মহালয়ায় দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয় কেন? জানুন এই রীতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য

কলকাতা: পুজোর (Pujo) কাউন্টডাউন (CountDown) প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছে বললেই চলে। আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা। সামনেই মহালয়া (Mahalaya 2023) আর এদিনই পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে মাতৃপক্ষের শুরু হয়। মনে করা হয়, সেদিনই আক্ষরিক অর্থে দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2023) সূচনা হয়। পুরাণ থেকে মহাভারত, মহালয়া ঘিরে বর্ণিত আছে নানা কাহিনি। মহালয়ার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ রীতি। এই বিশেষ দিনেই দেবী দুর্গার চক্ষুদান (Devi Durga Chokkhu Daan) হয়। দুর্গাপুজোর সূচনা হয়, দেবীর চক্ষুদানের মাধ্যমেই।

রামায়ন অনুসারে, রাবণ বসন্ত কালে দেবী দুর্গার (Devi Durga) পুজো শুরু করেন, যা বর্তমানে বাসন্তী পুজো নামে পরিচিত। শ্রীরামচন্দ্র পরবর্তীকালে শরৎকালে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন, যা অকালবোধন নামে পরিচিত। এরপর থেকেই শারদীয়া দুর্গাপুজো চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। আগে রাজবাড়ি কিংবা জমিদার বাড়িতেই দুর্গাপুজো হত। রথের দিন কাঠামো পুজো হত এবং মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা প্রবেশের পর দেবীর চক্ষুদান পর্ব হত। যেহেতু মহালয়ার দিন দেবীপক্ষের সূচনা হয়, তাই পরবর্তীকালে মহালয়ার দিনই প্রতিমার চক্ষু আঁকার চল শুরু হয়।

আরও পড়ুন: ১০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম মহালয়ার দিনে ঘটবে বিরল ঘটনা

চক্ষুদানের পরই প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। মহাসপ্তমীর সকালে শুদ্ধাচারে ডান হাতে কুশের অগ্রভাগ নিয়ে দেবী দুর্গাকে কাজল পরানো হয়। মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে, প্রথমে ত্রিনয়ন, তারপর বাম চক্ষু ও শেষে ডান চক্ষু আঁকা হয়। পুরোহিতের উপস্থিতিতে লেলিহান মুদ্রায় মোট ১০৮ বার বীজমন্ত্র জপ করা হয়। এর পরেই মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ীতে রূপে প্রতিষ্ঠিত হন দুর্গা। তবে শুধু দুর্গার না, লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী ও কার্তিক, এমনকী তাদের বাহনদেরও প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা বহুগুণে বেড়েছে। তাই অনেক শিল্পীরা কাজের সুবিধার জন্য মহালয়ার আগেও চক্ষু আঁকেন দুর্গার। তবে একথা বলাই বাহুল্য, মহালয়ায় চক্ষুদানের গুরুত্ব হিন্দু ধর্মে অনেক।

মহালয়া শব্দটির অর্থ মহান আলয় বা আশ্রম, এক্ষেত্রে দেবী দুর্গাই হলেন সেই আলয়। কথিত আছে, মহালয়ার দিন অসুর আর দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। এই মহালয়ার গুরুত্ব হিন্দুধর্মে অনেক। মহালয়ার দিন পিতৃ পুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। এ বছর ময়ালয়া পড়েছে ১৪ অক্টোবর। বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ শুনে ঘুম ভাঙবে বাংলার মানুষের। অন্যদিকে, এ বছর মহালয়ার দিনই হতে চলেছে সূর্য গ্রহণ। ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ গ্রহণ স্পর্শ করবে সূর্যকে। রাত ২টো ২৫ মিনিটে পর্যন্ত গ্রহণ থাকবে। তবে ভারত থেকে এই সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে না।