বারাসত: এখনকার আধুনিক সমাজে দাঁড়িয়েও কিছু ঘটনা আমাদের অবাক করে দেয়। একজন এইচআইভি ভাইরাসে (HIV Virus) আক্রান্ত শিক্ষককে সরিয়ে দেওয়া হল। এ কেমন সমাজ? যেখানে একজন শিক্ষক তাঁর পরিচয় গোপন না করেও হাসি মুখে সমাজে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে এমন পরিণতি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেছিলেন আজন্ম এইচআইভি আক্রান্ত সুনিতা আর সৌমিত্র। বারাসতের একটি বেসরকারি স্কুলে স্পেশাল এডুকেটর পদে চাকরি করতেন সৌমিত্র। তবে এই বিষয়টি এখন এতীত। সংবাদমাধ্যমে তাঁদের এইচআইবি আক্রান্ত হওয়ার কথা সম্প্রচারের পরই চাকরি হারান সৌমিত্র।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি চারহাত এক হওয়ার পর কাজে ফেরেন দম্পত্তি। সুনিতার কাজের জায়গায় তেমন কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু সৌমিত্রকে তাঁর কর্মস্থল থেকে প্রথমে বলা হয়, আপতত ৯০ দিনের জন্য বাড়িতে থাকতে। পরে যোগ করা হয় দূরে কোথাও গিয়ে থাকতে। এক কথায় বলা যায় চাকরি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় সৌমিত্রকে।
জানা গিয়েছে, তাঁকে এই নির্দেশ যিনি দিয়েছিলেন তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। যেখানে এইচআইভি কোনও ছোঁয়াচে রোগ না, সেখানে একজন চিকিৎসক কী করে এমন নির্দেশ দিতে পারেন। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে নানান প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ২০১৭ সালে এইচআইভি বিলে (HIV & AIDS Act) স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি যদি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাঁকে চাকরি থেকে সরানো যাবে না। কিন্তু তারপরেও সৌমিত্র চকরি হারাল, এর বিচার তাহলে কে করবে, উঠছে প্রশ্ন।
এই ঘটনার পরই তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই দম্পত্তির একটি ছবি পোস্ট করে এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেন। একইসঙ্গে সৌমিত্রকে অবিলম্বে কাজে ফেরানোর দাবিও জানান তিনি। এমন ঘটনার সাক্ষী থাকল গোটা শিক্ষিত সমাজ। শুধু সুনিতা-সৌমিত্র ছাড়াও বহু তরুণ-তরুণী একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন, যদি তাঁরা কখনও তাঁদের পরিচয়ের কথা সমাজে জানিয়ে বিয়ে করেন, তাহলে তাঁদের পরিণতিও কি সৌমিত্রর মতো হবে? যদিও এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা।