জামশেদপুর এফ সি–৩ মোহনবাগান–০
(বরিস সিং-২, সাইয়ার)
সুপার কাপে উলোট পুরাণ। আই এস এল চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে দিল লিগের দশ নম্বর দল জামশেদপুর। এই বিশ্রি হারের ধাক্কায় মোহনবাগান মনে হচ্ছে এবারের সুপার কাপ থেকে ছিটকে যাবে। কারণ জামশেদপুর প্রথম ম্যাচে এফ সি গোয়াকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে দিয়েছে। শুক্রবার তারা মোহনবাগানকে হারাল তিন গোলে। দুই ম্যাচ খেলে তাদের পয়েন্ট এখন ছয়। শেষ ম্যচ গ্রুপের দুর্বলতম দল গোকুলম এফ সি-র সঙ্গে। সেই ম্যাচে জামশেদপুরের না জেতার কোনও কারণ নেই। আর সেই ম্যাচটা হবে মোহনবাগান-গোয়া ম্যাচের আগে। মনে হচ্ছে, মোহনবাগান ১৮ এপ্রিল মাঠে নামার আগেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়ে নেবে। তবে অন্যরকম কিছু ঘটলে সেটা হবে মিরাকেল।
শুক্রবার কোজিকোড়ের ই এম এস স্টেডিয়ামে মোহনবাগানের এই হারটাকে বুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করা মুশকিল। তবে নব্বই মিনিটের ম্যাচে জুয়ান ফেরান্দোর ছেলেরা যা খেলেছে তাতে তাদের জেতার কথা নয়। জেতেওনি। সত্যি কথা বলতে কী, ম্যাচটা মোহনবাগান বিরতির সময়েই হেরে গেছে। প্রথমার্দ্ধের ২২ ও ৪৩ মিনিটে বরিস সিংয়ের জোড়া গোলই ম্যাচ থেকে ছুটি করে দেয় মোহনবাগানকে। তবে ম্যাচের সেরা কিন্তু বঙ্গসন্তান প্রতীক চৌধুরি। শুধু ম্যাচের হিরোর পুরস্কার পাওয়াই নয়, প্রতীক এদিন সত্যিই দুরন্ত খেলেছেন। দু দলের মধ্যে পার্থক্য ছিলেন তিনি। মিডফিল্ডার প্রতীকই ইস্পাত নগরীর আক্রমণগুলো তৈরি করছিলেন। আবার মোহনবাগান যখন আক্রমণ করছিল প্রতীকই তাদের সামনে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন। আই এস এল-তো বিদেশিদেরই দাপট। সেখানে একজন ভারতীয় দু দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিচ্ছেন দেখতে ভাল লাগে। প্রতীকের পাশে দারুণ খেললেন আরেক বঙ্গসন্তান ঋত্বিক দাস। দুর্গাপুরের ছেলেটা মোহনবাগান জুনিয়র টিমের প্রোডাক্ট। তবে এখন আই এস এল-এর প্রতিষ্ঠিত প্লেয়ার। এখণ জাতীয় দলের জার্সিও পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে দুই বঙ্গসন্তানের কাছেই হেরে গেল মোহনবাগান। শনিবার নববর্ষের পুণ্য প্রভাতে মোহনবাগান মাঠের প্রধান ফটকটি চুনী গোস্বামীর নামে উৎসর্গিত করা হবে। উদ্বোধন করবেন কিংবদন্তী সুনীল গাভাসকর। কিন্তু আগের রাতে এই হার অনুষ্ঠানের মিষ্টতা অনেকটাই তেঁতো করে দিল।
বাগানের চার বিদেশিই এদিন দুআনি কুড়িয়েছেন। দিমিত্রি পেত্রাতোস এবং হুগো বুমো মনে হচ্ছিল সান্ধ্য ভ্রমণে বেরিয়েছেন। খুবই খারাপ অবস্থা কার্ল ম্যাকহিউ এবং স্লাভকোর। ম্যাকহিউ এবং গ্লেন মার্টিন্স ছিলেন ডিফেন্সিভ ব্লকার। কিন্তু তাঁরা দুজনেই ডাহা ফেল। তাই শুরু থেকেই জামশেদপুর জাঁকিয়ে বসল বাগানের উপর। শুরুতেই ঋত্বিকের জোরালো শট বাঁচালেন বিশাল কাইথ। ২২ মিনিটেই গোল পেয়ে গেল জামশেদপুর। বাঁ দিক থেকে যখন রাফায়েল ক্রিভেলারো সেন্টার করছেন তখন বাগানের চার ডিফেন্ডার এক লাইনে দাঁড়িয়ে। পিছন থেকে উঠে আসা বরিস সিংয়ের তাই গোল করতে কোনও অসুবিধে হয়নি। ৪৩ মিনিটে বরিসের দ্বিতীয় গোলটা যেন প্রথমটার অ্যাকশন রিপ্লে। শুধু তফাত হল এবার সেন্টারটা করৈছিলেন ঋত্বিক। এর আগে ফ্রি কিক থেকে হেড করে গোল করেছিলেন ড্যানিয়েল চিমা। কিন্তু অফ সাইডের অপরাধে তা বাতিল হয়। বিরতির পরে বাগানের খেলায় একটু উন্নতি হয়। কিন্তু তা গোলে পরিণত হয়নি। জামশেদপুরের গোলকিপার টি পি রেহনেশ এ রকম নিরুদ্বিগ্ন ম্যাচ মনে হয় অনেক দিন পর খেললেন। ম্যাচ যখন প্রায় শেষ হয়ে গেছে তখন ৯৩ মিনিটে সাইয়ার গোল করে মোহনবাগানের লজ্জার ঘড়াটা সম্পুর্ণ করেন।