ওয়েব ডেস্ক: বাংলাদেশে (Bangladesh) সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হিংসার ঘটনা (Attack on Hindus) ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। গত বছরের ৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২৩ জন হিন্দু হত্যা হয়েছেন এবং ১৫২টি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার ভারতের সংসদে এ বিষয়ে আলোচনা হয়, যেখানে বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং জানান, ভারত সরকার বিষয়টি নজরে রেখেছে। সংসদে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে বারবার জানানো হয়েছে।
গত দুই মাসে (২৬ নভেম্বর ২০২৪ থেকে ২৫ জানুয়ারি ২০২৫) বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর ৭৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে সংসদে জানান কীর্তি বর্ধন সিং। তিনি উল্লেখ করেন, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪-এ ভারতীয় বিদেশ সচিব বাংলাদেশ সফরে গিয়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে ভারতের উদ্বেগ ব্যক্ত করেছিলেন। এই সফরের পরেও বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা ভারতীয় প্রশাসনের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: ইউনুসের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল! রমরমিয়ে লুটপাট বঙ্গবন্ধুর বাড়িতেও
বাংলাদেশ সরকার অবশ্য বলছে, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। ১০ ডিসেম্বর ২০২৪-এ এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় ৮৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ তদন্তে ১,২৫৪টি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের প্রবণতা কমেনি, বরং রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। অগাস্টে শেখ হাসিনার ভারত-প্রস্থান এবং নোবেল বিজয়ী মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই হিংসার ঘটনা বেড়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ক্রমেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। বিভিন্ন এলাকায় অরাজকতা ছড়িয়েছে, দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে আক্রান্ত হয়েছে সাধারণ মানুষ। ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দুই দিন পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস ফেসবুকে পোস্ট করে শেখ হাসিনার পরিবার ও আওয়ামি লিগ নেতাদের উপর হামলা না চালানোর আহ্বান জানান।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ক্রমাগত চাপের মুখে পড়ছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মাত্র দুই দিনে তিনটি বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন, যাতে দেশের মানুষকে শান্ত থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে হিংসার ঘটনা পুরোপুরি থামানো যায়নি, বরং পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে, যা আগামী দিনে বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য নতুন সংকট তৈরি করতে পারে।
দেখুন আরও খবর: