দান্তেওয়াড়া: আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে ধ্বনি উঠল ভারত মাতা কি জয়। অন্যদিকে, মাওবাদী হামলায় (Maoist Attack) নিহত ১১ শহীদের স্ত্রী-পরিবারের বুক ফাটা কান্নায় ভিজে উঠল কাঠফাটা মাটি। নিহত ১০ জওয়ান ও এক গাড়ি চালকের মৃতদেহর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠানের পর তাঁদের দেহ এক-এক করে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল (CM Bhupesh Baghel) এক শহীদের দেহবাহী কফিন কাঁধে তুলে নিয়ে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেন। তাঁর সঙ্গে মন্ত্রিসভার অন্য মন্ত্রীরাও।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন তাঁদের বলিদান বৃথা যাবে না। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই আরও জোরদার করবে সরকার। নভেম্বরেই ছত্তিশগড়ে (Chhattisgarh Assembly Vote 2023) হতে চলেছে বিধানসভা ভোট। তার আগে গতকাল বুধবার মাওবাদী হামলায় ১১ জনের মৃত্যু হয়। প্রায় ৪০ কেজি বিস্ফোরক ব্যবহার করে একটি গাড়ি উড়িয়ে দেয় মাওবাদীরা। এদিন দান্তেওয়াড়ার (Dantewada) কারলি পুলিশ লাইনে তাঁদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান জ্ঞাপন করে রাজ্য সরকার। অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাম্রধ্বজ সাহু, এমপি দীপক বৈজ এবং পুলিশের কর্তারা।
আরও পড়ুন: Sudan | সুদান থেকে উদ্ধার ১১০০ জন ভারতীয়, পাঠানো হল আরও একটি জাহাজ
মুখ্যমন্ত্রী নিহতদের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেন। তাঁদের সবরকমের সাহায্যের আশ্বাস দেন বাঘেল। সাংবাদিকদের বলেন, এবার মাওবাদীদের ডেরায় ঢুকে লড়াই চলবে। গত চার বছরে নকশাল অধ্যুষিত এলাকায় অন্তত ৭৫টি নিরাপত্তা শিবির খোলা হয়েছে। মাওবাদীরা পিছু হটছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের কাজে আস্থা-ভরসা বেড়েছে। তাতেই ওদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, বুধবার দান্তেওয়াড়ার অরনপুর এলাকায় দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি বিস্ফোরক ফাটিয়ে ১০ নিরাপত্তারক্ষী ও একজন গাড়ি চালককে খুন করে মাওবাদীরা। মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল গতকালই সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রয়েছে। নকশালদের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ের শেষ পর্ব চলছে। কাউকে রেয়াত করা হবে না। যে নিরাপত্তারক্ষীরা মারা গিয়েছেন তাঁরা ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ডের কর্মী। ডিআরজি হল মাওবাদী দমনে রাজ্য সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী।
অরনপুরে মাওবাদীরা ঘাপটি মেরে আছে, এই খবর পেয়ে ডিআরজির একটি দল গ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। তল্লাশি অভিযানে কিছু না পেয়ে তারা যখন সদর দফতরের দিকে ফিরে আসছিল, তখন অরনপুর রোডের উপর আইইডি বিস্ফোরণ হয়। যাতে একটি মিনিভ্যানে থাকা ১০ নিরাপত্তারক্ষী ও একজন পথচারীর মৃত্যু হয়।
অরনপুর এলাকাটি আদিবাসী অধ্যুষিত বস্তার অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। প্রায় বছরখানেক শান্তি থাকার পর ফের মাওবাদী হানায় মৃত্যুমিছিলে নড়েচড়ে বসেছে কংগ্রেস সরকার। বস্তারের আইজিপি পি সুন্দররাজ বলেন, দারভা ডিভিশনে মাওবাদীরা রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে একটি খবর মেলে। ঘটনার পর কর্মীদের দেহ সেখান থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। ওই এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে।
ঘটনার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। কেন্দ্রের তরফে সবরকমের সাহায্যের আশ্বাস দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও কঠোর ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা করেছিলেন।