কলকাতা: মিতভাষী কিন্তু সিংহের মতো দৃঢ় প্রত্যয়ী মনমোহন সিং (Manmohan Singh)। কিন্তু তাঁকে শুনতে হয়েছে, ‘নির্বাক প্রধানমন্ত্রী’, ‘কাঠপুতুল প্রধানমন্ত্রী’ ‘মৌন মোহন’র মতো বিদ্রুপ। ‘মৌন প্রধানমন্ত্রী’ বলে মনে করত একাংশ বিরোধীরা। এমনকী মোদি জমানাতেও কংগ্রেসকে তোপ দাগতে এই শব্দের ব্যবহার করতে শোনা গিয়েছিল বিজেপি নেতাদের। তবে এই সব বিদ্রুপের অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। ২০১৮ সালের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘লোকে বলে, আমি নীরব প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। আমি মনে করি এই স্বর তাদের কথা তুলে ধরে। আমি সেই প্রধানমন্ত্রী ছিলাম না যিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে ভয় পেতাম। আমি নিয়মিত প্রেসের সঙ্গে দেখা করতাম, প্রতিটি বিদেশ সফরে আমি বিমানেই বা বিমান থেকে অবতরণের পরই সাংবাদিক বৈঠক করতাম।’
২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মনমোহন সিং। টানা ৩৩ বছর রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন। একসময় দেশের রাজস্ব ভাণ্ডার প্রায় দেউলিয়া হওয়ার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। বিশ্ব ব্যাঙ্কগুলি ভারতকে আর ঋণ দিতে অস্বীকার করে দিয়েছে। তখন দেশের ডুবন্ত অর্থনীতিকে ফের মাঝ গগনে তুলে ধরেছিলেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই দেশের অর্থনীতিতে এল উদারীকরণ। বিশ্বের দ্বার খুলে গেল ভারতীয়দের সামনে। বলা যায় এ এক নয়া আর্থিক বিপ্লব। বেশি কথা বলা তাঁর স্বভাব নয়। যে কারণে বহুবার বিরোধীদের কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয়েছে মনমোহন সিংকে। অনেকেই তাঁকে কটাক্ষ করে বলতেন দেশের সবচেয়ে দুর্বল প্রধানমন্ত্রী। কেউ বলেন মৌনমোহন, কেউ বলেন মৌনীমোহন।
আরও পড়ুন: মনমোহন সিংয়ের প্রয়াণে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বাড়িতে উপস্থিত মোদি-শাহ
তবে এই সব বিদ্রুপ ও কটাক্ষকে পাত্তা দিতেন না। নিজের দীর্ঘ কর্মজীবনে এমন কিছু মন্তব্য করেছিলেন যা তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রতীক এবং ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। ২০১১ সালে একের পর এক দুর্নীতিতে বিদ্ধ মনমোহন সরকার। সংসদে বিরোধী নেত্রী সুষমা সরাজের প্রশ্নবাণে বিদ্ধ তিনি। সুষমাকে শায়েরিতে জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘হাজারো জবাবো সে আচ্ছি হে মেরি খামোশি, না জানে কিতনে সওয়ালো কি আবরু রখি হ্যায়।’ ১৯৯১ সালে সংসদে সেই বিল পেশের আগে মনমোহন বলেন, “সময়ের দাবিতে যে উদ্ভাবনী শক্তির জন্ম হয়, তাকে কোনও শক্তিই আটকে রাখতে পারে না।” ২০১৪ সালে বিরোধীরা তাঁকে দেশের দুর্বলতম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তোপ দেগে ছথিলেন। সেই সময় তিনি বললেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমি দুর্বল প্রধানমন্ত্রী নই। সংবাদমাধ্যম এবং বিরোধীদের থেকে ইতিহাস আমার প্রতি বেশি সদয় হবে’।
অন্য খবর দেখুন