কলকাতা: প্রায় তিন লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে আধুনিক মানুষের আবির্ভাব ঘটে। তারপর দেশে-মহাদেশে বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে ওঠে। ঐতিহাসিকরা নানা রকম পরীক্ষার মাধ্যমে এইসব সভ্যতার হদিশ পেয়েছেন। আর এবার সমুদ্রের গভীরে এক প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেল, যা দেখে চমকে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা। জাপানের ইয়োনাগুনি দ্বীপের সমুদ্রতলে রহস্যে ঘেরা এক শহরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ১৯৮৬ সালে একদল ডুবুরি এই শহরকে প্রথমবারের জন্য খুঁজে পেয়েছিলেন। প্রথমে তাঁরা এটিকে পাহাড় বলে ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ওই ডুবুরির দল বুঝতে পারেন যে, এটি আসলে একটি বিশাল শহর, যেখানে পিরামিড আকৃতির মন্দির, রাস্তা, এমনকি স্টেডিয়ামের মতো স্থাপত্যও রয়েছে। এরপর বিজ্ঞানী মাসাকি কিমুরা এটিকে ‘মু’ নামক প্রাচীন মহাদেশের একটি অংশ বলে দাবি করেন। তাঁর মতে, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে একসময় শহরটি তলিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: দিন দিন বসবাসযোগ্য হয়ে উঠছে মঙ্গল গ্রহ! গবেষণায় উঠে এল নতুন তথ্য
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে এই শহরে ঠিক কী কী খুঁজে পাওয়া গিয়েছে? জানা যায়, সমুদ্রের তলায় প্রায় ৪৫ হাজার বর্গমিটার এলাকায় বিস্তৃত এই শহরে পিরামিড, মন্দির এবং একটি বিশাল দুর্গের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এই দুর্গের দেওয়ালে বিভিন্ন লিপি খোদাই করা আছে, যদিও সেগুলির পাঠোদ্ধার করা এখনও সম্ভব হয়নি। প্রত্নতাত্বিকদের দাবি, এই শহরটি প্রায় ১০ হাজার বছরের পুরনো। অর্থাৎ, এটি সিন্ধু সভ্যতা বা মিশরীয় সভ্যতার থেকেও প্রাচীন হতে পারে। তবে, এই তত্ত্ব নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কারণ, ওয়েস্ট এবং হ্যানকক নামে দুই প্রত্নতাত্বিকের মতে, ইয়োনাগুনির এই রহস্যময় শহর আসলে মানুষের সৃষ্ট নয় বরং এটি প্রাকৃতিকভাবে গঠিত একটি পাহাড়। তাঁদের যুক্তি, ‘রিং অফ ফায়ার’ অঞ্চলে ভূমিকম্পের কারণে সেখানে টেকটোনিক প্লেটের সরণ ঘটে এবং এর ফলে এই পাহাড়টি এমন অদ্ভুত আকৃতি ধারণ করে। প্রত্নতাত্বিক অগাস্টাস লে প্লনজিয়নের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘মু’ মহাদেশটি দক্ষিণ আমেরিকার চেয়েও বড় ছিল। যেখানে প্রায় ৬ কোটি মানুষ বসবাস করতেন। ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং অগ্নুৎপাতের ফলে এই মহাদেশটি প্রায় ১২ হাজার বছর আগে পুরোপুরি তলিয়ে যায়। তাঁর মতে, ইয়োনাগুনি এই ‘মু’ মহাদেশেরই অংশ হতে পারে। তবে আধুনিক বিজ্ঞানীরা এই তত্ত্ব মানতে নারাজ। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সমুদ্রতলে এর কোনো প্রমাণ মেলেনি।
তবে এখনও এই প্রাচীন শহরকে ঘিরে নানা মতবাদ রয়েছে। আজও এই রহস্যময় শহরকে নিয়ে জাপান সহ বিভিন্ন দেশের অনেক বিজ্ঞানী গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি, পর্যটক এবং সাহসী ডুবুরিরা এখনও এই প্রাচীন শহরটির সন্ধান পেতে এবং এর রোমাঞ্চকর ইতিহাসকে অনুভব করতে প্রতি বছর ভিড় জমান ইয়োনাগুনি দ্বীপে। কিন্তু তারপরেও এটি শহর নাকি পাহাড়, তা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। আদতে রহস্য রয়ে গেছে রহস্যের কাছেই।
দেখুন আরও খবর: