নৈনিতাল: সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) আপাতত স্বস্তি মিলতেই উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) হলদোয়ানি বস্তিতে (Haldwani Slum) এখন আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ঢেউ বয়ে চলেছে। উচ্ছেদের (Eviction) প্রহর গোনার কয়েকদিন আগে হাইকোর্টের (Uttarakhand High Court) রায়ের উপর সর্বোচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ দেওয়ায় আনন্দাশ্রু চেপে রাখতে পারেননি অনেকেই। অন্ধকার ভবিতব্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া মানুষগুলোর বুকে ফের নতুন করে বাঁচার আলোর বিন্দু জেগে উঠেছে। তাঁদের সকলেরই এককথা, আমাদের আশা, এবার অন্তত আমরা সুবিচার পাব।
কথা বলতে গিয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না ২৬ বছরের ফতিমা খাতুন। ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসিতে বললেন, এটা স্বস্তির চোখের জল। আমরা সবাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিলাম। এই ঠান্ডা কোথায় যাব? কোথায় থাকব? খাব কী? বাড়ির বাচ্চা-বৃদ্ধদের কী হবে? বস্তির আরেক বাসিন্দা মৌলানা মুকিম বললেন, আমাদের সকলের কাছে জমির কাগজপত্র আছে। কয়েক দশক ধরে আমরা এখানে আছি। তারপরেও আমাদের সন্দেহ করা হচ্ছে, আমাদের টার্গেট করা হচ্ছে। যাই হোক এবার মনে হচ্ছে, আমরা সুবিচার পাব। ৩৮ বছরের জুনেইদ খান বললেন, তাঁর স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। এই অবস্থায় কোথায় যাবেন? এখন যেন একটু আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।
আরও পড়ুন: Haldwani Eviction: হলদোয়ানি নিয়ে কলকাতার রেলবস্তির ছবি দিয়ে বিজেপির ‘অপপ্রচার’
জমি-বিতর্কের ইতিহাস
২০০৭-২০১৬: উত্তর-পূর্ব রেল জবরদখল করা ২৯ একর জমির দাবি জানায়।
২০১৩: বাঁভুলপুরার কাছে গাউলা নদীর উপর সেতু ভেঙে পড়ে। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেআইনি খনিতে খননকার্যের ফলে সেতু ভেঙে পড়েছে। উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টে এনিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা হয়।
২০১৬: হাইকোর্ট রেলের ২৯ একর জমি সম্পূর্ণ খালি করার নির্দেশ দেয়।
২০১৭: জানুয়ারি মাসে হাইকোর্ট বলে ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জমি খালি করতে হবে। যদিও এনিয়ে কোনও নোটিস জারি হয়নি।
১৮ জানুয়ারি, ২০১৭: সুপ্রিম কোর্ট ওই নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে, রেল যে জমির দাবি করেছিল তা চিহ্নিতকরণ করা ছিল না। কোনটা রেলের ও কোনটা ব্যক্তিগত জমি তার নির্দিষ্ট রূপরেখা ছিল না।
২০২১: রেল ৪৩৬৫ জনকে ৭৮ একর জমি খালি করার নোটিস দেয়। যাতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের উৎখাত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
প্রশ্ন উঠছে, আগের ২৯ একরের দাবি কী করে ৭৮ একর হয়ে গেল? আর কী করেই বা রাজ্য মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইল। কারণ ২৯ একরের বাইরের জমি পুরোটাই রাজ্যের। এর জবাব মেলেনি।
২০২২: ৭৮ একর জমি খালি করার জন্য উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টে নতুন করে জনস্বার্থ মামলা দায়ের।
২০ ডিসেম্বর, ২০২২: উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট জমি খালি করার নির্দেশ জারি করে।
১ জানুয়ারি, ২০২৩: বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি খালি করে দেওয়ার নোটিস দেওয়া হয়। অন্যথায় জোর করে জমি দখলের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।
৫ জানুয়ারি, ২০২৩: সুপ্রিম কোর্ট ফের স্থগিতাদেশ (Stay Order) দেয় এবং পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে ৭ ফেব্রুয়ারি।
বাসিন্দাদের মতে, এর পিছনে রয়েছে বিজেপির রাজনৈতিক চাল। কারণ ২০২২ সালের উত্তরাখণ্ড বিধানসভা ভোটে হলদোয়ানি থেকে কংগ্রেস প্রার্থী সুমিত হৃদয়েশ জেতেন। বিজেপি প্রার্থী ৭৮১৪ ভোটে হেরে যান। হলদোয়ানির এই মুসলিম বস্তি আসলে কংগ্রেসের এক বিরাট ভোট ব্যাঙ্ক বলেই বদলা নিতে চাইছে গেরুয়া শিবির। হলদোয়ানির এই বস্তিতে প্রথম বসবাস শুরু হয় স্বাধীনতারও আগে। ইতিহাস বলে, সবথেকে নবীন বাসিন্দাও এসেছেন ১৯৭০ সাল নাগাদ। সেই বাসিন্দাদেরই ভাগ্য এখন ঝুলে রয়েছে আদালতের রায়ের উপর।