বর্ধমান: জাগ্রত দেবী হিসেবেই মেনে চলেন সবাই। দেবীর মহিমায় দুরারোগ্য ব্যাধি দূর হয় এমনই বিশ্বাস সকলের। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের সিদ্ধেশ্বরী মাতার পুজো ঘিরে হাজারো কাহিনী। জামালপুরের দামোদার তীরবর্তী এই এলাকাতে এক সময় ছিল মহাশ্মশান। গা ছমছম করা পরিবেশ। আর এই শ্মশানেই নাগা সন্ন্যাসীদের বাস ছিল বলে জানা যায়। তারাই শুরু করেছিল সিদ্ধেশ্বরী মাতার পুজো।
প্রায় আড়াইশো বছর আগে শুরু হওয়া সেই সিদ্ধেশ্বরী মাতাকে কালি রূপে পুজো করেন বর্ধমানের দত্ত পরিবার। এই পরিবার সূত্রে জানা যায়, এই শ্মশানের মধ্যেই সিদ্ধেশ্বরী মাতার পুজো শুরু করেছিল নাগা সন্ন্যাসীরা। দত্ত পরিবারের পূর্বপুরুষ যারা ছিলেন, সেই সময় তাদের নজরে আসে সেই নাগা সন্ন্যাসীরা শ্মশান থেকে নর মাংস নিয়ে এসে রান্না করে খাচ্ছে। তা দেখেই এই পরিবারের সদস্যরাই তাদেরকে এলাকা থেকে বের করে দেন।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা সত্ত্বেও কাজলকে না ডেকে অনুষ্ঠান অনুব্রতর?
তারপর থেকেই নতুনত করে দত্তবাড়ির লোকেরা দেবীর আরাধনা করেন। এই পরিবারের আর্থিক অভাবে একসময় পুজো বন্ধ হওয়ার মুখে। শোনা যায়, সেই সময় দেবী স্বপ্নাদেশ দিয়ে থোড়ের নৈবেদ্য দিয়ে পুজো চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। বর্তমানে পরিবারের সদস্যরা পুজোর আয়োজনে সমস্ত কিছু রাখলেও থোড়ের নৈবেদ্য বাদ দেন না। সবচেয়ে বড় ব্যাপার এই পরিবারের সদস্যরা নিজের হাতে এই প্রতিমা গড়েন। সেই প্রতিমাই নিয়ম নিষ্ঠা মেনে মধ্যরাত থেকে পুজো শুরু হয়।
জামালপুর এলাকা ছিল বর্ধমান মহারাজের তত্ত্বাবধানে জমিদারি এলাকা। অসংখ্য প্রাচীন মন্দির এখনও রয়েছে এলাকায়। কথিত আছে, বহু বছর আগে যে পুরোহিত দেবীর পুজো করতেন তিনি সময়মতো পুজো না করে, অন্য একটি পুজো করতে চলে যাচ্ছিলেন। রাস্তাতেই পড়ে গিয়ে মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু হয়। তারপরে দেবীর পুষ্প স্নান জলে সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং পুজো শুরু করেন। একই রকমভাবে বেশ কয়েক বছর পর আরো এক পুরোহিত দেবীকে সময়মতো পুজোর না করে ভোরে এসেছিলেন পুজো করতে। পুজোর আসনে বসার সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে পড়ে যান তার রুদ্রাক্ষের মালা ছিড়ে যায় এমন অনেক কাহিনী আজও ঘোরে এই দেবীকে নিয়ে। দেবীর মহিমায় দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে অনেকেই মুক্তি পেয়েছেন এমন বিশ্বাস রয়েছে।
তবে এখনও রাতে দেবী এখানে ঘোরাঘুরি করেন এমন বিশ্বাস সকলের মধ্যে রয়েছে। গা ছমছম করা পরিবেশ গোটা এলাকায়। আর সেই পরিবেশের মধ্যেই সিদ্ধেশ্বরী দেবীকে কালি রূপে নিয়ম নিষ্ঠা মেনে পুজো করেন দত্ত পরিবারের সদস্যরা। পুজোয় দূর দূরান্তের মানুষরা এসে হাজির হন এই এলাকায় বিরাট উৎসবের চেহারা নেয় এলাকা জুড়ে।
দেখুন আরও খবর: