কলকাতা: আদালতে সওয়াল চলাকালীন শুক্রবার বিকেলে অসুস্থ হয়ে পড়লেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (Jyotipriya Mallick)। এদিন দশ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ শুনেই আদালতের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মন্ত্রী। তড়িঘড়ি মন্ত্রীর মেয়ে প্রিয়দর্শিনীকে বাবার কাছে যাওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক তনুময় কর্মকার। মেয়ে বাবার মাথায় জল ঢালেন। এরপরই বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন জ্যোতিপ্রিয় এবং ই়ডির আইনজীবীরা। বালুর আইনজীবীদের দাবি, এখনই কোনও বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে মন্ত্রীকে। তাতে আপত্তি জানান ইডির আইনজীবীরা। পরে মন্ত্রীকে বিচারকের চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালত থেকে এসি অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে বালুকে বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়। বিচারক জানান, আপাতত পরিবার তাদের পছন্দের হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারে। সুস্থ বোধ করলে তাঁকে কমান্ড হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
আদালত এদিন মন্ত্রীকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। বিচারকের আরও নির্দেশ, তাঁকে আলিপুরের কমান্ড হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালকে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করতে হবে। দিনে একবার এক ঘণ্টা করে আইনজীবী মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। তিনি বাড়ির খাবার খেতে পারবেন। গতকাল টানা ২১ ঘণ্টা তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর এদিন ভোররাতে ইডি প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেফতার করে তাঁর সল্টলেকের বাড়ি থেকে। সেখান থেকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় জোকার ইআসআই হাসপাতালে। হাসপাতাল থেকে বেলায় তাঁকে হাজির করানো হয় সিএমএম আদালতে।
বিচারক জানতে চান, মন্ত্রীকে কোনও অত্যাচার বা হেনস্থা করা হয়েছে কি না। তিনি জানান, না, তাঁকে কোনও হেনস্থা করা হয়নি। আদালতের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, গ্রেফতারির কারণ সংক্রান্ত কাগজপত্র তাঁকে দেওয়া হয়েছে। এফআইআরে আমার পরিবার কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করা হয়েছে। সেখানে আমার নাম নেই। আর একজন মহিলার কথা বলা হয়েছে। আমি সুগারের রোগী। আমাকে বাড়ির খাবার দিলে সুবিধা হয়। আর ভালো কোনও হাসপাতালে দিলে ভালো হয়।
আরও পড়ুন: কয়েক বছরে বালুর আয় এবং সম্পত্তি বেড়েছে বহু গুণ
বিচারপতি বলেন, আমি কোনও পক্ষ নই। কেন গ্রেফতার করা হল, তা বুঝতে হবে। দেখছি, এফআইআরে মণিদীপা এবং প্রিয়দর্শিনীর নাম আছে। সেখানে মন্ত্রীর নাম কোথা থেকে এল। আমার কাছে একটা বিষয় খুব অবাক লাগছে। যাঁর অ্যাকাউন্টে সেদিনও ৪৫ হাজার টাকা ছিল, তা কী করে কোটিতে পৌঁছে গেল।
ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বলেন, মন্ত্রীর পরামর্শে তিনটি সংস্থা খোলা হয়। তাদের ডিরেক্টর মন্ত্রীর স্ত্রী এবং মেয়ে। অথচ তাঁরা বলছেন, আমরা কিছু জানি না। মানিক ভট্টাচার্যের মামলা এবং এই মামলা একই ধাঁচের। দুই ক্ষেত্রেই অপরাধের ধরন একই।
বালুর আইনজীবীর আর্জি, ইএসআই হাসপাতালে যেন না নিয়ে যাওয়া হয়। বিচারক বলেন, মন্ত্রীর জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। কমান্ড হাসপাতাল সুপার স্পেশ্যালিটি স্তরের হাসপাতাল। সেখানে তাঁকে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এসএসকেএম হাসপাতালের নামে আপত্তি জানান ইডির আইনজীবীরা। ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বলেন, এসএসকেএমে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘটনা এখনও আমাদের মনে আছে। সওয়াল শেষে বিচারক মন্ত্রীকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত ইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। অ্যাম্বুল্যান্স এসে মন্ত্রীকে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আরও অন্য খবর দেখুন