ে যাওয়ার পর বলের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের ফুট মুভমেন্ট করেন। যে উইকেটে কোনও বল নীচু থাকছে, কোনও বল স্কিড করে টার্ন নিচ্ছে, কোনও বল আবার ঘুরবে মনে হলেও সোজা থাকছে-সেই উইকেটে শতরান অবশ্যই বীরত্বের ! সমালোচকেরা এরপরেও কমলালেবুর শহরে কমলালেবু খেতে খেতে হয়ত বলবেন দেশের মাটিতে শতরান করেছে এ আর এমন কি…সেইসময়েই মনে মনে আওড়াতে হয় রাজেশ খান্নার কালজয়ী সংলাপ-‘কুছ তো লোগ কাহেঙ্গে, লোগো কা কাম হ্যায় কেহেনা…’