কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: আর তর সইল না দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা আয়কর দফতর এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির। অপারেশন কমল বা অপারেশন মহারাষ্ট্র সফল হওয়ার পর ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই তাদের তলব পেলেন মুম্বইয়ের দুই বিরোধী রাজনৈতিক তারকা শরদ পাওয়ার এবং সঞ্জয় রাউত। আয়কর দফতরের নোটিস পেয়েছেন এনসিপি প্রধান পাওয়ার। ২০০৪, ২০০৯ এবং ২০২০ সালের সম্পত্তির হিসেব সংক্রান্ত নির্বাচনী হলফনামার ব্যাপারে নোটিস দেওয়া হয়েছে মহারাষ্ট্রের এই প্রবীণ রাজনৈতিক নেতাকে। আর বিজেপির বিরুদ্ধে সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের যে রাজনৈতিক নেতা সবচেয়ে বেশি সরব, সেই শিবসেনা সাংসদ এবং দলের অন্যতম মুখপাত্রকে শুক্রবার প্রায় দশ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। জমি কেলেঙ্কারি সংক্রান্ত মামলায় তাঁকে নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে ইডি।
মহারাষ্ট্রে পালা বদলের ক্লাইম্যাক্সের আগেই সঞ্জয়কে আর্থিক নয়ছয়ের মামলায় তলব করেছিল ইডি। শিবসেনা নেতা দুই সপ্তাহ সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু তর সয়নি। বৃহস্পতিবার বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের কাজে লাগিয়ে, একনাথ শিন্ডেকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েও বিশ্রাম নিতে পারেনি বিজেপি। একেবারে পরিকল্পিত চিত্রনাট্য মেনে পরের দিনই দুই নেতাকে তলব। এ তো আজ দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে, সিবিআই, ইডি, আয়করের মতো দফতরগুলি চলে কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গুলিহেলনেই। কংগ্রেস যখন কেন্দ্রের ক্ষমতায় ছিল, তখন এই সব সংস্থার বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলত তৎকালীন বিরোধী বিজেপি। আর এখন সেই অভিযোগ তুলছে বিজেপির বিরোধীরা। অবশ্য এই অভিযোগ যে একেবারে ভিত্তিহীন বা অমূলক, তাও নয়। মহারাষ্ট্রের সরকারকে কেন্দ্র করে গত দেড় সপ্তাহ ধরে যে মহানাটক হল, তার স্ক্রিপ্ট কিন্তু তৈরি হয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় দফতরেই। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। যতই বিজেপি নেতৃত্ব এর দায় এড়াতে চান না কেন।
আসলে ২০১৯ সালে পাওয়ারের চালেই কিস্তিমাত হয়েছিল মহারাষ্ট্রে। বহু বছরের জোটসঙ্গী বিজেপিকে ছেড়ে শিবসেনা জোট বেঁধেছিল এনসিপি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে বিরোধের জেরে বিজেপির সঙ্গ ছেড়েছিল শিবসেনা। দেবেন্দ্র ফরণবীস মাত্র দিন পাঁচেকের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। তারপর মহারাষ্ট্র বিকাশ আগাড়ি জোটের মুখ্যমন্ত্রী হন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। সাম্প্রতিক সংকটকালে তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, শরদ পাওয়ারের পরামর্শেই মুখ্যমন্ত্রী হতে রাজি হয়েছিলেন উদ্ধব। বিজেপিকে দেশের অর্থনৈতিক রাজধানীর ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতেই কৌশলী চাল চেলেছিলেন শরদ পাওয়ার।
আরও পড়ুন: Iran Earthquake: ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল দক্ষিণ ইরান, মৃত ৩
বস্তুত তখন থেকেই বিজেপির টার্গেট ছিলেন পাওয়ার এবং শিবসেনার সঞ্জয়। টার্গেট ছিল মহারাষ্ট্রের সরকারও। তিনবার চেষ্টা হয়েছিল সরকার ভাঙার। কিন্তু সফল হয়নি বিজেপি। এবার শিবসেনার অন্দরে বিদ্রোহ ঘটিয়ে কোটি কোটি টাকার খেলা খেলে মহারাষ্ট্রের কুর্সি থেকে উদ্ধবকে সরাতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। নতুন সরকার কতদিন টিকবে, তা পরের কথা। তবে বিজেপির প্রতিহিংসাপরায়ণতা যে চলবে, পাওয়ার এবং সঞ্জয়কে তলবের মধ্য দিয়েই তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। সঞ্জয় বলেছেন, আমি কোনও অন্যায় করিনি। তাই ইডির তলবে হাজিরা দিতে আমার আপত্তি নেই। তাই শুক্রবার হাজিরা দিয়েছি। দশ ঘন্টা ছিলাম সেখানে। ডাকলে আবার যাব। পাওয়ার ঠাট্টার ছলে বলেছেন, প্রেমপত্র পেয়েছি। আগামিদিনে মহারাষ্ট্রে এনসিপি, কংগ্রেস, শিবসেনার আরও অনেক নেতা এই ধরনের প্রেমপত্র পেলে অবাক হওয়ার মতো কিছু থাকবে না।