কলকাতা: হলিউড অভিনেতা আল পাচিনো (Al Pacino) ৮৩ বছর বয়সে বাবা হন। গত বছরই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সেই খবর শিরোনাম হয়েছিল। তারপরই বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রবীণ দম্পতির (Elderly Couple) সন্তান হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতে থাকে। অনেক নিঃসন্তান দম্পতিই নতুন করে উৎসাহ পান। বার্ধক্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া কলকাতার এক দম্পতির সন্তান আকাঙ্খার মামলায় অনুমতি দিয়ে এখানেও নতুন দিগন্ত খুলে দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)।
তিরিশ বছরের বিবাহিত জীবনে হয়নি সন্তান। সন্তান না থাকার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছিলেন না ওই দম্পতি। শেষ পর্যন্ত টেস্ট টিউব বেবির সাহায্যে সন্তান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, নির্ধারিত বয়সের চেয়ে স্বামীর বয়স বেশি হওয়ায় তা আটকেছিল। বাধ্য হয়ে পরিকল্পনা করেন টেস্ট টিউব বেবি নেওয়ার। কিন্তু সেখানেও বাদ সাধে বয়স। প্রয়োজন ছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবনের থেকেও অনুমতি না পেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই দম্পতি। ৫৮ বছরের নি:সন্তান দম্পতিকে টেস্ট টিউব বেবি নেওয়ার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি অমৃতা সিনহার এই নির্দেশের ফলে বহু সন্তানহীন দম্পতির সামনে নতুন দিগন্ত খুলে যেতে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। বিচারপতি অমৃতা সিনহা কলকাতার কাশীপুরের ওই দম্পতির আবেদনে অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যের আইনজীবীকে নির্দেশ দিলেন এই ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরকে যেন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে।
আরও পড়ুন: ব্রিটেনের উদাহরণ টেনে বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে কী বলল কলকাতা হাইকোর্ট? জেনে নিন
হাইকোর্ট সুত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার কাশীপুরের বাসিন্দা ওই দম্পতির বিবাহ হয় ১৯৯৪ সালে। কিন্তু ৩০ বছরে তাঁদের কোনও সন্তান হয়নি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে পিএইচ ফার্টিলিটি ক্লিনিকে আইভিএফের মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার জন্য আবেদন জানান। কিন্তু গত ২৭ জুন দম্পতিকে জানানো হয়, নিয়ম অনুয়ায়ী স্বামীর বয়স যা থাকা প্রয়োজন তার তুলনায় বেশি। ফলে স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি দরকার। নিয়ম অনুযায়ী, এই পদ্ধতিতে সন্তান নিতে গেলে পুরুষের বয়স হতে হবে ২১ থেকে ৫৫ বছর। আর মহিলাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়স হবে ৫০ বছর। কিন্তু কাশীপুরের দম্পতির ক্ষেত্রে স্বামীর বয়স ৫৮। তাই স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি মেলেনি। এরপর বাধ্য হয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই দম্পতি।
বিচারপতি সিনহা দম্পতির উদ্দেশে বলেন, এই বয়সে এসে সন্তানের দায়িত্ব নিতে পারবেন তো? একটি সন্তানকে মানুষ করার জন্য পরিকল্পনা কী রয়েছে? তাতে ওই দম্পতির আইনজীবী অচিন জানা জানান, তাঁর মক্কেল আর্থিক ভাবে সমর্থ। সন্তান মানুষ করার ক্ষেত্রে যা যথেষ্ট। এই ব্যাপারে তাঁরা মানসিকভাবে দীর্ঘ দিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন। পুরুষের বয়স বেশি হলেও এই ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না।
রাজ্যের তরফে আইনজীবী বিশ্বব্রত বসু মল্লিক বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘রুল’ অনুয়ায়ী বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। জন্মের পর শিশুর ভালোবাসা, যত্নের খুব প্রয়োজন। একইসঙ্গে পরিবারের আর্থিক স্থিরতা না থাকলে শিশুটি অবহেলিত হতে পারে। বিচারপতি মামলাকারীর আইনজীবীর কাছে জানতে চান, মহিলা কী করেন? মামলাকারীর আইনজীবী জানিয়েছেন, তিনি গৃহবধূ। তাতে বিচারপতি জানিয়েছেন, আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আছে তো পরিবারের? তাতে ওই আইনজীবী জানিয়েছেন, আর্থিকভাবে কোনও সমস্যা হবে না পরিবারের। স্বামীর ব্যাবসা রয়েছে। ফলে অসুবিধা হবে না।
দেখুন অন্য খবর: