কলকাতা: ‘কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে’… এই গানটা শুনলেই চোখের সামনে যাঁর ছবি ভেসে ওঠে তিনি বাঙালির চিরকালের গুরু। আজও কোথাও তাঁর ছবি দেখলে মনের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, গুরু, গুরু। সেই গুরু আর কেউ নন। তিনি মহানায়ক উত্তম কুমার। তাঁর ভুবন ভোলানো হাসি ও চোখের চাউনি আজও বঙ্গ ললনাদের হৃদয়হরণ করে। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কালো দিন। সেদিনই প্রয়াত হন উত্তমকুমার (Uttam Kumar )। মহানায়কের ৪৪তম প্রয়াণ দিবসে তাঁকে নিয়েই একটি প্রতিবেদন-
১৯৫৩, বিজন ভট্টাচার্যের কাহিনী নিয়ে মেসবাড়ির গল্প বড় পর্দায় আঁকলেন নির্মল দে, ছবির নাম “সাড়ে চুয়াত্তর।” সেখান থেকেই পথ চলা শুরু। দীর্ঘ ২২ বছরের পথ! ১৯৪৫ থেকে ১০৮০ সালের মধ্যে মোট ৩৭৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। পোর্ট ট্রাস্টের পাকা চাকরি ছেড়ে অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায় পা বাড়িয়েছিলেন ছবির জগতে। বাঙালি ঘরে সেই ছেলেটাই একদিন হয়ে উঠেছিল মহানায়ক। উত্তম কুমার মানেই রোম্যান্টিসিজমের শিক্ষাগুরু ৷ বাংলা ছবির জগতে মহীরূহ তিনি ৷ তিনি এক কথায় যে খুব অসাধারণ সুন্দর ছিলেন, এমনটা বলা যায় না। কারণ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বসন্ত চৌধুরি, অনিল চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বজিত্ চট্টোপাধ্যায় এঁরা প্রত্যেকেই উত্তমের তুলনায় অনেক বেশি সুন্দর ছিলেন। উত্তম কুমার ছিলেন এদের সকলের চেয়ে আলাদা। তিনি একটা সময় ধরতে পেরেছিলেন। তারকার গন্ডি টপকে সাধারণ মানুষের ঘরে ঢুকেছিলেন তিনি। তাঁর সমসাময়িক কলাকুশলি থেকেও শোনা যায় তিনি ইন্ডাস্ট্রির অভিভাবকের মতোই ছিলেন। টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে গল্প করতেন ভাঙা বেঞ্চে বসেই। সবার সাহায্যে এগিয়ে আসতেন তিনি।
আরও পড়ুন: কোন ভুলে, কোন শর্তে শাস্তি? জানতে চান রাহুল
মহানায়ক হয়ে ওঠার সুদীর্ঘ পথে সুচিত্রা ছাড়াও সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ,মাধবী মুখোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর, থেকে শুরু করে অঞ্জনা ভৌমিক, তনুজা, অপর্ণা সেন সকলের সঙ্গেই জুটি বেঁধেছেন উত্তম কুমার। “পথে হল দেরি,” “হার মানা হার,” শাপমোচন”, “হারানো সুর” কিংবা “সাগরিকা।” প্রত্যেক ছবিতেই উত্তম-সুচিত্রা। একবার উত্তম কুমার বলেছিলেন, সুচিত্রা পাশে না থাকলে আমি কখনওই উত্তম কুমার হতে পারতাম না। এ আমার বিশ্বাস। রোমান্টিক নায়ক নন। সত্যজিৎ রায়ের চিড়িয়াখানার “চিড়িয়াখানার” ব্যোমকেশ, তিনি “সপ্তপদীর” কৃষ্ণেন্দু আবার “দেওয়া নেওয়ার” প্রশান্ত রায়। উত্তম-ক্যারিশমা সমান ভাবে বাঙালির মননে আজও গেঁথে রয়েছে। তাঁর উপস্থিতি, অভিনয়, আকর্ষণ তাঁর চোখের দৃষ্টি সব কিছু যেন আজও বাঙালির কাছে অমলিন। তিনি আজও বাঙালির স্টাইল আইকন মহানায়ক।
অন্য খবর দেখুন