Tuesday, June 24, 2025
Homeঘোষাল নামাঘোষাল নামা (Ghosal Nama) | পঞ্চায়েত নির্বাচনের আকস্মিক ঘোষণা বিরোধীদের বিপাকে ফেলল?

ঘোষাল নামা (Ghosal Nama) | পঞ্চায়েত নির্বাচনের আকস্মিক ঘোষণা বিরোধীদের বিপাকে ফেলল?

Follow Us :

কলকাতা: রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে কোনও যুদ্ধই ছোট নয়। সব যুদ্ধই এক একটা বিশ্বযুদ্ধের মতো। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের (West Bengal Panchayat Election 2023) দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহারণ শুরু হয়ে গিয়েছে। একটা জিনিস তো আপনারা সকলে স্বীকার করবেনই, যে বেশ কিছুদিন ধরে বিজেপি (BJP), এমনকি সিপিএমের (CPM) নেতারাও বলতে শুরু করেছিলেন, যে পঞ্চায়েত নির্বাচন বোধহয় হবে না! মে মাসে পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা ছিল কিন্তু মে মাসে যখন সেটা হল না। এবং ভোট ক্রমশ পিছনোর সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা শুরু হল। সেরকম একটা সময়ে অভিষেক বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের (Abhishek Banerjee) জেলাবাড়ি প্রচার অভিযান শুরু হয়ে গেল। এবং সেটা শুরু হবে জুন মাসের মাঝামাঝি। তাহলে তো মে মাসের নির্বাচন যে হবে না সেটা বোঝা গেল। কিন্তু এর পাশাপাশি আরেকটা বিতর্ক দানা বাঁধল, যে রাজ‍্য নির্বাচন কমিশনের প্রধান কান্ডারী কে হবেন? রাজ‍্য সরকার রাজীব সিনহাকে (West Bengal State Election Commissioner Rajiv Sinha) নির্বাচন কমিশনার করার জন্য রাজ‍্যপালের কাছে সুপারিশ করল। রাজ‍্যপাল সেই ফাইলটা নিয়ে একমাস বসে থাকলেন। এবং বারবার চিঠি দিতে লাগলেন মুখ‍্য সচিবের কাছে, যে ওনাকে কেন করা হবে? উনি মুখ‍্যসচিব ছিলেন। এবং অভিজ্ঞ পশ্চিমবঙ্গ শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান। কিন্তু বিজেপি এবং বিরোধী দল অভিযোগ করতে লাগলো যে এই লোকটিকে করা মানে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাস হবে। এবং ভোটে কারচুপি করানোর জন্য এহেন ব‍্যক্তিত্বকে করা হচ্ছে। একদম দলের বসংবাদ আমলা। নিরপেক্ষ নন। ইত্যাদি, ইত্যাদি। 

সুতরাং রাজ‍্যপাল আরও কয়েকটি নাম চাইল। রাজ‍্য সরকার দিল না। রাজ‍্য সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, পঞ্চায়েত নির্বাচন যেমন রাজ‍্য সরকারের পরিচালনায় হয়, সেরকম রাজ‍্য নির্বাচন কমিশনের প্রধান কে হবে সেটাও কিন্তু ঠিক করবে রাজ‍্য সরকার। এটা তো দিল্লির মুখ‍্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা নয় যে তিনটে নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পাঠাবে কী পাঠাবে না। তারপর আলাপ-আলোচনা হবে। ব‍্যাপারটা সেরকম নয়। সুতরাং বিতর্ক চলতে থাকল। শেষ মূহুর্তে রাজ‍্যপাল মেনে নেওয়াতে বিজেপি আরও বেকায়দায় পড়ল। রাজ‍্যপাল রাজীব সিনহার নাম মেনে নেওয়ার আগে উপাচার্যদের ক্ষেত্রে এমন একটা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল। এবং বেশ কিছু উপাচার্যের ক্ষেত্রে রাজ‍্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করেই একতরফা সিদ্ধান্ত দিলেন। তাতে বিজেপি খুব খুশী হয়ছিল এবং রাজ‍্য সরকার রাজ‍্যপালের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছিল। এবং তাতে বিজেপির মনে হয়েছিল, যে তাহলে রাজ‍্যপাল সম্ভবত তাদের কথা শুনবেন। বিজেপির একজন নেতা সেদিন বলছিলেন, যে এই রাজ‍্যপালের ভূমিকা নিয়ে তারা যথেষ্ট বিরক্ত। এবং তারা মনে করছে, এটা একটা বিরাট ষড়যন্ত্র। এবং এখন পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় আরও বিপদে পড়ে গেল বিরোধীরা। কেন বিপদে পড়ল সেকথা বলি।

আরও পড়ুন: দুর্নীতি খুব খারাপ কিন্তু ভোটে ইস্যু হয় না কেন?

দায়িত্ব পেয়েই রাজ‍্য নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিয়েছে। এবং মনোনয়নপত্র দাখিলের তারিখ দ্রুতই নিষ্পত্তি করতে চেয়েছেন। তারা সব দিনক্ষণ দেয়ার পর এখন বিরোধীরা আদালতের দরজা খটখট করছে, এই বলে যে, এতো অল্প সময়ের মধ্যে আমরা প্রার্থী মনোনয়ন করবো কী করে? এতো আচমকা কেন? আসলে এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে করা হচ্ছে বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি এবং বিরোধীরা এই অভিযোগ করেছে। কিন্তু একথা সত‍্যি যে প্রার্থী বাছাইয়ের যে সাংগঠনিক দক্ষতা সেটা কিন্তু বিরোধীদের নেই। তারা প্রার্থী বাছাই করতে পারছে না। গোটা রাজ‍্যে পঞ্চায়েতের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত এবং সেখানে এতো প্রার্থী। মনোনয়নের বিষয়টা একটা সাংঘাতিক ব‍্যাপার। এখানে কোথায় বিজেপি! কোথায় কংগ্ৰেস! কোথায় সিপিএম! সিপিএম একদা এই পঞ্চায়েত ব‍্যবস্থাটা তৈরি করেছিল। এবং রাজনৈতিক কতৃত্ব তাদের দখলে ছিল। এখন নেই। বিজেপি সেটা জানে। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বে রণকৌশল হল, এখন যেনতেন প্রকারে এইটা প্রদর্শন করা যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে না। এখানে অশান্তির ভোট হচ্ছে। ঠিক যেমনটা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে খালেদা, বিএনপি, জামাতদের অভিযোগ থাকে, যে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ভোট হচ্ছে। একটা পঞ্চায়েত স্তরেও কিন্তু সেই একই অভিযোগ বিজেপি বা বিরোধীরা করছে। 

অবশ্য বিজেপির থেকে সিপিএমের প্রার্থী দেয়ার ব‍্যাপারে পরিস্থিতিটা বোধহয় ভালো। সিপিএম আর যাইহোক জেলা পরিষদে প্রার্থী নাম অনেকটাই ঘোষণা করে দিয়েছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে সিপিএম কিন্তু এই তাড়াহুড়ো করে নির্বাচন ঘোষণায় যতটা বিজেপি বিরোধিতা করছে ততোটা করছে না। কারণটা সাংগঠনিক ভাবে বোধহয় সিপিএমের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা কাজ এগিয়ে রেখে ছিল। তাদের পুরনো স্ট্রাকচারটাকে তাহলে কী সিপিএম একটু রিভাইব করতে পারছে? সে আমি শেষ কথা বলার অবস্থায় নেই। কিন্তু এইটুকু বলা যায় যে, বিরোধীদের যদি অবস্থা খারাপ হয়। তবে তারমধ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কিন্তু বিজেপিরই।

আরও পড়ুন: নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের সাফল্যের রহস্য কী?

একথা সত‍্য যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ট্রাডিশনালি পশ্চিমবঙ্গে খুব হিংসা হয়। ডায়মন্ডহারবারেও হয়েছিল বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়। সেটা তখন একটা জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এখন সেটা গোটা রাজ‍্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর যেহেতু প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলেরই সবথেকে বেশী দখলদারি। কেননা তৃণমূল শাসক দল। এবং তৃণমূলের প্রার্থী হলে জেতার সম্ভাবনা ভেবে নিয়ে সবাই প্রার্থী হতে চাইছে। এবং পঞ্চায়েত স্তরে প্রার্থী হতে চাইছে। কেননা ভাবছে প্রার্থী হলে তাদের কিছু আর্থিক এবং রাজনৈতিক লাভ হবে। এখন এই কারণে গন্ডগোল বেঁধে যাচ্ছে। এবং সেই গন্ডগোলটাকে তুলে ধরতে চাইছে বিজেপি। তার প্রতিবাদে এখন রাস্তায় নেমে পড়েছে সৌমিত্র খাঁ থেকে শুরু করে বিজেপির বিভিন্ন সাংসদ। এটাই একটা বড় অ্যাজেন্ডা। জেলা প্রসাশনের কাছে রাজ‍্য নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এখন রাজ‍্যপাল রিপোর্ট চাইছে। তার কারণটা হচ্ছে বারাবণীতে মনোনয়ন দেয়া নিয়ে সংঘাত হয়েছে। এবং বারাবণীর বিডিও অফিস চত্ত্বরে টিএমসি, সিপিএম সংঘর্ষ হয়েছে। বামেদের মনোনয়ন তুলতে বাধা দিচ্ছে বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের হস্তক্ষেপে বিরোধীদের মনোনয়ন জমা পড়ছে। এখন এরকম একটা পরিস্থিতিতে অশান্তির আবহটাকে বাকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর সমস্ত গ্ৰামাঞ্চলে তুলে ধরতে উদ্বত্ত এখন বিজেপি। তারা দেখাতে চাইছে, পঞ্চায়েতে তৃণমূলের এই সন্ত্রাস শান্তির নির্বাচনকে স্থাপিত করছে না। 

সুতরাং জয়ের ইস‍্যু নয়। আসল ইস‍্যুটা বিজেপি করতে চাইছে সন্ত্রাস। কিন্তু এ ব‍্যাপারে তো কোনো সন্দেহ নেই, যে আসলে কিন্তু সাংগঠনিক ক্ষমতা বা দক্ষতা নেই বলেই প্রার্থী বাছাইয়ের যে রণকৌশল সেটা বিজেপি রাজ‍্য নেতারা করতে পারলো না। এবং তারা ভোট হওয়ার আগেই কার্যত পরাজয় স্বীকার করে নিচ্ছে। সেটাও কিন্তু সাংঘাতিক দুর্বলতা। সুতরাং এখন অনেক ঘটনাই ঘটবে। আপাতত পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরগরম।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Donald Trump | যুদ্ধ বিরতি চলছে দয়া করে লঙ্ঘন করবেন না, ঘেমেনেয়ে ল্যাজেগোবরে ট্রাম্প
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | আকুতিই সার দু'পক্ষই ভাঙল যু/দ্ধবিরতি, এবার কী করবেন ট্রাম্প?
00:00
Video thumbnail
Iran-America | ট্রাম্পের যুদ্ধ বিরতি ঘোষণার পরই এ কী কাণ্ড ঘটাল ইরান?
00:00
Video thumbnail
B2 Spirit | যুদ্ধে আমেরিকার বিপরীত মেরুতে তুরস্ক, বিমান হানার পাইলটদের মন মজেছে টার্কি স্যান্ডউইচে
00:00
Video thumbnail
Donald Trump | সিজ ফায়ার ব্রোকার ট্রাম্পের যু/দ্ধবিরতি-কাকুতি কেন? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
RSS | BJP | হিন্দু ভোটের তত্ত্ব বুঝিয়ে লাভ নেই, RSS-এর কড়া বার্তা বিজেপি নেতৃত্বকে
03:52
Video thumbnail
Indigo | জাতের নামে বজ্জাতি এবার ইন্ডিগো উড়ানে, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
03:13
Video thumbnail
Iran-Russia | ইরানে সঙ্গে কেন যুদ্ধে জড়াল না রাশিয়া? কী বললেন পুতিন? দেখুন বড় খবর
03:15
Video thumbnail
India-Bangladesh | চুক্তি শেষ ২০২৬-এর নতুন করে বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা জলচুক্তি করবে ভারত?
04:25
Video thumbnail
Donald Trump | সিজ ফায়ার ব্রোকার ট্রাম্পের যু/দ্ধবিরতি-কাকুতি কেন? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
06:21