যদি পারেন তাহলে আজকের গণশক্তির দু’ নম্বর পাতাটা খুলুন, আমরা স্ক্রিনেও দিচ্ছি। সেখানে একটা খবরে বলা হচ্ছে, সিপিআইএম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ইন্টারনাল কমপ্লেন্ট কমিটির তদন্ত রিপোর্ট এবং সুপারিশ অনুযায়ী সিপিএম তন্ময় ভট্টাচার্যকে ৬ মাসের জন্য সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সিপিএম রাজ্য কমিটির বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে সংবাদ পোর্টালের একজন মহিলা সাংবাদিক দ্বারা আনীত তন্ময় ভট্টাচার্য দ্বারা অভব্য ও অশালীন ব্যবহার সম্পর্কিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে পার্টির ইন্টারনাল তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এবং সুপারিশ অনুযায়ী পার্টি তন্ময় ভট্টাচার্যকে ৬ মাসের জন্য সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। মানে ১) সিপিএম দল স্বীকার করছে যে তন্ময় ভট্টাচার্য এক মহিলার প্রতি অভব্য অশালীন আচরণ করেছেন। ২) দলেরই এক ইন্টারনাল কমিটির তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী তাঁকে ৬ মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হল। এমনিতে দল থেকে বহিষ্কার বা সাসপেনশন ইত্যাদি গণশক্তির দুইয়ের পাতাতে বিজ্ঞপ্তি হিসেবেই দেওয়া হয়, এক্ষেত্রে কিন্তু এটা খবর করা হয়েছে। খবরের ভলিউম বাড়ানোর জন্য একই বাক্য দুবার লেখা হয়েছে। যদিও এই শাস্তি কবে থেকে লাগু হবে, নাকি লাগু হয়ে গিয়েছে, কবে শেষ হবে সে সব ডিটেইল দেওয়া হয়নি। কিন্তু উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলা সম্মেলনের ঠিক আগে এই সিদ্ধান্তের ফলে তন্ময় ভট্টাচার্য সম্মেলনে হাজির থাকতে পারবেন না এবং তাঁকে এই পার্টির তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দ্বারা প্রমাণিত অন্যায় কাজের সামাজিক দায়ভার তো গ্রহণ করতেই হবে। সেটাই আমাদের বিষয় আজকে। মহিলার কোলে বসে পড়ার জন্য ৬ মাস সাসপেন্ড তন্ময়।
এ এক বোম্বাগড়ের রাজার বিচার। এক) যে মেয়েটি অভিযোগ করলেন, তাঁর কথা অনুযায়ী তদন্ত কমিটি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। মানে তদন্ত কমিটি কাকে কান নিয়ে গেছে শুনেই তার বিচারে বসে পড়েছিল। দুই, তদন্ত কমিটির কাছে কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ ছিল? তা আমাদের জানা নেই। সাধারণত বিচার শেষে প্রত্যেকটা ডিটেইল সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। আজ আপনি চাইলে ধনঞ্জয়ের ফাঁসির প্রতিটা প্রমাণ আর সাক্ষ্য আবার খুঁটিয়ে দেখতে পাবেন। কিন্তু এটা বিপ্লবী বিচার ব্যবস্থা, তাঁরা অভিযোগ পেলেন, দলেরই এক ইন্টারনাল কমিটি তার বিচার করল আর দল সেই সুপারিশ মেনে শাস্তি দিয়েও দিল। তিন) এই যে দোষী সাব্যস্ত করা হল, তার কোনও আইন আছে, কোনও ধারা, শাস্তির কোনও মাপদণ্ড আছে? কোন দণ্ড সংহিতা মেনে এই শাস্তি দেওয়া হল? কেউ জানেন? মহম্মদ সেলিমও জানেন না, কেউ জানে না। চার) ঠিক এই মুহূর্তে আমাদের দেশের আইন, যে আইন লিপিবদ্ধ এবং যে আইন মেনেই সিপিএম দলও রাজনৈতিক দল হিসেবে রেজিস্ট্রিকৃত, সেই আইন বলছে মহিলাদের প্রতি সবচেয়ে কম ডিগ্রির অভব্য অশালীন আচরণের জন্য ৭ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। মানে এটা প্রমাণিত হলে তা পানিশেবল অফেন্স। সিপিএম দল তার ছাগল নিয়ে আগায় কাটবেন না পাছায় সে তো তাদের ব্যাপার, কিন্তু এই দলও তাদের এক সদস্য যে এক মহিলার প্রতি অশালীন এবং অভব্য আচরণ করেছেন তা প্রমাণিত বলেই জানাচ্ছে, সেক্ষেত্রে এখনই এই লোকটিকে লক আপে ঢোকানো হচ্ছে না কেন? আজকের গণশক্তিকে সামনে রেখেই যাঁকে জেলে ঢোকানো উচিত। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, ভারতীয় দণ্ডবিধি, আইন অনুযায়ী মহিলাদের সঙ্গে অভব্য অশালীন আচরণের জন্য শাস্তি জেল, জরিমানা। সিপিএম দলের নিজস্ব তদন্ত কমিটিই জানাচ্ছে যে তন্ময় ভট্টাচার্য এক মহিলার প্রতি অভব্য অশালীন আচরণ করেছেন, তাহলে তাকে জেলে পোরা হচ্ছে না কেন? শুনুন দর্শকদের মতামত।
আসলে সিপিএম ব্যাপারটাই এইরকম। তারা নিজেদের দলে নিজেদের অলিখিত আইন দিয়ে নিজেদের কমিটি তৈরি করে নিজেরাই একতরফা তদন্ত করে শাস্তিবিধান করে। মনে হয় তারা একটা অন্য দেশ, এক স্বাধীন দেশ, যেখানে তাদের নিজেদের বিচার করার অধিকার আছে, শাস্তি দেওয়ার অধিকার আছে। আর ঠিক সেই কারণেই যে কোনও ঘটনা ঘটলে তারা নিজেদের মতো করেই এক অপরাধীকে চিহ্নিত করে, তার জন্য কোনও প্রমাণের দরকার নেই, কোনও আইন কানুনের দরকার নেই। তারা যে লোকটিকে বা যাদেরকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তাকেই শাস্তি দিতে হবে, আমাদের বিচার ব্যবস্থা বা তদন্ত এজেন্সি যদিও অন্য কিছু বলে সেটা তাদের কাছে জাস্টিস নয়, তার মনে করে তারাই আইন, তারাই সবটা বোঝে এবং জানে কাজেই তাদের কথা শুনেই শাস্তিবিধান করতেই হবে। না করলেই রাস্তায় নেমে উই ওয়ান্ট জাস্টিস বলে স্লোগান দেবে, তন্ময় ভট্টাচার্যের ঘটনা সেই কথাটাই আবার প্রমাণ করল।