নয়াদিল্লি: মিডিয়া ওয়ান নামে একটি দক্ষিণী সংবাদ মাধ্যমের প্রচার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত অপদস্থ হল কেন্দ্রীয় সরকার। এই মর্মে কেন্দ্রের মুখবন্ধ খামে যুক্তি প্রদর্শনের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। শীর্ষ আদালত ভর্ৎসনা করে বলেছে, অপরাধীদেরও কারণ জানিয়ে দেওয়া হয়।
বুধবার মালয়ালম নিউজ চ্যানেল মিডিয়া ওয়ান নিষিদ্ধ করা নিয়ে একটি মামলা ছিল সুপ্রিম কোর্টে। চ্যানেলের পক্ষ থেকে কেরালা হাইকোর্টের একটি নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে মামলা করা হয়। কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক চ্যানেলটির সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে। যুক্তি হিসেবে সম্প্রচার মন্ত্রক বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে সিকিউরিটি ছাড়পত্র না মেলায় তাদের আপলিঙ্কিং অনুমতি অর্থাৎ সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: Anubrata Mandal: দিল্লি ও কলকাতায় সুকন্যা-সহ কেষ্ট ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তিকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূ়ড় এবং হিমা কোহলিকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চে এদিন শুনানি ছিল। চন্দ্রচূড় বলেন, সিকিউরিটি ছাড়পত্রের অনুমোদন বা বাতিলের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে। যদিও তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয় কিন্তু তৃতীয় পক্ষ। লাইসেন্স দেওয়াটা সম্প্রচার মন্ত্রকের এক্তিয়ারে পড়ে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, তাহলে সিকিউরিটির ছাড়পত্র কিংবা বাতিল কীসের ভিত্তিতে করা হয়েছে, তা জানার অধিকার কি একজন নাগরিকের নেই?
কেন্দ্রের পক্ষে উপস্থিত অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কে এম নটরাজকে তিনি বলেন, নিরাপত্তার ছাড়পত্র বা বাতিল তৃতীয় পক্ষ দিতে পারে। কিন্তু, কাউকে যদি ছাড়পত্র না দেওয়া হয়, তাহলে সেই ব্যক্তির উপশমের রাস্তা কী? এই মামলায় কেন্দ্রের তরফে কিছু তথ্য মুখবন্ধ খামে কেরালা হাইকোর্টে পেশ করা হয়েছিল। যেখানে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিষয়টি উল্লেখ করা ছিল। যেখানে মিডিয়া ওয়ানকে এই কারণগুলি সম্বন্ধে ঘূণাক্ষরেও জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেছেন, আদালতের মর্মার্থই হল দুপক্ষের কাছেই তথ্য সম্পর্কে অবহিত করা। একের যুক্তি অপরের কাছে প্রকাশ করা। আপনারা (কেন্দ্র) বলছেন না যে, ওরা আইন ভঙ্গকারী। এমনকী আপনি যখন চার্জশিট পেশ করেছেন তখনও তাতে সবকিছু খোলসা করে লেখা থাকাই উচিত। অথচ এখানে সিকিউরিটি ছাড়পত্র নিয়ে যখন আপনারা কথা বলছেন, তখন আপনাদেরও তথ্য কী আছে তা জানানো উচিত। আপনারা কোন তথ্যের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন, তা জানানো উচিত কিনা তা কি অস্বীকার করতে পারেন?
বিচারপতি আরও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা আইনে কাউকে আটক করতে গেলেও তাকে কারণ জানাতে হয়। আর এখানে আপনি বলে দিলেন যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সিকিউরিটি ছাড়পত্র দেয়নি! বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তিনি এও বলেন, যাকে সিকিউরিটি ছাড়পত্র দেওয়া হল না, তাকেও জানার সুযোগ দিতে জাতীয় নিরাপত্তা ভঙ্গ আসলে কী? আদালত আরও বলেছে, সম্প্রচারের স্বত্ব পুনর্নবীকরণের বিষয়টি একটি চ্যানেলের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনুমতি পেতে পেতে তাকেও চ্যানেলের জন্য বিনিয়োগ চালিয়ে যেতে হয়েছে। কর্মী নিয়োগ হয়েছে। বাজারে একটি সুনাম প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে।
আদালত আরও একটি বিষয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। সেটা হল, ২০১৬ সালে যখন এই চ্যানেলকে শোকজ নোটিস দেওয়া হয়েছিল, তখন তাদের বিরুদ্ধে কোনও বিরূপ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন কোনও ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। বিচারপতি এইসব ব্যাপারে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল নটরাজকে আলোকপাত করতে বলেছেন।