মুম্বই: সরস্বতী পুজোর (Saraswati Puja) উন্মাদনা নস্টালজিয়া (Nostalgia), আবেগ, ভালোবাসা, ভালোলাগা এবছর বঙ্গ থেকে ছাপিয়ে পাড়ি দিল সুদূর বাণিজ্যনগরী মুম্বইতে।
বাগদেবীর আরাধনায় মাতলেন সেখানকার বাঙালি চিত্রতারকারা (Bengali film stars)। যারা প্রত্যেকেই কলকাতার মানুষ হলেও দীর্ঘ সময় ধরে মুম্বইয়ের বাসিন্দা।
এই প্রথম মুম্বইতে সেলেব ও সেখানকার বাঙালিদের উদ্যোগে মায়ের পুজোর্চ্চনা হল। হলুদ পাঞ্জাবি আর শাড়িতে এক আলাদা মর্যাদা পেল পুজো। সেইসঙ্গে আনন্দ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া আর রীতিমতো পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়ার পর্ব চলল। পুজোর আনন্দে মাতলেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় (Swastika Mukherjee) সহ একঝাঁক সেলেবরা।
এই সমস্ত কিছু আয়োজন করল ‘আড্ডা কালেকটিভ’।
ভোগ খাওয়ার পাশাপাশি জুড়ে থাকল সঙ্গীতের আয়োজন। প্রায় প্রত্যেকেই নিজের প্রতিভার মধ্যে দিয়ে তাদের তুলে ধরলেন। সঙ্গীত, বাঙালির প্রিয় আড্ডা, নাচ, গান সব কিছু মিলিয়ে মায়ের আরাধনা এক অন্য মাত্রা পেল।
আরও পড়ুন: সরস্বতী পুজোর মন্ডপে ফুটে উঠল মোহনবাগানের সেকাল ও একাল
সরস্বতী পুজো এক ইমোশন আর এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক নস্টালজিয়া। এক আয়োজকের কথায়, সেই ইমোশনের কথাই ধরা পড়ল। তার কথায়, সরস্বতী পুজো করতে পেরে মনে হচ্ছে নিজের বাড়ি কলকাতাতেই আছি। সবার সঙ্গে দেখা হওয়া, ছোটবেলার মতো সেই শাড়ির পরার আনন্দ আজ যেন সেই শৈশবের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিকে ফের খুঁজে পেলাম। সরস্বতী পুজো মানেই যেন সেই সময় আমাদের কাছে একটা স্বাধীনতা। নিজের মতো সাজতে পারব, শাড়ি পরব।
এই অনুভূতি কাউকে বোঝানো যাবে না। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরস্বতী পুজো জীবনে অন্য ভাবে ধরা দিয়েছে। প্রেম, ভালোলাগা, চোখের চাহনি সব কিছু নিয়েই সরস্বতী পুজো। এখানে এত ভালো পুজো হয়েছে মনেই হচ্ছে না, মুম্বইতে আছি। ভালোভাবে সবাই মিলে আনন্দ করেছি। আমরা চাই আমাদের এই কমিউনিটি আরও বড় হোক। সরস্বতী পুজো যে আমরা ‘আড্ডা কালেকটিভ’ এর উদ্যোগে করতে পেরেছি তার জন্য গর্ব অনুভব করছি। ইচ্ছে আছে দুর্গাপুজোর করার।
অপর একজনের মুখেও সেই ‘আড্ডা কালেকটিভ’ -এর প্রশংসা শোনা গেল। তাঁর কথায়, খুব ভালো লাগছে, প্রতি বছর অঞ্জলি দেওয়ার ইচ্ছে থাকে। চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা অনুরাগ বাসুর বাড়ি যাই। কারণ উনি বাড়িতে এই পুজোর আয়োজন করেন। তবে এখানে এসে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেলাম। এক কথায় দারুণ লাগছে। অপূর্ব ভোগ খেয়েছি। মন একদম তৃপ্ত হয়ে গেছে। চাই ‘আড্ডা কালেকটিভ’ প্রতি বছর এই পুজোর আয়োজন করুক।
একই সঙ্গে আরও অনেকের মুখেই শোনা গেল সরস্বতী পুজো নিয়ে কলকাতার নস্টালজিয়া, আবেগের কথা। কলকাতা যে তাদের প্রাণের শহর সেটি তারা মুম্বই গিয়েও যে ভোলেননি, সেই কথাই আজ তাদের মুখে। সকলের কথায় সরস্বতী পুজো মানেই ভালোলাগা আর ভালোবাসা। সেই প্রাণের স্পন্দন যেন আজ নতুন করে ফিরে পেলাম। কাজের জন্য ইচ্ছে হলেও কলকাতা যাওয়া হয় না, উদ্যোগ নেওয়া মানুষকে কুর্নিশ জানাই। আমরা চাই প্রতি বছর এই পুজোর আয়োজন করা হোক।
সকলের মুখেই এক কথা, আসছে বছর আবার হবে। মন্ডপের আসা নেহা নামে এক দর্শনার্থীর কথায়, বিগত ১০ বছর ধরে মুম্বইতে আছি। এত আনন্দ আগে কখনও পাইনি। পুজো এলেই কলকাতার জন্য মন টানে। কিন্তু যাওয়া হয়ে ওঠে না। আজ সেই কলকাতার সেই পুজো, মন্ডপের ভালোলাগাকে আবার ছুঁতে পারলাম। এই ভালোলাগা বোঝাতে পারব না। এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
পুজোর উদ্যোক্তারা জানান, অনেক পরিকল্পনা করে এই পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। সকলের সহযোগিতা আছে। পুজোর মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে অনেক সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছি। মন্ডপে আসা শিশুরা যাতে এই পুজোকে বুঝতে পারে, ভালো লাগে, একঘেয়েমিতা কাটানোর জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রাকৃতিক সামগ্রীর মাধ্যমেই এই পুজোর অনুষ্ঠান করেছি। সবাইকে পাশে পেয়েছি। আনন্দ দিতে পেরেছি। খুব ভালো লাগছে।
দেখুন অন্য খবর: