হুগলি: হুগলির বলাগরের ৩১৬ বছরের মিত্র মুস্তাফি পরিবারে ঐতিহ্যবাহী পুজো। ইতিহাস গবেষকদের অনেকের মতে, হুগলিতে কেবল মাত্র জাঙ্গিপাড়ার আঁটপুরে ও বলাগড়ের শ্রীপুরে এই দোচালা শৈলীর মণ্ডপ আছে। দু’দিকে ঢালযুক্ত টিনের চাল দেওয়া কাঠের মন্দিরটির নির্মাণ শৈলী কার্যত বিরল। আগে খড়ের চাল ছিল। এখন মন্দিরের প্রাচীন সৌন্দর্য কিছুটা বদলালেও তার ঐতিহ্যবাহী নকশা করা কাঠের দেওয়াল আজও একই রকম রয়ে গিয়েছে। মণ্ডপের দেওয়ালটি তখনকার বর্মা থেকে আনা সেগুন ও দেশি কাঁঠাল গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি।
পরিবারের বর্তমান সদস্য তাপস মিত্র মুস্তাফি বলেন, ১৭০৭ সালে ওই মণ্ডপে শুরু হয় পুজো। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধনের মধ্যে দিয়ে আরাধনা শুরু হয়। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী— এই তিন দিন ছাগ বলি হয়। সঙ্গে চলে হোম। সপ্তমীর দিন জ্বলা হোমের আগুন নবমীর দিন বাড়ির কর্তা কল্লোল মিত্র মুস্তাফির হাতে নেভানো হয়। তিনি সাতটি রুপোর মুদ্রা দিয়ে সঙ্কল্প করেন। ৩১৬ বছরের পুরনো এই পুজোর প্রথা অনুযায়ী, সপ্তমী-অষ্টমীতে দেড় হাজার ও নবমীতে ২৮টি বেলপাতা দিয়ে হোম হয়। নবমীর দিন ‘ঠান্ডি’ বলে পুজোর এক অনুষ্ঠানও হয়। তারপর ঢাকের আওয়াজে এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেওয়া হয় মিত্র মুস্তাফিদের পুজো সম্পন্ন হল। ওই বাড়ির গঙ্গার ঘাটেই প্রতিমা বিসর্জন হয়।
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা ও মহিলাদের সঞ্চিত অর্থে দুর্গাপুজোর আয়োজন দাসপুরে
স্থানীয় ইতিহাস গবেষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জমিদার রঘুনন্দন অসাম্প্রদায়িক ও সৃষ্টিশীল মানুষ ছিলেন। একই সঙ্গে শৈব, শাক্ত, তন্ত্র এবং বৈষ্ণব সাধনা করেছেন। ইসলামি রীতিকেও মান্যতা দিয়েছেন। তার প্রমাণ মেলে দুর্গাদালানের পাশে কৃষ্ণ-রাধার মন্দিরে। যেখানে আজানের রীতির মতো বিগ্রহকে পশ্চিম দিকে মুখ করে আরাধনা করা হয়।” এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয় এই পুজো মহা সমারোহে হয়ে চলেছে।
অন্য খবর দেখুন