জয়পুর: রাজস্থানের (Rajasthan) কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের (CM Ashok Gehlot) বিরুদ্ধে ‘প্রত্যক্ষ বিদ্রোহ’ ঘোষণা করে একদিনের অনশন (One Day Fast) করছেন দলেরই নেতা শচীন পাইলট (Sachin Pilot)। যাকে কেন্দ্র করে ভোটমুখী রাজস্থানের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। দলের হাইকমান্ড (Congress) পাইলটের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারে বলেও কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে। কারণ, দলের বরিষ্ঠ নেতাদের উপদেশ-পরামর্শ কানে না তুলে পাইলটের এহেন আচরণকে খোদ গেহলট ‘দলবিরোধী কাজ’ (Anti Party Activity) বলে মন্তব্য করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই ঘটনায় যথেষ্ট অসন্তুষ্ট। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) জল মাপছে। বিভিন্নভাবে পাইলটের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্ব।
জয়পুরে মহাত্মা গান্ধীর ছবির সামনে শহীদ স্মারকস্থল তৈরি করে দিনভর অনশনে বসেছেন। গেহলট সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, পূর্বতন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে জমানার দুর্নীতির তদন্তে গড়িমসি করছেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: Saumitra Khan | আইসিকে অকথ্য ভাষায় হুমকি, ফের বিতর্কে বিজেপি সাংসদ
আগামী শীতেই রাজ্যে নির্বাচন। তার আগে ফের একবার কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের (Chief Minister Ashok Gehlot) বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত শচীন পাইলট (Sachin Pilot)। পূর্বতন বিজেপি (BJP) সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি তুলে একদিনের অনশন (Oneday Fast) চালাচ্ছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজেশ পাইলট-পুত্র শচীন। রাজপুত রাজনীতিতে গেহলট-পাইলট দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। সেই দ্বন্দ্ব ঠেকাতে এর আগে মধ্যস্থ হতে হয়েছে গান্ধী পরিবারকেও (Gandhi Family)। কিন্তু, দুজনের মধ্যে সদ্ভাব জাগাতে ব্যর্থ হাইকমান্ড। মঙ্গলবার ফের দুর্নীতি ইস্যুতে সরব হয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই অনাস্থা প্রকাশে অস্বস্তিতে পড়েছে কংগ্রেস (Congress)।
রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) যুব ক্যাডারের তরুণ তুর্কি ৪৫ বছরের শচীন পাইলটের অভিযোগ, এর আগে বসুন্ধরা রাজে নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের আমলে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু, গেহলট সেসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেননি। সরকার যাতে সেইসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তার জন্যই শচীনের এই প্রতিবাদ আন্দোলন। পাইলট বলেন, ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল বিজেপির দুর্নীতি। কিন্তু, ক্ষমতায় আসার পর থেকে একটি দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত হয়নি। এতে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। আবগারি মাফিয়া, অবৈধ খনি, বেআইনি জমি দখল এবং ললিত মোদির হলফনামা মামলায় সরকার একটি পা বাড়ায়নি।
রবিবার গেহলটের পুরনো ভিডিয়ো ছবি দেখিয়ে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান মুখ্যমন্ত্রীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান পাইলট। ওই ভাষণে গেহলটকে বসুন্ধরার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং কুশাসনের অভিযোগ তুলতে দেখা যাচ্ছে। পাইলট বলেন, এসব ব্যাপারে কেন এখনও কোনও তদন্ত হল না? তাঁর দাবি, কংগ্রেস সরকারের হাতে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ আছে। কিন্তু, কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আগে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম আমরা, সেগুলো সম্পূর্ণ না করে নতুন নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের হাতে প্রমাণ আছে। এবার অন্তত পদক্ষেপ জরুরি। আর কিছুদিনের মধ্যেই নির্ঘণ্ট প্রকাশ হয়ে যাবে, আদর্শ আচরণবিধি চালু হয়ে গেলে কিছুই করার থাকবে না। মানুষের কাছে জবাব দিতে আমরা দায়বদ্ধ, বলেন রাহুল ব্রিগেডের নেতা।
রাজস্থানে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর গেহলটের সঙ্গে পাইলটের ক্ষমতা ভাগাভাগির পথে হাঁটে কংগ্রেস হাইকমান্ড। গতবছর দলের সভাপতি নির্বাচনের আগে ১০ জনপথের প্রথম পছন্দ ছিলেন গেহলট। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তখন এককথায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে বসেন। এবং স্বয়ং সোনিয়া গান্ধী তাঁকে ডেকে বোঝালেও অনড় থাকেন গেহলট। তার পর থেকেই রাজস্থান রাজনীতিতে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যান শচীন পাইলট। এবার অনশন কর্মসূচি করে ভোটমুখী রাজনীতিতে ভেসে ওঠার চেষ্টায় শচীন, এমনটাই মনে করছেন রাজনীতিক বিশেষজ্ঞরা।