নয়াদিল্লি: ছেলের পর মা। বিজেপির (BJP) ‘চক্রান্তে’ ছেলের লোকসভা সংসদ পদ খারিজের পর চুপ করে ছিলেন। রাতারাতি সরকারি বাংলো ছাড়ার নির্দেশেও মৌন অবলম্বন করেছেন। কিন্তু, এবার মুখ খুললেন কংগ্রেসের (Congress) প্রাক্তন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi)। নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে আক্রমণের চাঁদমারি করলেন সোনিয়া। ‘দি হিন্দু’ পত্রিকায় এই নিবন্ধে নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেন তিনি। ‘অ্যান এনফোর্সড সাইলেন্স ক্যাননট সল্ভ ইন্ডিয়াজ প্রবলেমস’ শীর্ষক নিবন্ধে দীর্ঘ নীরবতার পর মুখ খুললেন সোনিয়া।
সোনিয়া লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথাবার্তা, হয় উপেক্ষার ভঙ্গিমায় অথবা ভাষার চাকচিক্য ও পরিবেশনায় রং চড়িয়ে মূল ইস্যুকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। প্রধানমন্ত্রী মোদি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার দেশের প্রধান তিনটি স্তম্ভকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে। দৃষ্টান্ত দিয়ে সোনিয়া লিখেছেন, এবারের বাজেট অধিবেশনে সরকারপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে সভা হইচই করে সভা চলতে দেয়নি। বিরোধীদের যেসব দাবি যেমন আদানি কেলেঙ্কারি (Adani Scam), বেকার, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, সামাজিক বিভাজন এসব কিছুই নিয়ে আলোচনার জায়গা পর্যন্ত দেয়নি সরকার।
আরও পড়ুন: Coronavirus | কিছুটা স্বস্তি, দেশে সামান্য কমল দৈনিক করোনা সংক্রমণ
ছেলের নাম না করলেও রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) সপক্ষে বড় গলা করে সোনিয়া লিখেছেন, বিরোধীদের ভাষা বন্ধ করতে কেন্দ্রীয় সরকার নজিরবিহীন পদক্ষেপ করছে। প্রসঙ্গত, এর আগে রাহুল গান্ধীর লোকসভায় আদানি-মোদি সংক্রান্ত বক্তব্য সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হয়। সোনিয়া আরও লিখেছেন, এভাবে দেশের ৪৫ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট বিনা বিতর্কে পাশ করিয়ে নিল সরকার। কখনও কেউ শুনেছে একথা!
লেখায় সোনিয়ার মূল নিশানা হলেন মোদি। তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, অর্থবিল যখন লোকসভায় বিনা বাধায় বেরিয়ে যাচ্ছে, তখন উনি প্রচারের সাজসজ্জায় তাঁর কেন্দ্রে প্রকল্পের উদ্বোধন করে চলেছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকেও একহাত নিয়ে সোনিয়া লিখেছেন, বাজেট বিতর্কে বেকারি দূরীকরণ কিংবা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে একটি কথাও নেই। দেখে মনে হয়, এরকম কোনও সমস্যা যেন দেশে নেই।
ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এর আগে সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। নিবন্ধে তা নিয়েও মোদিকে কথা শোনাতে ছাড়েননি কংগ্রেস এমপি। তিনি লিখেছেন, ৯৫ শতাংশ রাজনৈতিক মামলাই করা হয়েছে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে। আর দুর্নীতিতে যুক্ত যারা বিজেপিতে যোগ দিয়েছে, আশ্চর্যজনকভাবে তারা ছাড় পেয়ে গিয়েছে।
দেশের সাংবাদিক, সমাজকর্মী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনের অপব্যবহারকে বেনজির ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন কংগ্রেস নেত্রী। বিজেপি এবং আরএসএস মিলিতভাবে দেশে ঘৃণার রাজনীতির জন্ম দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সোনিয়া। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসব জেনেও সবকিছু উপেক্ষা করছেন। রামনবমীর মতো ধর্মীয় উৎসব পালনেও এখন হিংসা ছড়াচ্ছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে তিনি পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাত এবং অন্যান্য রাজ্যের কথা তুলে ধরেছেন।
চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে তুলোধনা করেছেন সোনিয়া। চীনা আগ্রাসন নিয়ে সরকার লোকসভায় মুখ খুলতে চাইছে না। আগামী বছরেই লোকসভা নির্বাচন। তা মাথায় রেখে সোনিয়া লিখেছেন, আগামী কয়েক মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রের পক্ষে এক কঠিন পরীক্ষা। কংগ্রেসের প্রাক্তন সভানেত্রী তাই বলেছেন, বিজেপি বিরোধী সমমনোভাবাপন্ন দলগুলির সঙ্গে হাত হাত মেলাতে প্রস্তুত কংগ্রেস। যে কোনও মূল্যে সংবিধান রক্ষা ও তার আদর্শকে বাঁচাতেই হবে।