জলপাইগুড়ি: উত্তরবঙ্গের (North Bengal) বন্য়া পরিস্থিতি (Flood Situation) খতিয়ে দেখতে শিলিগুড়ি (Siliguri) পৌঁছে গিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (Governor CV Ananda Bose)। বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি দিল্লি থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে (Bagdogra Airport) এসে নামেন। এখান থেকে রাজ্যপাল জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri), কালিম্পং (Kalimpong), কোচবিহারের (Coochbihar) বন্যাদুর্গত এলাকা হেলিকপ্টারে পরিদর্শন করবেন। বন্যা পরিস্থিতি দেখে ফের রাজ্যপালের দিল্লি ফিরে যাওয়ার কর্মসূচি রয়েছে।
এদিকে, জলপাইগুড়িতে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী (Irrigation Minister) পার্থ ভৌমিক (Partha Bhoumik)। এদিন সকালে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে মন্ত্রী গাজলডোবায় সেচ দফতরের ভবনে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ছিলেন রাজ্যের সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী বুলুচিক বড়াইক, মন্ত্রী গুলাম রব্বানি, সাংসদ অরকাশ চিক বড়াইক, জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভিন,পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গনপত,বিধায়ক খগেশ্বর রায় সহ সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন: পুর-নিয়োগ দুর্নীতি, রথীন ঘোষের বাড়িতে ইডি
বৈঠকের শেষে সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, আমরা টেকনিক্যাল টিমের সঙ্গে কথা বলেছি। কী করা উচিত দেখা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করা হচ্ছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে দেখব। বিপর্যয় আমরা কন্ট্রোল করতে পেরেছি। কিন্তু স্পারের মুখ ভেঙেছে। তিস্তা উপচে পড়েছে। জল না কমলে বোঝা যাবে না ক্ষতি কতটা। যা যা করণীয় তা করব। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সব সময় কথা হচ্ছে আমাদের। গাজলডোবার যা ক্যাপাসিটি আছে আশা করি ট্যাকল করতে পারব। চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মানবিকভাবে গোটা বিষয়টি দেখছি আমরা।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বৃহস্পতিবার সকালে জলপাইগুড়ি সেচ দফতরের কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল থেকে জলপাইগুড়ি জেলার তিস্তা নদী বরাবর যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেই বিষয়ে এই বৈঠক করা হয়। উত্তর সিকিমের দক্ষিণ লোনাক হ্রদ ভেঙে তিস্তা নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছিল গতকাল। যার ফলে জলপাইগুড়ি জেলার মাল, ক্রান্তি, ময়নাগুড়ি ও জলপাইগুড়ি সদর ব্লক সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সঙ্গে গাজলডোবার তিস্তা ব্যারেজ খুলে দেওয়া হয়েছিল। সমস্ত পরিস্থিতির উপর নজর রেখে এই বৈঠকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আলোচনা হয়।
তবে বুধবার বিকেলের পর থেকে তিস্তা নদীর জলস্তর অনেকটাই নেমে গিয়েছে। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তি প্রশাসনিক মহলে। পাশাপাশি একনাগাড়ে বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে এখনও। কাজেই পরিস্থিতি ফের একবার বেগতিক হলেও হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। এই কারণে বিপর্যয় মোকাবিলার সমস্ত রকম বাহিনীকে তৈরি রাখা হয়েছে।
সিকিমে মেঘ ভেঙে অতিবৃষ্টির ফলে তিস্তায় বন্যার জেরে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তিস্তার উপকূলীয় এলাকা টোটগাঁও কলোনিতে। বন্যার আশঙ্কায় প্রশাসনের নির্দেশে দেড় শতাধিক পরিবারকে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। বাগরাকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান রাজু ছেত্রী জানান, টোটগাঁওয়ের দেড়শো পরিবারকে এলেনবাড়ি ও কালাগাইতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয়দের ত্রাণ শিবিরে রাখা হবে। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দিনে তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া মেডিকেল ক্যাম্পও স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রতি মুহূর্তের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হয়েছে।
বাগরাকোট গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি রাজেশ ছেত্রী জানান, প্রকৃতির তাণ্ডবের সামনে সবাই অসহায়। খবর পেয়ে বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে তিস্তা নদী সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে পাঠানোর কাজ শুরু হয়। তিস্তা নজিরবিহীন গতিতে প্রবাহিত হচ্ছে এবং পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে গ্রামটির বেশিরভাগ ঘরবাড়ি নদীতে তলিয়ে যেতে পারে। তিস্তার ভয়াবহ রূপ দেখে এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জিৎ বাহাদুর রাই , সীতা মায়া রাই সহ অন্যান্যরা জানান, বর্তমান পরিস্থিতি খুবই খারাপ। গ্রামের খুব কাছ থেকে তিস্তা প্রবাহিত হচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন অবিলম্বে আমাদের সমস্যার সমাধান করা হোক।
দেখুন অন্য খবর