Placeholder canvas

Placeholder canvas
HomeদেশGST: ভরপেট নাও খাই, রাজকর দেওয়া চাই 

GST: ভরপেট নাও খাই, রাজকর দেওয়া চাই 

Follow Us :

‘আরো আঘাত সইবে আমার…’। রবীন্দ্রনাথের সেই গানের কলি আজ ভারতবাসীর বুকে বাজছে। করোনার ধাক্কা, দেশজুড়ে বেকারির হতাশা, জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া দামের জাঁতাকলে পড়ে দেশের মানুষের ৫৬ ইঞ্চির বুকের খাঁচা চুপসে চুন হয়ে যাচ্ছে। প্রচার-দাপটের ঢক্কানিনাদের নাচে তাল মেলাতে গিয়ে সাধারণ মানুষের স্বখাতসলিলে ডুবে মরার দশা। সব কিছু বদলে যাবে, গরিবির শেষ হবে, ভারতের মানচিত্রটি সটান মঙ্গলে পৌঁছে যাবে, এই স্বপ্নের বেওসায়িদের ফাঁদে পা দিয়ে এখন মানুষের শিরে শনি বাসা বেঁধেছে। আপাদমস্তক করের শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে মধ্যবিত্তদের যখন প্রাণ যায় যায় অবস্থা, তখন ফুলেফেঁপে উঠছে কিছু পেটোয়া শিল্পপতি। আর খেটে খাওয়া মানুষ জিএসটির জালে খাবি খাচ্ছে সকাল থেকে বিছানায় যাওয়ার আগে পর্যন্ত।
জিএসটির নাগাল ছেড়ে মুক্তির কোনও রাস্তা নেই। কোন গলি দিয়ে পালাবেন! মাথা থেকে পায়ের তলা পর্যন্ত জিএসটির কারাগারে তালাবন্দি আমরা। অবসর নেওয়ার পর চুলগুলো যেন বেশি পেকে গিয়েছে। শ্যালিকা বলল, জামাইবাবু একবার কলপ করে নিন। আধুনিক ভাষায় যাকে হেয়ার ডাই করা বলে। সালোনে যেতেই যা হাঁক দিল, তাতে চুলগুলোই সব উঠে যাওয়ার জোগাড়। চুলের রংয়েও জিএসটি ২০ শতাংশ রংবাজি নিয়ে বসে আছে। 
চুল তো রং না করলেও চলে। কিন্তু দাঁত না মেজে কী করে থাকবেন? খাসির মাংস খাওয়ার পয়সা না জোটায় অন্তত কাটোয়ার ডাঁটা চিবনোর জন্য তো সুস্থ দাঁত চাই! একগাল শ্বেতশুভ্র হাসি দুই চোয়ালের লকারে লুকিয়ে রাখার জন্য টুথপেস্ট বাছাই করে কেনেন। জানেন কি ওই হাসির মূল্য চোকায় ৫ শতাংশ জিএসটি। 
বিভিন্ন কারণে এখন চোখের জ্যোতি তাড়াতাড়ি কমে আসে। আসলে বাঙালি থুড়ি ভারতবাসীরই দূরদৃষ্টি কমে আসছে। যে কজনের তা আছে, তাঁরা বিদেশে থাকেন, সেখান থেকেই নোবেল-টোবেল জেতেন। এখানে তো কুলিকামিন ‘মিত্রোঁ’রা বসবাস করেন। কোথাও যাওয়ার নজরই নেই। ফলে নজর নিশানায় রাখতে চশমা করাতে গিয়েও জিএসটির পোকা পড়বে চোখে। ৫ শতাংশ কর দিয়ে দৃষ্টি বাড়াতে হবে।
দাঁত মেজে অনেকেরই দাড়ি কামানোর অভ্যাস। অনেককে তো কাজের জন্য রোজ দাড়ি কামানো বাধ্যতামূলক। একঘেঁয়ে জীবনের মুখে একগাল ফেনা তুলতে গেলেও খসাতে হবে ৫ শতাংশ জিএসটি। মোবাইলের যুগে হাত খালি রেখে হেডফোনে কথা বলতেও গচ্চা যায় ১৮ শতাংশ। এটা শোনার পর নিশ্চয়ই ‘আচ্ছে দিন’কে বিশেষ ভাষায় ডাকতে ইচ্ছে করছে। অপেক্ষা না করে বলেই ফেলুন, কারণ মোবাইলের জন্যও ১৮ শতাংশ গালি বাকি আছে।
পারফিউমে ২৮ শতাংশ, ত্বকের যত্নের জন্য ২৮ শতাংশ। কী, এবার গা জ্বলে যাচ্ছে তো! অন্যদের কাছে চকচকে ত্বক দেখাতে গিয়ে জিএসটির পরিমাণ শুনে ‘বেশরম রং’য়ের প্রতি অ্যালার্জি জন্মাচ্ছে না! বিরাট কোহলির দেখাদেখি হাতে উল্কি আঁকার খরচে কত পরিমাণ জিএসটির সুচ ফোটে জানেন! ১৮ শতাংশ। শখের হাতঘড়ি ১৮, জামা-প্যান্ট ৫ শতাংশ। তবে সংসার চালাতে গিয়ে ঢিলে হয়ে যাওয়া প্যান্ট পেটের কাছে আটকে রাখতে হলে বেল্টের খরচে যুক্ত হবে ১২ শতাংশ।
আর লজ্জার হলেও না বলে থাকা যাচ্ছে না, জন্মদিনের পোশাক ঢাকতে লজ্জাবস্ত্রের খরচেও দিতে হচ্ছে ১২ শতাংশ সরকারি কর। যেটা কানে গেলে আদিম মানুষরাও লজ্জা পেয়ে বলত, এর চেয়ে তো গাছের বাকল ভালো ছিল। আমাদের দেশ যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই পথে এবং আলোকবর্ষের গতিতে এগোতে গেলে পায়ে তো কিছু পরতে হবে। নইলে উন্নয়নের কাঁটায় সেপটিকও তো হতে পারে। সেই ধনুষ্টঙ্কারের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতেও ১৮ শতাংশ জিএসটির ফিতে পদযুগলকে বেঁধে রাখবে ভোকাল ফর লোকালের ডাকে। ওইজন্যই বোধহয় রামচন্দ্র যাওয়ার আগে খড়ম জোড়া ভরতভাইয়ের হাতে দিয়ে গিয়েছিলেন। কারণ ত্রিকালদর্শী নিজেই বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁকে মূর্তি গড়ে মন্দির বানালেও ভারতে এই খড়মের জন্য একদিন তাঁকেও জিএসটি দিতে হবে। 
সারাদিনের কাজ ফুরল, নটেগাছটি মুড়োল। এখন চাড্ডি ভাত খেয়ে শুয়ে ইয়ের পালা। নিরানন্দ জীবনে একটু বিনোদনমাত্র। শুনবেন! আপনার সংসারকে ছোট ও সুখী রাখতেও ১২ শতাংশ জিএসটি খসে পড়ছে। সব শুনে সুখী হলেন কি না অবশ্যই জানাবেন। 
বিজেপি সরকারে আচ্ছে দিনে ভরপেট নাও খাই, রাজকর দেওয়া চাইটাই দস্তুর। শুধু পেট্রল-ডিজেল ছাড়া। ওইটাই মোদি-শাহ সরকারের বিষনজরের বাইরে। কারণ, ও তো এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী পারদ। উপর দিকেই যার গতি। ফলে, ওই যে কবির গানেই আছে না, ‘জ্বলে উঠুক সকল হুতাশ, গর্জি উঠুক সকল বাতাস…’ তারও উপায় নেই। কারণ, ‘আরো আঘাত সইবে আমার’…।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments