নয়াদিল্লি: সমলিঙ্গে বিবাহের (Same Sex Marriage) স্বীকৃতি চাওয়া নিয়ে যে সমস্ত মামলা দেশের বিভিন্ন হাইকোর্টে ঝুলে (Case Pending in High Courts) রয়েছে, তা নিজের কাছে হস্তান্তর করে নিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। এসংক্রান্ত যাবতীয় মামলার শুনানি দেশের শীর্ষ (Apex Court) আদালতেই হবে। সেই কথাই আজ শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পি এস নরসীমা এবং বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালার ডিভিশন বেঞ্চ (A Bench of Chief Justice D Y Chandrachud, Justices P S Narasimha and J B Pardiwala) কেন্দ্রীয় সরকারকেও (Central Government) একটি নির্দেশ দিয়েছে এদিন। আগামী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে কেন্দ্রকে সমলিঙ্গে বিবাহ সম্পর্কে মতামত জানাতে হবে। তারপর আগামী ১৫ মার্চ মাসে দেশের শীর্ষ আদালত সমলিঙ্গে বিবাহের স্বীকৃতি সংক্রান্ত সব মামলার শুনানি চালাবে।
আরও পড়ুন: Operation Theatre: অপারেশন থিয়েটারে রোগীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ
এসংক্রান্ত মামলার সমস্ত আবেদনকারীও সুপ্রিম কোর্টের কাছে এমনটাই আর্জি জানিয়েছিলেন। মামলার সমস্ত আবেদনকারীর (Petitioners) নাম নথিভুক্ত করার জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশও দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আদালত একথাও বলেছে, যে সমস্ত আবেদনকারী আইনজীবী ভাড়া করতে পারবেন না, কিংবা দিল্লি আসতে পারবেন, তাঁদেরকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের (Virtual Platform) মাধ্যমে উপস্থিত হওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া হবে। আবেদনকারীকে সেই মতো লিঙ্ক পাঠাবে আদালত।
২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর দুই সমকামী যুগল সুপ্রিয় চক্রবর্তী এবং অভয় ডাং মামলা দায়ের করেছিলেন আদালতে। তথ্যগতভাবে তাঁরাই দেশের প্রথম সমকামী যুবক। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁরা বিয়েও সেরে ফেলেছেন অনুষ্ঠান করে। আদালতের সামনে দ্বারস্থ হওয়ার একটাই কারণ, তাঁদের শুভপরিণয়তে বিশেষ বিবাহ আইনের স্বীকৃতি চান তাঁরা। এই সংক্রান্ত আরও একটি উদাহরণ রয়েছে। দীর্ঘ সতেরো বছর ধরে সম্পর্কে থাকার পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন পার্থ ফিরোজ মালহোত্রা এবং উদয় রাজ। আদালতের কাছে তাঁদের স্বীকৃতি চাওয়ার কারণ হল, তাঁরা যে দু’টি শিশুকে লালন-পালন করছেন, তাঁদের পিতা-মাতা (Parents) হতে চান। কিন্তু আইনি স্বীকৃতির (Legal Recognition) অভাব সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এরকম অনেক মামলা ঝুলে রয়েছে বিভিন্ন হাইকোর্টে। সেই সংক্রান্ত মামলা নিয়ে জনস্বার্থ মামলা (Public Interest Litigation – PIL) হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের শীর্ষ আদালত সমলিঙ্গে বিবাহের স্বীকৃতির সমস্ত মামলা নিজের হাতে তুলে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, সমকামিতা একসময় ভারতে অপরাধ বলে গণ্য হলেও, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় সংবিধানের সেই ধারাতে পরিবর্তন এসেছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অনুসারে এখন আর সমকামিতা অপরাধ নয়। কিন্তু, বিষয় হল সংবিধান সমকামিতাকে স্বীকৃতি দিলেও নিত্যদিনকার অপমান থেকে মুক্ত হয়নি দেশের সমকামী সমাজ (LGBTQI community )। বিভিন্ন জায়গাতে তাঁদের হেনস্তা, নির্যাতন এবং অত্যাচারেরও শিকার হতে হয়। কেন্দ্রকে দিল্লি হাইকোর্ট (Delhi High Court) সমকামী বিবাহ প্রসঙ্গে যখন তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের জবাব ছিল, সমকামিতা ভারতীয় সংস্কৃতি কিংবা আইনের অংশ কোনওদিনই ছিল না। কিন্তু এটাও বিষয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমকামিতা এবং সমকামী বিবাহ আইনত স্বীকৃত। এখন দেখার কেন্দ্র কী জবাব দেয় এক্ষেত্রে এবং দেশের সুপ্রিম কোর্ট কোন পথে হাঁটে।