বেঙ্গালুরু: কর্নাটকে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেট (Karnatak Budget) পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া (Chief Minister Siddaramaiah) । এই বাজেট ঘোষণা মধ্য দিয়ে মনমোহন সিংকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর নামে বেঙ্গালুরু সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের (Bangalore City University) নামকরণ করা হবে বলে ঘোষণা করেন। শুক্রবার ১৬ তম বাজেট পেশ করলেন সিদ্দারামাইয়া।
এবার কর্নাটক বাজেটের মোট বরাদ্দ ৪ লক্ষ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ৩.৭১ লক্ষ কোটি টাকার চেয়ে বেশি। কর্নাটক রাজ্যের জিডিপি ৭.৪% বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং কৃষিতেও ৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্যের জিডিপি জাতীয় প্রবৃদ্ধিকে ৬.২% ছাড়িয়ে গেছে। গত ৩ মার্চ রাজ্যপাল থাওয়ারচাঁদ গেহলটের ভাষণের মাধ্যমে আইনসভা অধিবেশন শুরু হয়। রাষ্ট্র কবি কুভেম্পু এবং অন্যান্য জনপ্রিয় কবিদের কবিতা উদ্ধৃত করে বাজেট উপস্থাপনা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। বাজেট পেশ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারাইয়া বলেন, বেঙ্গালুরু সিটি ইউনিভার্সিটির নামকরণ করা হবে ডঃ মনমোহন সিং বেঙ্গালুরু সিটি ইউনিভার্সিটি।
আরও পড়ুন: জ্ঞানী জৈল সিং ও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সমাধির পাশেই বসবে মনমোহন সিংয়ের স্মারক
শিক্ষাক্ষেত্র
দেশের একটি মডেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, সরকারি আর্টস কলেজ এবং সরকারি আরসি কলেজকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কলেজ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে মেট্রো নেটওয়ার্ক কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হবে।
কর্মসংস্থান
কর্মসংস্থানে জোর কর্নাটক বাজেটে। সরকার ২০২৫-৩০ সালের জন্য একটি নতুন শিল্প নীতি চালু করেছে, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ১২% শিল্প প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং ২০ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকার জেলা এবং তালুকা পঞ্চায়েত অফিস প্রাঙ্গণে একটি ‘আক্কা ক্যাফে এবং ক্যান্টিন’ স্থাপন করবে। সরকার ২০২৪-২৫ সালে সংখ্যালঘু মহিলাদের জন্য খালি ওয়াকফ জমিতে ১৫টি এবং ২০২৫-২৬ সালে আরও ১৬টি মহিলা কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। সরকার NABARD-এর সহযোগিতায় মহীশূরে একটি রেশম পোকার বাজার স্থাপন করবে। নগর উন্নয়নের জন্য মহানগর পালিকদের জন্য ২,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ।
রাস্তা সম্প্রসারণ
বেঙ্গালুরুতে যানজট ঝামেলা কমাতে সরকার হেব্বাল এস্টিম মলকে সিল্ক বোর্ড জংশনের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য ১৮.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ উত্তর-দক্ষিণ টানেলের পরিকল্পনা করছে, যার আনুমানিক ব্যয় ১৫,০০০ কোটি টাকা। ব্র্যান্ড বেঙ্গালুরু-এর অধীনে ২১টি প্রকল্পের জন্য ১,৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
কাবেরী প্রকল্প
আবহাওয়া-সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল এবং কাবেরী জল সরবরাহ প্রকল্পের পঞ্চম পর্যায়ের জন্য ৫৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল।
অঙ্গনওয়াড়ি বেতন বৃদ্ধি
কর্নাটক রাজ্য বাজেট নথি অনুসারে, অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকারা বেতন বাড়ল। ৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে হল ১,০০০ টাকা। প্রতি মাসে একহাজার টাকা করে পাবে তারা।
পুরোহিত/ইমামদের সম্মানী বৃদ্ধি
সরকার জৈন পুরোহিত, শিখদের প্রধান গ্রন্থি এবং মসজিদের পেশ-ইমামদের সম্মানী প্রতি মাসে ৬,০০০ টাকায় বৃদ্ধি করবে
শিশু পুষ্টি
স্কুল শিক্ষার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্কুলের শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি দূর করার জন্য ৫৩ লক্ষ স্কুলছাত্রীকে সপ্তাহে দুই দিন ডিম, কলা দেওয়া হচ্ছে, যা ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সপ্তাহে ছয় দিন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই কর্মসূচি ২০২৫-২৬ সালেও অব্যাহত থাকবে। সেইসঙ্গে
শ্রী সত্য সাই অন্নপূর্ণা ট্রাস্ট স্কুলছাত্রীদের সপ্তাহে তিন দিন গরম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে সাই শিওর রাগি হেলথ মিক্স পাউডার বিতরণ করছে। এই কর্মসূচি সপ্তাহে পাঁচ দিন পর্যন্ত বাড়ানো হবে যার মোট ব্যয় ১০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের ২৫ শতাংশ ব্যয় করবে রাজ্য সরকার।
সিদ্দারামাইয়া বলেন, আমাদের সরকারের পূর্ববর্তী মেয়াদে প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে পিইউ স্তর পর্যন্ত একই ছাদের নিচে মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত কর্নাটক পাবলিক স্কুলগুলিকে সম্প্রসারিত করা হবে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহায়তায় ২,৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০০টি নতুন কর্নাটক পাবলিক স্কুল চালু করা হবে। সরকারি স্কুলে কর্মরত রাঁধুনিদের মাসিক সম্মানী ১,০০০ টাকা বৃদ্ধি করা হবে।
এক-স্টেপ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এআই-ভিত্তিক ‘কালিকা দীপা’ প্রোগ্রামটি ২০০০টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য সম্প্রসারিত করা হবে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কন্নড় এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা ও প্রাথমিক গাণিতিক পারদর্শিতা অর্জন করতে পারবে। বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ জোর দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ২৫,০০০ শিক্ষার্থীকে CET/NEET/JEE প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ‘বিদ্যা বিজেতা’ প্রোগ্রাম ইতিমধ্যেই বাস্তবতা পেয়েছে।
মাতৃভাষায় জোর
এই প্রকল্প চালু রাখার জন্য চলতি বছরে পাঁচ কোটি প্রদান করা হবে। রাজ্যের ৪,০০০ সরকারি স্কুলে দ্বিভাষিক বিভাগ চালু করা হবে যাতে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি তাদের মাতৃভাষায় সাবলীলতা আরও জোর পায়। শিক্ষাক্ষেত্রে মহিলা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে গত বছরে ৩১টি প্রতিষ্ঠানকে পদোন্নতি হয়েছে, বাকি ২৬টি প্রতিষ্ঠানের পরিকাঠামো ২৬ কোটি টাকায় উন্নীত করা হবে।
সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদত্ত জাতীয় বিদেশী ছাত্রদের বৃত্তির পরিমাণ ২০ লক্ষ থেকে বাড়িয়ে ৩০ লক্ষ করা হবে। বেঙ্গালুরুতে একটি বৌদ্ধ স্টাডি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। বেঙ্গালুরুতে মহাবোধি স্টাডি সেন্টারের ১০০ বছরের পুরনো লাইব্রেরিটি ১ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিজিটালাইজ করা হবে।
কৃষিক্ষেত্র
কর্নাটক সরকার এ বছর কৃষিক্ষেত্রের জন্য ৫১,৩৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। বার্ষিক ২০২৫-২৬ বাজেটে ঘোষণা করেছে যে তারা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) প্রকল্পের অধীনে তুর ডাল সংগ্রহের জন্য প্রতি কুইন্টাল ৭,৫৫০ টাকার অতিরিক্ত ৪৫০ টাকা প্রদান করবে, যার মোট ব্যয় ১৩৮ কোটি টাকা। কালাবুর্গী, বিদার, ইয়াদাগিরি, বিজয়পুরা, বাগালকোট, রাইচুর, কোপ্পাল, কোলার, চিত্রদুর্গা এবং চিক্কাবল্লাপুরের প্রধান তুর ডাল চাষিরা উপকৃত হবে। সরকার ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরে ৩৭ লক্ষ কৃষককে ২৮,০০০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে।
তফসিলি জাতি/উপজাতি
তফসিলি জাতি/উপজাতির মাছ বিক্রেতারা চার চাকার যানবাহন কেনার জন্য ৫০% বা সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ভাতা পাবেন।
মুখ্যমন্ত্রীর অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচির (CMIDP) অধীনে ক্ষুদ্র সেচ, রাস্তাঘাট এবং নগর পরিকাঠামোতে ৮,০০০ কোটি বিনিয়োগ বরাদ্দ করেছে।
বৃহৎ বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য, সরকার মোট ১৩,৬৯২ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা এবং ভর্তুকি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
রাজ্য সরকার সম্ভবত প্রতিবেশী রাজ্যগুলির দামের সঙ্গে মিল রেখে মদের দাম পর্যালোচনা করবে।
মাল্টিপ্লেক্স/OTT প্ল্যাটফর্ম
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ঘোষণা করেছেন যে কর্নাটক জুড়ে মাল্টিপ্লেক্সগুলিতে এখন সর্বোচ্চ টিকিটের মূল্য ২০০ টাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। কন্নড় ভাষার অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন OTT প্ল্যাটফর্ম চালু করার ঘোষণা দেন।
বেঙ্গালুরুকে বিশ্ব স্বাস্থ্য মানের শহর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ব্র্যান্ড বেঙ্গালুরু পরিকল্পনার অধীনে আগামী তিন বছরে ৪১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ‘বিস্তৃত স্বাস্থ্য কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন করা হবে। ২০টি জিআই-ট্যাগযুক্ত এবং অন্যান্য দেশীয় ফসল সংরক্ষণের জন্য একটি বীজ ব্যাংক স্থাপন করা হবে।
দেখুন অন্য খবর: