কলকাতা: টিটাগড়ে (Titagarh) দোল উৎসবের দিন ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড! তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) কর্মী আকাশ ওরফে অমর চৌধুরী (24)-কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে একদল দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, রং খেলার নাম করে তাঁকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। শুক্রবার দুপুরে ফকির চাঁদ রোডের এই ঘটনার জেরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়। জানা গিয়েছে, নিহত আকাশ ছিলেন টিটাগড় পুরসভার 22 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিকাশ সিংয়ের (Bikash Singh) ঘনিষ্ঠ। ঘটনার তদন্তে নেমে পবন রাজভর (Pawan Rajbhar) নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরও কয়েকজনের সন্ধানে তল্লাশি চলছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে ফকির চাঁদ রোডের জয়শ্রী কেমিক্যালস (Jayshree Chemicals) কারখানার সামনে পবন ও তাঁর সঙ্গীরা রং খেলছিলেন। অন্যদিকে, কাছেই বাড়ির সামনে রঙ খেলায় ব্যস্ত ছিলেন আকাশ। পরিকল্পনামাফিক, পবনরা তাঁকে ডেকে নিয়ে যায় রং খেলার নাম করে। কিন্তু সেখানে গেলেই শুরু হয় বচসা, যা মুহূর্তেই রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। অভিযোগ, ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো হয় আকাশকে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। ঘটনার পর দুষ্কৃতীরা পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা পবনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, কানাই তিওয়ারি (Kanai Tiwari) ও রাজ তিওয়ারি (Raj Tiwari)-সহ আরও কয়েকজন এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিল, যারা ঘটনার পর পালিয়ে যায়।
আরও পড়ূন: দোলের দিন টিটাগড়ে যুবককে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন
গুরুতর আহত আকাশকে প্রথমে খড়দার বলরাম সেবা মন্দির (Balaram Seva Mandir) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে, শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বেলঘরিয়ার (Belgharia) একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান, অবস্থা সংকটজনক। অবশেষে বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ তাঁকে কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ (RG Kar Medical College) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সেখানেই কিছুক্ষণ পর তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি ইন্দ্রবদন ঝাঁ (Indrabadon Jha) জানান, “একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, পুরনো শত্রুতার জেরেই এই ঘটনা।”
নিহত আকাশ ব্যারাকপুর মহাদেবানন্দ কলেজের (Mahadevananda College) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন এবং TMCP-এর স্থানীয় ইউনিটের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তিনি তৃণমূল কাউন্সিলর বিকাশ সিংয়ের ঘনিষ্ঠ হলেও, পাশের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিষ্ণু সিংয়ের (Bishnu Singh) সঙ্গে বিকাশের দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছিল। অভিযোগ, সেই বিবাদের কেন্দ্রে ছিল জয়শ্রী কেমিক্যালস কারখানার দখলদারি। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, এই দখলদারির লড়াইয়ের কারণেই আকাশ খুন হয়েছেন। তবে অন্যদের মতে, এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত শত্রুতার ফল।
জানা গিয়েছে, গত বছর ডিসেম্বর মাসে আকাশের উপর হামলা চালিয়েছিল পবন ও তাঁর দলবল। সেই ঘটনায় পবনের বিরুদ্ধে খড়দা থানায় অভিযোগ দায়ের হয় এবং পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। দু’মাস জেল খাটার পর সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পায় পবন। জামিনে বেরোনোর পরই কি সে প্রতিশোধ নিতে আকাশকে হত্যা করল? নাকি এর পেছনে আরও গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে? পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখছে।
দেখুন আরও খবর: